চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

কথা রেখেছেন সৌম্য

স্পোর্টস ডেস্ক

১৯ মে, ২০১৯ | ১:৩৯ পূর্বাহ্ণ

প্রতিশ্রুতি দেওয়া সহজ। কিন্তু মাঠে তা অনুবাদ করে দেখানো কঠিন। বেশির ভাগ সময়ই ক্রিকেটাররা নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি মাঠে অনুবাদ করে দেখাতে পারেন না। কিন্তু এবার নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় অবিশ্বাস্য সফল সৌম্য সরকার। নিজের কথা রেখেছেন অক্ষরে অক্ষরে। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজটা বাংলাদেশ শুরু করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮ উইকেটের দাপুটে জয় দিয়ে। দলকে সেদিন জয় এনে দেওয়ার পথে ৬৮ বলে ৭৩ রানের কার্যকর এক ইনিংস খেলেন সৌম্য। দলের প্রতিনিধি হিসেবে ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনেও আসেন তিনি। সেই সংবাদ সম্মেলনেই সৌম্য দিয়ে বসেন এক দাম্ভিক ঘোষণা। দৃঢ় কণ্ঠে বলে দেন, ‘সিরিজ আমরাই জিতব।’ ২৬২ রানের লক্ষ্য মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ৪৫ ওভারেই জিতে যাওয়া দলের ব্যাটসম্যান হিসেবে একটু দাম্ভিকতা দেখানোই যায়! সৌম্যর নিশ্চিত ঘোষণাটিকে একটু খটকা লাগছিল অন্য একটা কারণে। ‘ফাইনাল গিট্টু’র কথা ভেবে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এর আগে ৬টি ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু একবারও জয়ের দেখা মিলেনি। বেশ কয়েকবারই ‘জিততে জিততে বাংলাদেশ হেরে গেছে ফইনাল না জেতার অনভ্যস্ততার কারণে’। সিরিজ জেতার জন্য এবারও যেহেতু সামনে সেই ‘ফাইনাল বাঁধা’ ছিল, ফলে সৌম্যর দৃঢ় কণ্ঠের ঘোষণাটাও পরিপূর্ণ আশ্বস্থ করতে পারেনি। তবে সৌম্য ঠিকই তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। দলকে প্রথম বারের মতো ফাইনাল জিতিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই দলটার ওপর আস্থা না রাখাটাই ভুল! না, পরশু ডাবলিনে মালাহাইডে বাংলাদেশের প্রথম বার ফাইনাল জেতার ইতিহাস গড়ার ম্যাচে সৌম্যই একমাত্র নায়ক নন। বরং বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের ৫ উইকেটের জয়ে তার চেয়েও বড় নায়ক ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। যিনি মাত্র ২৪ বলে অপরাজিত ৫২ রানের বিস্ময়কর ইনিংস খেলে দলকে এনে দিয়েছেন অবিশ্বাস্য জয়। তবে সৌম্যর ভূমিকাও কম না। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ২৪ ওভারেই তুলে ফেলে ১৫২ রান। কিন্তু বৃষ্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস থেমে যায় ওখানেই। বৃষ্টি আইনে ক্যারিবীয়দের সেই ১৫২ রানই বাংলাদেশের জন্য হয়ে যায় ২১০ রানের অবিশ্বাস্য লক্ষ্য! বাংলাদেশ এই লক্ষ্য তাড়া করতে পারবে, শুরুতে এটা বিশ্বাস করাটা ছিল কঠিন। সেটি আরও বেশি কঠিন হয়ে যায় ৬০ রানের মধ্যেই তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমান বিদায় নেওয়ার পর। তামিম ১৩ বলে ১৮ করে ফেরার পর সাব্বির মেরে বসেন ‘ডাক’! তাদের দ্রুত বিদায়ের পর তাই নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষার দায়টা প্রথমত সৌম্যর কাঁধেই পড়ে! সাতক্ষীরার ছেলে চেপে বসা সেই দায়িত্ব বিস্ময়করভাবেই পালন করেছেন। একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলেছেন ৪১ বলে ৬৬ রানের ইনিংস। ৩ ছ্ক্কা ও ৯ চারে সাজানো তার ইনিংসটিতেই জয়ের বিশ্বাস্ পায় বাংলাদেশ। তবে তার বিদায়ের পরও কাজটা কঠিন ছিল। তরুণ মোসাদ্দেক ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে সেই কঠিন সমীকরণটাও মিলিয়ে দিয়েছেন ৭ বল বাকি থাকতেই। ফাইনাল শেষে সংবাদ সম্মেলনে সৌম্য আসেননি। এসেছিলেন ম্যাচসেরা মোসাদ্দেক। তার আসার দরকার কি! তার ইনিংসটিই তো বলে দিচ্ছে, নিজের কথা যথাযথভাবেই রেখেছেন তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট