চট্টগ্রামের সর্বশেষ গঠিত উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা কর্ণফুলী। ২০১৮ সালের এখানে ক্রীড়া সংস্থার প্রথম কমিটি গঠিত হয়। এরপর ২০১৯ সালে ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমোদন পায়। তবে ক্রীড়া সংস্থা প্রতিষ্ঠার আগে থেকেও বেশ সচল এখানকার ক্রীড়াঙ্গন। বছর জুড়ে উপজেলার মাঠগুলো সরব থাকে ক্রীড়ার বিভিন্ন আয়োজনে।
এসব আয়োজনে আলো ছড়ানো এথলেটরা প্রকৃত অভিভাবকের অভাবে হারিয়ে যেত পথের মাঝেই। ২০১৮ সালে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা গঠনের পর আশার আলো দেখেছিলেন স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠকরা। উদীয়মান এথলেটদের চোখে ভেসেছিল নতুন স্বপ্ন। কিন্তু ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনো নিজেদের স্বকীয়তা জানান দিতে পারেনি ক্রীড়া সংস্থা। জন্মের পর যে সন্তান কাঁদে না সে দুধও পায় না। চট্টগ্রামের নবগঠিত কর্ণফুলী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার অবস্থাও সদ্য প্রসবজাত না কাঁদা শিশুর মত।
কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা এ ছোট উপজেলায় এ জে চৌধুরী কলেজ মাঠ, কালারপোল স্কুল মাঠ, চরলক্ষ্যা স্কুল মাঠ, মরিয়ম আশ্রম স্কুল মাঠ, মইজ্জ্যার টেক সিডিএ আবাসিক মাঠ ও পুরাতন ব্রিজঘাট সিডিএ মাঠে নিয়মিত হত ক্রীড়ার বিভিন্ন আয়োজন। এরমধ্যে শেষ দুটি মাঠ এখন পাথর ও কয়লা ব্যবসায়ীদের দখলে। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা এ দুটি মাঠকে বাঁচাতে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
উপজেলায় রয়েছে শিকলবাহা স্পোর্টস একাডেমি, কর্ণফুলী ক্রিকেট একাডেমি, চর পাথরঘাটা মুক্ত বিহঙ্গ ক্লাব, শাহ অহিদিয়া স্পোর্টস ক্লাব, কালারপোল ক্রীড়া চক্রসহ বেশ কয়েকটি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ফোর এইচ গ্রুপের একটি স্পোর্টস একাডেমিও রয়েছে উপজেলায়। যেসব একাডেমিতে ক্রীড়ার বিভিন্ন ইভেন্টে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এলাকার স্থানীয় ক্রীড়াবিদরা। কিন্তু উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কোন আয়োজন না থাকায় অভিভাবকহীন এসব ক্রীড়াবিদ।
সংস্থা সচল না থাকায় ক্রীড়া সংগঠকদের কাছ থেকে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতাও পাচ্ছে না। অথচ সিজেকেএস আয়োজিত ফুটবল ও ক্রিকেট লিগে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে এ উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত কর্ণফুলী ক্লাব। নিজেদের অর্থায়নে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামে উজ্জ্বল ক্লাবটি। স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠকদের অভিযোগ, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রথম কমিটিতে এলাকার পরীক্ষিত ক্রীড়া সংগঠক ও অভিজ্ঞদের মূল্যায়ন করা হয়নি।
প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। কর্ণফুলীতে নতুন স্টেডিয়াম নির্মিত হলে তাকে ঘিরে ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম সচল হতে পারত। তবে এ ব্যাপারে বর্তমান ক্রীড়া সংস্থার কোন ভূমিকাই খুঁজে পাওয়া যায়নি। পদাধিকার বলে সংস্থার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা সুলতানা বলেন, ক্রীড়ার যে কোন সমস্যা অবশ্যই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করা হবে। তিনি বলেন, ক্রীড়া সংস্থার সাথে পরিচিত সভা হয়েছে, কোন নিয়মিত সভা এখনো হয়নি। শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্টেডিয়ামের জমি বরাদ্দের জন্য ইতিমধ্যে আবেদন করা হয়েছে।
স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, শিকলবাহা স্পোর্টস একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরিদ পূর্বকোণকে বলেন, অযোগ্য লোকের হাতেই ন্যস্ত হয়েছে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা। প্রতিষ্ঠার পর অদ্যবধি কার্যকর কোন কর্মকা- নেই প্রতিষ্ঠানটির। প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী বা অস্থায়ী কোন কার্যালয় এখনো নেই। এমনকি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনের কোন সভাও অনুষ্ঠিত হয়নি। নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ অথবা বদলির সময় ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। আর সেটাকে সভা হিসেবে চালিয়ে দেন বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সেলিম হক বলেন, করোনা মহামারীর কারণে গত একবছরে কোন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়নি। নতুন উপজেলা হিসেবে ক্রীড়া সংস্থার জন্য আলাদা কোন বরাদ্দ দেয়া হয় না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে প্রতিটি উপজেলায় যে বার্ষিক একলক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় তাও পাচ্ছে না কর্ণফুলী। ফলে ক্রীড়া সংস্থা চালানোর মতো আর্থিক সক্ষমতা নেই প্রতিষ্ঠানের।
পূর্বকোণ/এএ