চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আনন্দের মধ্যে থাকুক শিশুদের জানাশোনা!

সারা তানভী

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা হবে আনন্দের সাথে। তবেই সেই শিক্ষা শিশুদের মনকে আলোকিত করবে। সে শিক্ষিত হবে, পড়ার প্রতি আগ্রহী হবে এবং এভাবে সে জ্ঞানের আলোতে আলোকিত হবে। আলোকিত মানুষই হয় সু-নাগরিক। আর এ সু-নাগরিক তৈরি করার প্রত্যয় নিয়ে রেড-গ্রীন একাডেমি নামে চট্টগ্রামে একটি বিদ্যালয় তার কার্যক্রম শুরু করেছে। জ্ঞান অর্জন বা লেখা পড়া যাতে শিশু-কিশোরের কাছে বোঝা হয়ে না দাড়িয়ে আনন্দ মুখর হয়, তার কিছু ব্যবস্থাপনা নিয়ে রেড-গ্রীন একাডেমি প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাদান পদ্ধতির আয়োজন। প্রতিটি মানব শিশুর মধ্যেই রয়েছে কিছু না কিছু সৃজনশীল প্রতিভা। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিযোগিতামূলক হতে হতে এমন একটি বিন্দুতে এসে পৌঁছেছে, যেখানে শিশুরা প্রতিনিয়ত নিষ্পেষিত হচ্ছে শীর্ষ অবস্থান নিশ্চিত করতে। অভিভাবক এবং পরিবার-প্রতিবেশের চাপ তাকে কাঙ্খিত সোনার হরিণ ‘এ+’ নিয়ে আসতেই হবে। এবং সেই লক্ষ অর্জনে বেচারা কোমলমতি শিশুরা কাঁধে পিঠে বই খাতার বোঝা নিয়ে সকাল থেকে রাত অবধি নিজের সমস্ত নিজস্বতাকে বিসর্জন দিয়ে অটোমেশিন বা রোবটের মতো তার শৈশবকে অতিবাহিত করেছে। শিশুদেরও নিজস্ব মানসিকতা আছে। প্রতিটি শিশুর আনন্দ একই জিনিসে হয় না, ফলে শিশুরা এই যান্ত্রিক দিন চক্রে আবদ্ধ হয়ে হারিয়ে ফেলছে তাদের স্বকীয় বিকাশ।

অন্যে যা পারবে তাকেও তা পারতে হবে এরূপ পারিপার্শি^ক চাপে তার নিজস্ব মানসিক বিকাশ স্তব্দ হয়ে যায়। বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাব্যবস্থায় এমন হওয়া উচিত, যাতে শিশুরা যে ক্ষেত্রগুলোতে আনন্দ পায় যেমনÑ খেলাধুলা, ছবি আঁকা, কবিতা আবৃত্তি, গল্প বলা, কাউকে অনুকরণ করা, কোন তর্ককে খ-ন করা, সুরের মুর্চ্ছনায় ডুবে যাওয়া, সাঁতার কাটা, আত্মরক্ষামূলক কারাতে ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের মানবিক বিকাশের বিবিধ উপাদানগুলো বিনির্মাণে সহযোগিতা করা। শিশুদের লেখা পড়ার পাশাপাশি যদি বিদ্যালয়গুলো তাদেরকে এইসব ক্ষেত্রে সুদক্ষ ও সুযোগ্য ভাবে বেড়ে উঠার ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়, সেখানেই বিদ্যালয়ের বিশেষত্ব। রেড-গ্রীন একাডেমি প্রতিষ্ঠানটি তার কারিকুলাম ব্যবস্থাপনায় শিক্ষায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পাশাপাশি উপরোক্ত বিশেষত্ব নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী শিক্ষা ব্যবস্থা চর্চায় ভূমিকা রাখবে। খেলাধুলা, সাঁতার, মার্শাল আর্ট, সংস্কৃতি চর্চা শিশুদের শরীর ও মন দুটোই বিকশিত করে। দক্ষ ও সুযোগ্যভাবে গড়ে উঠার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও সহপাঠ্যক্রম ছাড়াও প্রয়োজন ধর্মীয় মূল্যবোধ সৃষ্টি। অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে কুরআন, গীতা, ত্রিপিটক, বাইবেলকে সহজভাবে শিশুদেরকে শিক্ষাদান পদ্ধতির মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধ তৈরি করতে প্রতিষ্ঠানটি তার পাঠ্যক্রমে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে। প্রতিষ্ঠানটি শিশুদের দক্ষ ও সুযোগ্যভাবে বেড়ে উঠার নিমিত্তে তাদের ধর্মীয় বিশ^াস আদর্শ ও সততার প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ জন্য এর কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত আছে, সহী কুরআন শিক্ষা, গীতা, ত্রিপিঠক ও বাইবেল পাঠ। শিশুশ্রেণিগুলোতে গড়হঃবংংড়ৎর পদ্ধতিতে হাতে-কলমে শিক্ষাদান করতে পারলে শিক্ষার্থীর মধ্যে লেখা-পড়ার প্রতি একঘেয়েমি মনোভাব দূর হয়। নতুন নতুন পদ্ধতি ও ব্যবহারিক প্রতিক্রিয়ায় ছোট্ট সোনামণিদের অক্ষর জ্ঞান দেওয়া হলে তাদের মধ্যে নতুন কিছু শেখার প্রতি জানার আগ্রহও জন্মে। যেহেতু ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ এর বইগুলো বাংলাদেশ সরকারের অনেক অনেক গবেষণার ফল। সুতরাং বইগুলো শিশুদের মেধা বিকাশে সর্বশ্রেষ্ঠ ভূমিকা পালন করে। তাই জাতীয় শিক্ষাক্রমের পাঠ্যপুস্তকগুলোর ইংরেজি ভার্সনকে রেড-গ্রীন বেছে নিয়েছে তার শিক্ষা উপকরণ হিসেবে। যদিও শিক্ষাদান ইংরেজি মাধ্যমে তারপরও মাতৃভাষা বাংলা শিক্ষার উপরও এখানে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রতিযোগিতার এই বিশে^ ইংরেজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা, দেশীয় বই জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রম ও বিদ্যালয়টির অন্যান্য সকল আয়োজন শিক্ষার্থীর মনে নৈতিক দর্শনের সাথে সাথে দেশপ্রেমকে উজ্জীবিত করে।

প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের কল্পনা শক্তি বিচার বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধির দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীর নিজস্ব প্রয়োজন, সামর্থ্য, আগ্রহ, পছন্দ-অপছন্দের উপর বেশি গুরুত্ব দিলে তারাও উৎসাহ প্রকাশ করবে। শিক্ষা যদি সহজ ও স্বতঃস্ফুর্ত হয় তবে সেটা সহজেই গ্রহণ করা যায়। শিক্ষার্থীদের ওপর আরোপ বা চাপ সৃষ্টি না করে তাদেরকে বার বার বুঝিয়ে লেখা পড়াটা সহজ করে দিতে হবে। রেড-গ্রীন একাডেমি এই সবকিছুর উপরই সজাগ দৃষ্টি রেখে তার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েছে।

প্রায় ১৬,০০০ বর্গফুটের বিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি অতিমনোরম, শিশুতোষ, অগ্নি-নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর। চট্টগ্রাম ও মালয়েশিয়ার স্বনামধন্য বিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকম-লী দ্বারা আনন্দময় পরিবেশে একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব, সৃজনশীল স্বকীয় শিক্ষার্থী তৈরির মাধ্যমে দেশ ও সমাজ গঠনে রেড-গ্রীন একাডেমি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট