চট্টগ্রাম শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪

আজকের নির্বাচিত চিঠি

প্রতিবন্ধিরা সমাজের বোঝা নয়

৪ এপ্রিল, ২০২০ | ১:৫৪ পূর্বাহ্ণ

আমাদের সমাজে একটি ধারণা সবসময়ই বিদ্যমান যে, প্রতিবন্ধিত্ব একটি অভিশাপ এবং এটি পাপ কাজের শাস্তি। তারাও যে মানুষ, তাদের অধিকারের যে মূল্য রয়েছে- সেটা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারে না। সম-অধিকার নিয়ে এ পৃথিবীতে বাঁচার অধিকার সবার রয়েছে। তাদেরকে প্রতিবন্ধী নয়, মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। দেহের কোন অংশ বা তন্ত্র যদি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষণস্থায়ী বা চিরস্থায়ীভাবে তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায় সে অবস্থাকে ইমপেয়ারমেন্ট বলা হয়। সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী আর দশজন যে কাজগুলো করতে পারে, ইমপেয়ারমেন্টের কারণে সে কাজগুলো দৈনন্দিন জীবনে করতে না পারার অবস্থাকেই বলে প্রতিবন্ধকতা।
প্রতিবন্ধিতার জন্য এ মানুষগুলো কখনো দায়ী নয়। এটি একটি জম্মগত সমস্যা। গবেষণায় দেখা গেছে, চাকরি না থাকা, পারিবারিক সমস্যা, আর্থিক সংকট বা দুঃখ-দুর্দশার মত বিষয়গুলো অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের বিষণœতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
যার ফলে তার অনাগত শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়। গর্ভবতী মহিলাদের ডায়াবেটিস, প্রদহজনক রোগ, উচ্চরক্তচাপ, কিডনির সমস্যা, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, মায়ের অপুষ্টিজনিত সমস্যা, গর্ভাবস্থায় মা যদি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খায় , মায়ের বয়স যদি কম হয়, আবার বেশি বয়স করে অর্থাৎ ৩৫ বছরের পর কোনো মহিলা মা হলে ইত্যাদির মতো সমস্যা শিশুকে প্রতিবন্ধী করতে পারে। এছাড়া দুর্ঘটনা ও সংঘাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পুষ্টিহীনতা, আমিষের ঘাটতি, ভিটামিন এ, আয়োডিন, আয়রনের অভাবও এ সমস্যার জন্য দায়ী।
এ মানুষগুলো দারিদ্র্যের মাঝে বাস করায়, দারিদ্র্য ও প্রতিবন্ধিতা এদের অসহায়ত্ব দিগুণ করে দেয়। তাদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের কারণে, দেশের বৃহৎ সংখ্যার একটি অংশ শিক্ষার অধিকার হারায়।
সমাজের অন্য দশ জনের মতো তারাও রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ। তাদের ভিতর ও রয়েছে- মেধা, চিন্তা-ভাবনা, সৃজনশীলতা, স্বপ্ন, ভালোবাসা। এরাও দেশাত্মবোধে জাগ্রত হয়ে, দেশের জন্য কিছু করতে চায়। অন্যদের মতো এদের মাঝেও লুকিয়ে রয়েছে অনন্য প্রতিভা। উদাহরণ হিসেবে আমরা বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী- স্টিফেন হকিং, আমেরিকার খ্যাতনামা লেখক ও সমাজসেবী- হেলেন কেলার, বিখ্যাত আইরিশ লেখক – ক্রিস্টি ব্রাউনের মতো দ্বিগি¦জয়ীদের নাম উল্লেখ করতে পারি। দেশের ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাত যদি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দিকে প্রসারিত হয়, তাহলে প্রতিবন্ধীবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অভাব নিরসন ও জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

 

মো. মারুফ হোসেন
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট