আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি বছর চিনির সরবরাহ কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অক্টোবরে শুরু হওয়া নতুন বিপণন বছরে উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বাড়বে ২ লাখ ৯০ হাজার টন। তীব্র খরার প্রভাবে এশিয়ার আখ উৎপাদনকারী দেশগুলোয় ফলন ব্যাহত হবে। ফলে ২০২৩-২৪ বিপণন বছরে উৎপাদন কমবে পণ্যটির। সম্প্রতি ব্রোকার ও বিশ্লেষক স্টোনএক্সের এ পূর্বাভাস প্রকাশ করেছে। খবর রয়টার্স।
২০২৩-২৪ মৌসুমে চিনি উৎপাদন প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ১৯ লাখ টন। এ সময় পণ্যটির প্রত্যাশিত চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াবে ১৯ কোটি ২২ লাখ টনে। ফলে চিনির বৈশ্বিক চাহিদায় ঘাটতি দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ মৌসুমে পণ্যটির উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৪ লাখ ৯৩ হাজার টনে। তবে চলতি মৌসুমে উৎপাদনের তুলনায় ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ার আশঙ্কায় বিশ্ববাজার উদ্বৃত্ত থেকে ঘাটতির দিকে মোড় নেবে।
স্টোনএক্সের পূর্বাভাস মতে, ভারতের উৎপাদন ৮ দশমিক ৫ শতাংশ কমে যাবে। উৎপাদন দাঁড়াবে তিন কোটি টনে। একই সময়ে থাইল্যান্ডে উৎপাদন ২২ শতাংশ কমে ৮৯ লাখ টনে নামতে পারে।
ব্রাজিলের পরেই এশিয়ার এ দুই দেশ বিশ্বর শীর্ষ চিনি রফতানিকারক দেশ। শুষ্ক আবহাওয়ার প্রভাবে উৎপাদন কমায় চলতি বিপণন বছরে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতেই বেশি মনোযোগ দেবে ভারত ও থাইল্যান্ড। ফলে দেশ দুটি আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যটির সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাজারে কোটার ভিত্তিতে চিনি রফতানি করে ভারত। দেশটির শীর্ষ চিনি উৎপাদনকারী রাজ্য উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে বৈরী আবহাওয়ায় আখের ফলন ব্যাহত হয়েছে। ইন্ডিয়ান সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসএমএ) জানায়, আখ বেড়ে ওঠার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়ে বৃষ্টিপাত ছিল না। কিন্তু পরে আবার অতিবৃষ্টি হয়েছে। মূলত এ কারণেই আখ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, উৎপাদন কমলে দেশটির রফতানি সক্ষমতাও সীমিত হয়ে পড়বে।
এদিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চলতি মৌসুম থেকে চিনি রফতানি সীমিত করার আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছে দেশটি। সাত বছরের মধ্যে এবারই প্রথম চিনি রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নয়াদিল্লি। এর আগে ২০১৬ সালে চিনি রফতানিতে ২০ শতাংশ কর আরোপ করেছিল ভারত, যার মাধ্যমে সরবরাহ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিল বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ চিনি উৎপাদক দেশটি।
রফতানিসংক্রান্ত ভারতের সাম্প্রতিক এ খবর প্রকাশের পর চিনির আন্তর্জাতিক সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ভারতীয় সরবরাহ কমে গেলে নিউইয়র্ক ও লন্ডনসহ বিশ্ববাজারে দাম আরো বাড়বে ভোগ্যপণ্যটির।
স্টোনএক্স বলেছে, সরবরাহ সংকটের খবরে এরই মধ্যে বাজারে দাম বাড়তে শুরু করেছে। আইসিই ফিউচারস এক্সচেঞ্জে অপরিশোধিত চিনির দাম বেড়ে ১২ বছরের সর্বোচ্চে। তবে ব্রাজিলের মধ্য-দক্ষিণাঞ্চলে রেকর্ড ৪ কোটি ৮ লাখ টন চিনি উৎপাদন হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক বাজার কিছুটা ভারসাম্যপূর্ণ হয়েছে। স্টোনএক্স আশা করছে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে ২০২৩-২৪ মৌসুমে ভালো ফলন হবে। তবে সেটিও নির্ভর করছে নভেম্বর-মার্চের বৃষ্টিপাতের ওপর। প্রতিষ্ঠানটি আগামী এপ্রিল-মার্চে ব্রাজিলে ৬২ কোটি ৯০ লাখ টন আখ এবং ৪ কোটি ১১ লাখ টন চিনি উৎপাদনের প্রত্যাশা করছে। তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ