দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল আবেদনের ওপর চলা শুনানির তৃতীয় দিন প্রথম ভাগে আরও ৩৬ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) বেলা ১টা পর্যন্ত ৬০টি আপিল আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ২১ জনের মনোনয়নপত্র। আর স্থগিত রাখা হয়েছে তিনটি।
সকাল ১০টায় নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সভাপতিত্বে শুরু হয় তৃতীয় দিনের শুনানি। অন্য চার কমিশনারও সেখানে আছেন।
এদিন ক্রমিক নম্বর অনুসারে ১৯৪ থেক আপিল শুনানি শুরু হয়েছে। ৩০০ পর্যন্ত আপিল শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
যাদের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তাদের কোনো বাধা থাকল না।
প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে খুলনা-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথী আনন্দে কেঁদে ফেলেন।
তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে আমার ভোটারদের সেই খুলনা থেকে নিয়ে এসেছি। তারা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন, আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। কষ্টের ফল পেয়েছি, এতেই আমি খুশি।
কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তি চাইলে উচ্চ আদালতেও যেতে পারবেন।
চট্টগ্রাম-১০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান গণির মনোনয়নপত্র আপিল শুনানিতে বৈধ না হওয়ায় উচ্চ আদালতে যাবেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি এখানে ন্যায়বিচার পাইনি। ভোটারদের স্বাক্ষর থাকা স্বত্ত্বেও সিরিয়ালের একটু ভুলের কারণে আমাকে নামঞ্জুর করেছে। এটা তো ঠিক না। আমি হাই কোর্টে যাব ন্যায্য বিচারের জন্য।
তৃতীয় দিন প্রথম ভাগে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন যারা
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশা মনি, কুমিল্লা-১ আসনে ইসলামি ঐক্যজোটের মাওলানা মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন, ঢাকা-১৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. বশির উদ্দিন, যশোর-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হুমায়ূন সুলতান, গোপালগঞ্জ-২ আসনে জাসদ প্রার্থী ফুলমিয়া মোল্লা, সুনামগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান, রংপুর-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.সিরাজুল ইসলাম, কুমিল্লা-১১ আসনে গণফোরামের আব্দুল রহমান, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুম ইকবাল, নোয়াখালী-২ আসনে কল্যাণ পার্টির কাজী সরওয়ার আলম ও ঝালকাঠি-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামান।
মানিকগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাহাবুদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম-১২ আসনে বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের এম এ মতিন, চট্টগ্রাম ১২, মৌলভীবাজার-৩ ও ২৩৭ আসনে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. আব্দুর রউফ, নোয়াখালী-২ আসনে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রবিউল হোসাইন, সিলেট-৩ ও ২৩১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এহতেশামুল হক, কুমিল্লা-২ আসনে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টে আবদুছ সালাম, ঢাকা-১৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেড আই রাসেল, সিলেট-২ ও ২৩০ আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. জহির, সিলেট-৪ ও ২৩২ আসনে তৃণমূল বিএনপির আবুল হোসেন, সিলেট ৩ ও ২৩১ আসনে ইসলামী ঐক্যজোটের মইনুল ইসলাম।
নোয়াখালী-৩ আসনে জাসদের জয়নাল আবদীন, কুমিল্লা-১০ আসনে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির এম অহিদুর রহমান, লালমনিরহাট-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হালিমা খাতুন, খুলনা-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথী, নীলফামারি-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইমরান কবির চৌধুরী, গাইবান্ধা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার, ফরিদপুর-৩ নসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীগোলাম রাব্বানী খান।
ঢাকা-১৯ আসনে জাতীয় পার্টির মো. আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা-৭ আসনে জাসদের হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস বেপারী, নরসিংদী-৫ আসনে বিটু মিয়া বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) বিটু মিয়া, নরসিংদী-৩ আসনে গণফোরামের মাহফুজুর রহমান, ফেনী-১ আসনে জাতীয় পার্টির শাহরিয়ার ইকবাল, রাজশাহী-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ওবায়দুল, স্বতন্ত্র, নোয়াখালী-৬ আসনে জাতীয় পার্টির মুসফিকুর রহমান, ঢাকা-১৮ আসনে তৃণমূল বিএনপির মফিজুর রহমান।
আপিলের আদেশ স্থগিত রয়েছে- খুলনা-৪ আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনিরা সুলতানা, নওগাঁ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খালেকুজ্জামান, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির মো. রেজাউর রশীদ খান।
বুধবার ৩০১-৪০০ নম্বর আপিলের পালা আসবে। এরপর বৃহস্পতিবার ৪০১-৫০০ ও শুক্রবার ৫০১ থেকে অবশিষ্ট আপিলের শুনানি হবে।
এর আগে রোব ও সোমবার দুই দিনে মোট ১০৭ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন, এর মধ্যে ৫৯ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। এরপর চূড়ান্ত প্রার্থীর সংখ্যা জানা যাবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। এরপর প্রচারে নামবেন প্রার্থীরা, যা চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোট হবে ৭ জানুয়ারি।
পূর্বকোণ/এএইচ