বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্রে বলা আছে, গেরিলাযুদ্ধের মূলমন্ত্র আত্মসংযম-জ্ঞান-তিতিক্ষা-কষ্ট-সহিষ্ণুতা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের একটা বড় অংশই ছিল গেরিলা যুদ্ধ। গেরিলা যোদ্ধারা বলছেন, ‘হিট অ্যান্ড রান’ পদ্ধতিতে তারা গেরিলা কায়দায় অপারেশনে যেতেন। যুদ্ধে গেরিলা নীতি হলো বিকল্প নীতি। যার জন্য বন্দুকের পরিবর্তে প্রচার চাই, বিমানের পরিবর্তে চাই বিধ্বংসী ক্রিয়া, অস্ত্র শিল্পের পরিবর্তে চাই রাজনৈতিক শিক্ষা এবং মেশিনের পরিবর্তে মানুষ। গেরিলারা শুধু যুদ্ধের খাতিরেই যুদ্ধ করেন না, সঙ্গে তারা জনগণকে অনুপ্রাণিত করেন, সংগঠিত করে সশস্ত্র করে তোলেন এবং বৈপ্লবিক রাজনৈতিক শক্তির প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রে ১ নম্বর সেক্টরের নথি সন্নিবেশিত আছে। যেখানে গেরিলা যুদ্ধ বিষয়ে ইশতেহার হিসেবে দেওয়া আছে। সেখানে বলা আছে, ১৮০৭ সালের আগে গেরিলা যুদ্ধরীতি একটি সহজ যুদ্ধরীতি হিসেবে সামরিক অভিযানে স্বীকৃত হয়নি। ওই বছর নেপোলিয়ানের ফরাসি সৈন্যরা স্পেনের সাইবেরীয় প্রণালি আক্রমণ করলে সেখানকার স্বল্প সংখ্যক অনিয়মিত সৈন্যদল এই কৌশলে যুদ্ধ করে। স্পেনের ভাষায় ‘গুয়েরিলা’ শব্দের অর্থ হলো ছোট যুদ্ধ বা খণ্ডযুদ্ধ।
ভাষা ও সংস্কৃতি গেরিলা যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই দুটি বিষয়ই পরিবেশের অন্তর্গত। গেরিলা বাহিনী যে অঞ্চলে কাজ করে, সেখানকার অধিবাসীরা যদি তাদের ভাষা না বোঝেন তাহলে যুদ্ধের কাজ ভালোভাবে চলতে পারে না। কারণ, স্থানীয় জনগণের সহায়তা ছাড়া এ যুদ্ধ কোনোমতেই চলতে পারে না। ভাষাগত ব্যবধান এ ব্যাপারে অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে। স্থানীয় জনগণের সংস্কৃতি ও ভাবধারা গেরিলা যুদ্ধের অনুকূল হওয়া চায়।
আবার যেখানে জনগণের কাছ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পাওয়া যায় না, সেখানে গেরিলাদের কঠোর হতে হবে বলেও ইশতেহারে উল্লেখ করা আছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সবসময় জনসমর্থনকে জোর দিয়ে দেখা হয়। একাত্তরে বাঙালি জাতির যুদ্ধ জয়ের অন্যতম হাতিয়ার ছিল গেরিলা যুদ্ধ। পাকিস্তানি সৈন্যদের কুপোকাত করতে মোক্ষম ভূমিকা রেখেছিল যুদ্ধের বিশেষ এই কৌশল। গেরিলা যোদ্ধা তাদের বলা হয়, যারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে শত্রুদের বিপর্যস্ত করে তুলতো। যুদ্ধের সময় প্রত্যেকটি গেরিলা ঘাঁটি পরিচালিত হতো অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে।
পূর্বকোণ/পিআর