চট্টগ্রামের বেশিরভাগ উপজেলার মতোই বেহাল দশা আনোয়ারা ক্রীড়া সংস্থার। জন্মের পর থেকে অদ্যাবধি সংস্থার নেই কোন ঠিকানা। উপজেলা পরিষদে ফাইলবন্দী সংস্থার সব কার্যক্রম। কমিটির পর কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না স্থানীয় ক্রীড়াবিদদের। আনোয়ারা ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণকেন্দ্র উপজেলা সদর। উপজেলার ক্রীড়াযজ্ঞের বেশিরভাগ আয়োজন হয় আনোয়ারা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। কিন্তু বর্ষামৌসুমে জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকে মাঠটি। বছরের অধিকাংশ সময়ে মাঠে গড়াতে পারে না কোন খেলা। ক্রীড়াসংস্থার কার্যক্রমও এ মাঠের মতো। জাতীয় পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল অথবা জেলা ক্রীড়া সংস্থার উপজেলা ভিত্তিক কোন আয়োজন থাকলে কিছুটা সময় সচল থাকে সংস্থাটি। আর বাকিটা সময় যেন ঘুমিয়েই থাকে। সংস্থা সচল না থাকায় সিজেকেএস আয়োজিত নিয়মিত লিগগুলোতে অংশগ্রহণ নেই আনোয়ারার।
মাঠ পর্যায়ে উঠে আসা নতুন প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদরা হারিয়ে যায় পথের মাঝে। ক্রীড়ায় তাদের সুন্দর আগামী গড়ার স্বপ্ন দেখানোর যেন কেউ নেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৫ সদস্যের কমিটি গঠনের কথা থাকলেও বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিতে সদস্য সংখ্যা মাত্র ১৫ জন। নির্বাচিত ১৫ জন্য সদস্য থাকার কথা থাকলেও শিক্ষক ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৫ জন সদস্য নির্বাচিত। বাকি সবাই বিভিন্ন সরকারি বিভাগের কর্মকর্তা। যার প্রভাব পড়েছে সংস্থার কার্যক্রমে। করোনা প্রকোপ কাটিয়ে স্থানীয় ক্রীড়বিদদের বাঁচিয়ে রাখতে বিভিন্ন উপজেলা মাঠে খেলা ফিরলেও এখনো ঘুমিয়ে আনোয়ারা। সংস্থার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, করোনার কারণে আমরা এখনো মাঠের খেলাকে নিরুৎসাহিত করে আসছি। কমিটির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।
উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ পরিষদ থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সংস্থার সাধারণ পরিষদের সদস্য সংখ্যা কতজন বা কারা আছেন এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানেন না সংস্থার বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এস.এম আলমগীর চৌধুরী। তিনি বলেন, সাবেক উপজেলা নির্বাহী গৌতম বাড়ৈ থাকাকালীন সময়ে এ কমিটি গঠিত হয়। ক্রীড়াসংস্থার সকল কার্যক্রম উপজেলা পরিষদ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে বিভিন্ন আয়োজনে তিনি মাঠ পর্যায়ে পাশে থেকে সহযোগিতা করে থাকেন।
দেশব্যাপী সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে বছরে একলক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়ে থাকে প্রতিটি উপজেলা পরিষদ। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ একাউন্টে এ টাকা জমা হওয়ার কথা থাকলেও জন্মের পর কখনও এ ধরনের কোন একাউন্ট খোলা হয়নি বলে জানালেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ক্রীড়া শিক্ষক মোহাম্মদ এনামুল হক। সংস্থার এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা হলেও উপজেলা ক্রীড়াকে টিকিয়ে রেখেছেন স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠা বেশ কয়েকটি একাডেমি। এরমধ্যে আনোয়ারা ফুটবল একাডেমি, বুরুমছড়া লিও একাডেমি এবং নিলুফার কায়সার ফুটবল একাডেমি অন্যতম। যেখান থেকে বেড়া উঠা ক্রীড়াবিদরা খেলেছেন জাতীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন আয়োজনে।
এরমধ্যে নিলুফার কায়সার একাডেমি থেকে বেড়ে উঠা প্রমিলা ফুটবলাররা এখন জাতীয় পর্যায়েও বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন। একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মো. এরশাদ পূর্বকোণকে বলেন, বর্তমানে ঢাকা লিগে খেলছে আমাদের দুই জন ফুটবলার। বিকেএসপি বিশেষ প্রমিলা প্রশিক্ষণে সুযোগ পেয়েছেন একাডেমির ফুটবলার শিপা দাশ। বিগত বঙ্গমাতা উপজেলা ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন আনোয়ারা দলের ৯ জন সদস্য ছিলেন আমাদের একাডেমির ফুটবলার। উপজেলার অন্যান্য একাডেমির রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। এতসব আলোর মাঝে যেন হতাশা শুধু উপজেলা ক্রীড়াসংস্থাকে নিয়ে। স্থানীয় ক্রীড়মোদিদের প্রত্যাশা উপজেলা পরিষদের বৃত্ত থেকে বের হয়ে কবে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থানীয় ক্রীড়াবিদদের উন্নয়নে জেগে উঠবে এ সংস্থাটি।
পূর্বকোণ/এএ