চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

ইন্টারনেট শাটডাউন : ২০২২ বিশ্বকে টেক্কা দিয়েছে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২ মার্চ, ২০২৩ | ১২:৪৩ অপরাহ্ণ

রাজনৈতিক প্রতিবাদ মোকাবিলায় গত বছরে রেকর্ড সংখ্যক দেশের সরকার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বা বন্ধ রেখেছে। এতে জনমানুষের জীবনযাপন ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ‘অপরিমেয় ও স্থায়ী ক্ষতি হয়েছে’ বলে জানিয়েছে একটি অধিকার গোষ্ঠীর প্রতিবেদন। ইন্টারনেট অধিকার নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করে অধিকার গোষ্ঠী- ‘অ্যাক্সেস নাউ’ এবং #কিপইটঅন জোট। তাদের যৌথ গবেষণার ফসল আলোচিত প্রতিবেদন।

 

জানা যায়, ২০২২ সালে মোট ১৮৭ বার ইন্টারনেট শাটডাউনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে তারা। ৩৫টি দেশের সরকার এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। ২০১৬ সালে গ্রুপ দুটি ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ শুরুর পর এটাই এক বছরে সর্বোচ্চ।

 

বেশিরভাগ শাটডাউনের ঘটনা ঘটেছে কোনো না কোনো বিক্ষোভ, সংঘাত অথবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ ওঠার পর। এর বাইরে অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে নির্বাচন বা স্কুলের পরীক্ষার আগেও কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখে।

 

ইন্টারনেট বন্ধে এককভাবে শীর্ষে রয়েছে ভারত। ২০২২ সালে সেদেশের সরকার ৮৪ বার ইন্টারনেট ব্লাকআউট করেছে। টানা ৫ বছর ধরেই বিশ্বে ইন্টারনেট শাটডাউনের সংখ্যার নিরিখে এক নম্বরে দেশটি। বেশিরভাগই করা হয়েছে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে। প্রায় ৪৯ বার ইন্টারনেট অ্যাক্সেস ব্যাহত করা হয়েছে। এই অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের বিরোধ দীর্ঘদিনের। রয়েছে বিদ্রোহী তৎপরতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ বিভিন্ন রকম মানবাধিকার হরণ। এই অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ও তথ্য আদানপ্রদানের সুবিধা বন্ধ রাখতে তাদের ইন্টারনেট সেবা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। তবে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও তথ্য আদানপ্রদান বাধাগ্রস্ত করতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে বলে জানায় প্রতিবেদনটি।

 

ধারাবাহিকভাবে এই অধিকার খর্বকারীদের তালিকায় আরো রয়েছে ইরান। সরকার বিরোধী বিক্ষোভ দমনে দেশটিতে গত বছর ১৮ বার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়। এরপর রয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার, তারা ৭ বার ব্লাকআউট করেছে।

 

যুদ্ধেও ইন্টারনেট সংযোগকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। যেমন ইউক্রেনের ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাহত করতে সাইবার হামলা করেছে রাশিয়া। ইন্টারনেট অবকাঠামোয় মিসাইল হামলাও করেছে। মোট ২২ বার এ ধরনের হামলার কথা উঠে আসে প্রতিবেদনে। রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চলগুলোতেও ইন্টারনেট ব্যবহারে কঠোর সেন্সরশিপ ছিল বলে উল্লেখ করা হয়।

 

অ্যাক্সেস নাউ এবং #কিপইটঅন বলেছে, তাদের রেকর্ডে সবচেয়ে দীর্ঘসময় ইন্টারনেট শাটডাউন অব্যাহত থাকার ঘটনা হলো ইথিওপিয়ার তাইগ্রে অঞ্চলে। ইথিওপিয়ার সরকার বিদ্রোহ চলমান থাকা এই অঞ্চলকে প্রায় ইন্টারনেটহীন করে রেখেছে। প্রায় দুই বছর ধরে চলে আসা এই বিচ্ছিন্নতার সময়ের মধ্যেই ঘটেছে অনেক জাতিগত নিধন, ধর্ষণ ও অত্যাচারের ঘটনা। বাইরের পৃথিবীকে এসব অনেক ঘটনাই জানাতে পারেনি এখানকার মানুষ। তবে গত নভেম্বরে এক যুদ্ধবিরতি চুক্তি সইয়ের পর তাইগ্রেতে ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ পুনরায় চালু করা হয়, তবে এখনও কিছু অঞ্চলে তা করা হয়নি।

 

গবেষণা প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জনতার বিক্ষোভ, অসন্তোষ বা সমালোচনার প্রেক্ষিতে সরকারগুলো যোগাযোগ ব্যবস্থাটিকে এভাবে বিচ্ছিন্ন করার উপায় হিসেবে বেছে নেয়।

 

অ্যাক্সেস নাউ এর কর্মকর্তা ফেলেসিয়া অ্যান্তোনিও বলেন, ‘সরকারগুলো ইন্টারনেট শাটডাউনকে জনতাকে নিয়ন্ত্রণের অস্ত্র এবং নিজেদের নিরাপদ রাখার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ২০২২ সালে কর্তৃত্ববাদী এবং গণতান্ত্রিক উভয় ধরনের সরকার ব্যবস্থার অধীনেই এ ধরনের নিন্দনীয় ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতালিপ্সুরা এই কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত করে, দমনপীড়নের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করেছে। এমনকি এর আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন আলোচনার ধারা বর্ণনাকে পাল্টে দেওয়া হয়, প্রতিবাদকারীদের কন্ঠরোধ করা হয় এবং একইসঙ্গে নিপীড়ক কর্তৃপক্ষ নিজেদের সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছে’।

 

ভারতে ২০২১ সালে ১,১৫৭ ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ইন্টারনেট বন্ধের কারণে ৫৯ লাখ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের রাজধানী নয়াদিল্লিতেও কৃষক আন্দোলনের সময় দীর্ঘ সময় ধরে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল।

পূর্বকোণ/একে

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট