চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মদিনা মুনাওয়ারায় জিয়ারতে রাসুল (সা.)

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক

১৭ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:১৫ পূর্বাহ্ণ

মহান আরশের অধিপতি, আকাশ ও জমিনের একচ্ছত্র মালিক মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জতের অসীম অনুগ্রহে প্রতি বছরের মতন এবারও পবিত্র ওমরাহ্ হজ্জে যাওয়ার সুযোগটা হয়ে গেল। এ জন্যে মহান আল্লাহ্ পাকের দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করছি। সরকারী কর্মকর্তাদের দেশত্যাগে কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ রয়েছে, তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের (বহিঃ বাংলাদেশ ছুটি বিভাগ) কর্মকর্তাগণ পবিত্র হজ্জ ও ওমরাহ্র ক্ষেত্রে খুব একটা কড়াকড়ি করেন না। এবার পরিবারসহ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২১ মে ছোট্ট মাশরুরসহ রওনা দিলাম চট্টগ্রাম শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে। বিকাল সাড়ে ৩টায় আমরা পৌঁছলাম বিমানবন্দরের লবিতে। আমরা অপেক্ষায় রইলাম গালিব ভাই ও তাঁর পরিবারের জন্য।

উনারা আসার পর বোর্ডিংটা সেরে ফেলি। আমাদের কাফেলা বাংলাদেশ হজ্জে বাইতুল্লাহর মোয়াল্লেম, চবি আরবী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিউল্লাহ্ কুতুবির সাথে দেখা হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর দেখা হল আরেক প্রবীণ শিক্ষক প্রফেসর ড. রফিকের সাথে। ২০১৫ সালে উনার সাথে আমরা একত্রে হজ্জব্রত পালন করেছিলাম। বোর্ডিং শেষে ইমেগ্রেশন ও যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে আমরা অপেক্ষায় আছি। অর্থোপেডিক সার্জন ডা. এ টি এম রেজাউল করিম এর সাথে ইফতার সারি। বাংলাদেশ বিমানের একটি বড় ফ্লাইটে আমরা যাত্রা শুরু করি পবিত্র জেদ্দা নগরীর উদ্দেশ্যে। সাত ঘণ্টা উড়াল দিয়ে জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করল ফ্লাইটি। নধমমধমব পষধরস এ গিয়ে ব্যাগ সনাক্ত করে নির্দিষ্ট বুথে গিয়ে বসে পড়লাম। এখানে সেহেরীর ব্যবস্থা করা হয়েছে হজ্জে বাইতুল্লাহ্র পক্ষ থেকে। আমাদের সম্মানিত মোয়াল্লেমগণ হচ্ছেন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. আ ক ম আবদুল কাদের, চবি শিক্ষক প্রফেসর শফিউল্লাহ্ কুতুবি। এবার আমাদের ওমরাহ্ কাফেলার সম্মানিত হাজী সাহেবানরা হচ্ছেন : রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবু আহমেদ হাসনাত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান অনুসদের সাবেক ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম, কমিশনার মোহাম্মদ সাহেদ ইকবাল, রাউজান কলেজ অধ্যক্ষ সেলিম নেওয়াজ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. লুলু ওয়াল মারজান, ইনস্যুরেন্স উদ্যোক্তা আজিজুল ইসলাম তালুকদার, শিল্প উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আবদুল মান্নান সহ ৭৭ জনের বিশাল কাফেলা।

স্থানীয় সময় সাড়ে ৩টায় পবিত্র মদিনা মুনাওয়ারার উদ্দেশে গাড়ি ছেড়ে দিল। বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত সাইয়্যেদিল মুরসালিন, খাতেমুন নাবিয়্যিন আমার রাসূল (স.) এর স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র মদিনা মুনাওয়ারা আবার যে দেখতে পাব, তা কল্পনাই করতে পারিনি-কারণ, (‘কিন্তু) কারো নির্ধারিত সময় যখন এসে যাবে, তখন আল্লাহ্তায়ালা কখনোই তাকে (এক মুহূর্ত) অবকাশ দেবেন না; তোমরা (দুনিয়ার জীবনে) যা কিছু করছ, আল্লাহ্তায়ালা সে সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত রয়েছেন’- সূরা আল্ মুনাফেকুন আয়াত- ১১। মহান রাব্বুল আলামিন এর ইচ্ছায় মদিনা মুনাওয়ারা দেখার সৌভাগ্যটা হয়ে গেল। সকালের ঝির ঝির বাতাস ভেদ করে ছুটছে আমাদের বাহনটা। এ পথ দিয়ে আমার রাসূল (স.) হেঁটেছেন, তাঁর সাহাবিরা হেঁটেছেন, দু-পাশে দেখা যায় সারি সারি পর্বতমালা-এগুলো যেন কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে আমার রাসূল (স.) এর সেই নবুয়তি জীবনের। আহ্ কতই না কষ্ট করেছেন বিশ্বনবী (স.)।

বিপদগামী আরবদেরকে আলোর মুখ দেখার জন্যে মক্কি জীবনের ১৩টি বছর কাটিয়েছেন। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হতে হয়েছে এ মহান মানুষটিকে-তবুও দাওয়াতি কাজে এতটুকু পিছ পা হননি। ইসলামের প্রথম খলিফা সায়্যিদিনা হযরত আবু বকর (র.) সিদ্দিককে সাথে নিয়ে ইয়াসরিব (মদিনা) হিজরত করেছেন এ পথ দিয়েই। পথিমধ্যে ফজরের নামাজটা সেরে নিলাম সবাই। সকাল ৯ টার মধ্যেই পবিত্র মদিনা শহরে পৌঁছি। হারাম শরীফের খুব কাছাকাছি বাব আল্-সালাম এর সামনে এড়ষফবহ ধিংবষ যড়ঃবষ এ আমাদের ঠিকানা । ডা. রেজাউল করিম ও ড. শফিউল্লাহ্ কুতুবি আমার রুমমেট। পবিত্র হারাম শরিফে জোহরের নামায আদায় করি। জান্নাতের টুকরো বলে খ্যাত রিয়াজুল জান্নাতে যাওয়ার জন্যে লাইনে দাঁড়ালাম। প্রচন্ড ভীড় ঠেলে অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণটা এসে গেল। দু’রাকাত নামায সেরে নিই। এটি একটি সম্মানিত স্থান, যা রাসূল (স.) এর হুজুরা শরীফ থেকে মিম্বর পর্যন্ত, যেখানে দাঁড়িয়ে বিশ্বনবী খুতবা দিতেন-যে পবিত্র জায়গায় দু’রাকাত নফল নামায পড়ার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিরন্তর প্রচেষ্টা।

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক
সভাপতি, রাউজান ক্লাব, জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জেনারেল হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট