চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রোজা : জানা-অজানা যাকাত ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কার?

২৩ মে, ২০১৯ | ২:৫১ পূর্বাহ্ণ

যাকাত কোনো ব্যক্তিগত দয়া, অনুকম্পা বা বদান্যতার বিষয় নয়; বরং আল্লাহ নির্ধারিত অবশ্যই পালনীয় বিধান। এর ব্যবস্থাপনা একটা সুগঠিত প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন হতে হয়। যাকাত ব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম আঞ্জাম দেয়ার মূল দায়িত্ব সরকারের। যার ওপর যাকাত আবশ্যক তার থেকে তা আদায় ও সংগ্রহ করার দায়িত্ব সরকারের। একইভাবে এর হকদারদের মধ্যে সুষ্ঠু বণ্টনের দায়িত্বও তার। পবিত্র কুরআন, সুন্নাহ, খুলাফায়ে রাশেদিনের বাস্তব সুন্নাত এ কথার প্রমাণ পেশ করে। তাছাড়া ফকীহগণও এ সম্পর্কে বিস্তারিত বিধি বিধান আলোচনার প্রয়াস নিয়েছেন।
মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে (সা.) যাকাত সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “তাদের মালামাল থেকে সদকা-যাকাত গ্রহণ কর। যাতে এর মাধ্যমে তাদেরকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করতে পার।” (সূরা তওবা- ১০৩) পবিত্র কুরআন যারা যাকাত আদায়, সংগ্রহ ও বণ্টনের দায়িত্ব পালন করে তাদেরকে ‘আমিল’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। যাকাত ব্যয়ের খাতসমূহ বর্ণনার ক্ষেত্রে তাদেরকে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে এবং যাকাতে তাদের অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে তাদের মজুরি বা পারিশ্রমিক হিসেবে।
বুখারি, মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীস সংকলনে উদ্ধৃত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসই এক্ষেত্রে যথেষ্ট। তিনি বলেন, মহানবী (সা.) যখন মুয়াজকে রা. ইয়ামেনে পাঠিয়েছিলেন তখন বলেছিলেন, “তাদেরকে জানাবে যে, আল্লাহ তাদের সম্পদের যাকাত প্রদান অপরিহার্য করেছেন যা তাদের মধ্যকার বিত্তবানদের থেকে গ্রহণ করা হবে ও অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।” (সহীহ বুখারি, ২/৫০৫) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, “উক্ত হাদিস এ কথার দলিল যে, রাষ্ট্রপ্রধান যাকাত সংগ্রহ ও ব্যয়-বণ্টনের জন্যে দায়িত্বশীল, হয় সে নিজে এ কাজ করবে নতুবা তার প্রতিনিধির মাধ্যমে করাবে। কেউ তা দিতে অস্বীকার করলে তার থেকে বল প্রয়োগের মাধ্যমে তা আদায় করা হবে।” (ফাতহুল বারি, ৩/২৩)
সীরাতুন নবী ও ইসলামের ইতিহাস এ সাক্ষ্য প্রদান করে যে, মহানবী (সা.) ও খলিফাগণ যাকাত উত্তোলন, সংগ্রহ ও বায়তুল মাল বা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে আদায়কারী প্রেরণ করতেন, তাদেরকে নির্দেশনা দিতেন এবং তারা যাকাতের সম্পদ নিয়ে এলে তা জমা নিতেন। হাদিস ও ইসলামের ইতিহাসে এর বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে।
যাকাত ব্যবস্থাপনা রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্পন্ন করা না হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। যেমন যার ওপর যাকাত ফরজ সে যাকাত প্রদান না করলে তাকে আইনের আওতায় আনা যায় না; অন্যদিকে যারা যাকাত দিতে চায় তাদেরকে যাকাত গ্রহীতাদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করতে হয়। এমন অনেক যাকাতের হকদার রয়েছে যারা কারও কাছে গিয়ে যাকাত গ্রহণ করতে বিব্রত হন তারা বঞ্চিত হন; পক্ষান্তরে এমন অনেকে যাকাত নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে যারা আদতে যাকাতের হকদার নয়। যাকাত সরকারিভাবে উত্তোলন ও বণ্টনের মাধ্যমে এ জাতীয় অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট