করোনাকালের এক বছরে সারা দেশে আত্মহত্যা করেছে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন। আঁচল ফাউন্ডেশনের ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে অনলাইনে আয়োজিত এক ওয়েবনিয়ারে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান ও কারণ তুলে ধরেন তারা। আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে একা না রাখা, ক্রাইসিস সেন্টার ও হটলাইন চালু করা, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগ করাসহ বেশকিছু সুপারিশও সামনে এসেছে।
আঁচল ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়,২০১৯ এর চেয়ে ২০২০ সালের করোনাকালে আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়েছে ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। তবে কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায এর মধ্যে ৩২ শতাংশেরই কোনও কারণ জানা যায়নি বলে উল্লেখ করেছে আঁচল ফাউন্ডেশন। পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, আর্থিক সংকট—এসব আত্মহত্যার ঘটনার মূল কারণ।
২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩টি জাতীয় পত্রিকা, ১৯টি স্থানীয় পত্রিকা, হাসপাতাল ও থানা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণের জন্য এ সময়ের মোট ৩শ ২২টি আত্মহত্যার ঘটনাকে বেছে নেওয়া হয়।
আঁচল ফাউন্ডেশনের দাবি, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে আত্মহত্যা ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। সংগঠনটির হিসাবে, এক বছরে আত্মহত্যা করার সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, ২০১৯ সালে সারা দেশে আত্মহত্যা করেছে ১০ হাজারের বেশি মানুষ। এই বিবেচনায় তারা সংখ্যা বেড়েছে বলে উল্লেখ করেন।
২০ থেকে ৩৫ বছরের প্রবণতা বেশি। আত্মহত্যার কারণে মৃত ব্যক্তিদের বয়সের তারতম্য নিয়েও কাজ করেছে সংগঠনটি। তাদের বিশ্লেষণ বলছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আত্মহত্যা প্রবণতা কমে আসে। একবছরের জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, আত্মহত্যায় ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী রয়েছেন ৪৯ শতাংশ, ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৩৫ শতাংশ, ৩৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ১১ শতাংশ। সবচেয়ে কম আত্মহননকারী হচ্ছেন ৪৬ থেকে ৮০ বছর বয়সীরা, ৫ শতাংশ।
আত্মহত্যায় নারীরা ১৪ শতাংশ বেশি। সারা দেশে করোনাকালে পুরুষের চেয়ে বেশি নারী আত্মহত্যা করেছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। নারীদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটা ৫৭ শতাংশ এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৪৩ শতাংশ। মোট আত্মহত্যার ঘটনা ১৪ হাজার ৪৩৬টি। এর মধ্যে নারীর আত্মহত্যার ঘটনা ৮ হাজার ২২৮টি।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। অভিমান থেকে আত্মহত্যা প্রবণ হচ্ছে কিশোরবয়সীরা। সামান্য জিনিস না পাওয়া, নিজের মতো করে কিছু না করতে পারার কারণে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে। আত্মহত্যা না করার বিষয়ে যে সচেতনতা ক্যাম্পেইন দরকার সেটির কমতি আছে উল্লেখ করে আঁচল ফাউন্ডশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর আরও গুরুত্ব দিয়ে তার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
পূর্বকোণ / আরআর/পারভেজ