চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সতের শতকে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি-সরকারি ব্যবহার শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১:১০ অপরাহ্ণ

বাংলা ভাষার ওপর ষড়যন্ত্রের শুরু পাকিস্তান সৃষ্টির আরও অনেক আগে থেকেই। একাদশ শতাব্দীতে দাক্ষিণাত্য থেকে আগত গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদী সেন রাজারা পাল রাজবংশকে উৎখাত করে এদেশে সেন বংশের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।

 

সেন রাজারা শুধু সমাজে মানুষে মানুষে বৈষম্য সৃষ্টিকারী জাতিভেদ প্রথাই প্রবর্তন করেননি, জনগণের ব্যবহৃত বাংলা ভাষার বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র শুরু করে দেন। তারা সংস্কৃতকে রাজ ভাষার মর্যাদা দিয়ে জনগণের ব্যবহৃত বাংলা ভাষাকে নানাভাবে নিরুৎসাহিত করতে থাকেন। শাসকদের এ মানসিকতায় উৎসাহিত হয়ে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরা ধর্মের দোহাই দিয়ে বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে নানা নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

 

বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে প্রথম আঘাত ও ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে ড. দীনেশ চন্দ্র সেন বলেছিলেন, ‘ইতরের ভাষা বলিয়া ষোল ও সতের শতকে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় কাজে ও বেসরকারিভাবে ব্যবহৃত হতো। সেই থেকে বাংলা ভাষা প্রথম রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভ করে।’ ভাষাবিজ্ঞানী ড. এস এম লুৎফর রহমান এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, ‘সতের শতকের পয়লা দশক থেকেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি ও সরকারি ব্যবহার ঘটে চলেছে।’

 

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রথম মত দেন, একজন ব্রিটিশ লেখক ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হলহেড ১৭৭৮ সালে তার বাংলা ব্যাকরণ গ্রন্থ ‘এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’-এ। হলহেডের বাংলা হরফে মুদ্রিত এটিই প্রথম বাংলা গ্রন্থ। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা ভাষার ওপর আঘাত নেমে এলেও কোনো কালেও বাংলা ভাষাকে শিকলে আটকে রাখতে পারেনি। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীও বাংলা ভাষার হাতে-পায়ে শিকল পরাতে পারেনি। বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার প্রশ্নটি উত্থাপিত হয় ভারত বিভাগের আগে থেকেই।

 

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বেই আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। সে সময় পূর্ববাংলার প্রধানমন্ত্রীর কাছে বুদ্ধিজীবীরা একটি স্মারকলিপি দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খান ও কাজী মোতাহার হোসেনসহ বহুসংখ্যক বুদ্ধিজীবী পাল্টা বাংলা ভাষার প্রস্তাব দেন।

 

বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক ভাষার প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসে ‘গণ আজাদী লীগ’ (পরবর্তীকালে সিভিল লিবার্টি লীগ)-এর পক্ষ থেকে ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে। সে সময় সংবাদপত্রগুলো পাকিস্তানে বাংলা ভাষার সম্ভাবনা নিয়ে বুদ্ধিজীবী এবং জনমত প্রকাশ করতে থাকে। তারমধ্যে ১৯৪৮ সালের ২২ জুন দৈনিক ইত্তেহাদে প্রকাশিত আবদুল হকের কলাম ছিল প্রথম। ২৯ জুলাই মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নিবন্ধটি ছিল বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তবে এসব নিবন্ধের অধিকাংশের বিষয়বস্তু ছিল বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক ভাষার মর্যাদা দেয়া প্রসঙ্গে।

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট