চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

মূল্যবান প্রত্নসম্পদ রক্ষায় নজর দিতে হবে

১৩ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:১১ পূর্বাহ্ণ

সংরক্ষণের অভাব, সক্রিয় সিন্ডিকেটের পাচার, চুরি ও উদ্ধারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ঐতিহ্যবাহী প্রত্নসম্পদ। প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণে খামখেয়ালি, যুগোপযোগী আইনের অভাব এবং পাচারকারী চক্রগুলোর সাথে রক্ষক পর্যায়ের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত লোকের আঁতাতসহ নানা কারণে ঐতিহ্যের এই মহামূল্যবান সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক প্রত্নসম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। পাচারও হয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশের প্রত্নসম্পদ হুমকিতে পড়ছে দিন দিন। একদিকে অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো, অন্যদিকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চক্রের মাধ্যমে পাচারের শিকার হচ্ছে আমাদের মহামূল্যবান প্রত্নসম্পদ। যদিও প্রত্নসম্পদের পাচার প্রতিরোধে সরকার কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। আবার প্রত্নসম্পদ রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকেই পাচারচক্রগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকায় সরকারের গৃহীত উদ্যোগ থেকে তেমন ফল আসছে না।

আইনি দুর্বলতা ও রক্ষণাবেক্ষণগত ত্রুটির সুযোগে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা মূল্যবান প্রত্নসম্পদ পাচারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাচারকারী চক্রগুলো। এ সংক্রান্ত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, পাচারকারী চক্রগুলো নানা কৌশলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রত্নসম্পদ চুরি করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তা বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এই অপচক্রগুলোকে প্রতিরোধ ও নির্মূলে পদক্ষেপগুলো দুর্বল হওয়ায় প্রত্নসম্পদ পাচারের এ অবৈধ ব্যবসা দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। দেশস্বার্থে এই চিত্রের অবসান হওয়া জরুরি। বিভিন্ন অনুসন্ধানী রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশ থেকে গত দেড়যুগে হাজার হাজার মূল্যবান প্রত্নসম্পদ পাচার হয়ে গেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, পাচারকালে গত এক যুগে র‌্যাব জব্দ করেছে ১ হাজার ২৯৭টি প্রত্নসম্পদ। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মূর্তির সংখ্যা ৪৮৬টি। মূর্তির ভগ্নাংশ রয়েছে ৮১১টি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশের অভিযানেও প্রত্নসম্পদ জব্দ হয়েছে। পাচারকালে জব্দকৃত প্রত্নসম্পদের এই বিশাল পরিমাণ থেকে বুঝা যায় অবৈধ ব্যবসাটির আকার কত বড়। র‌্যাব-বিজিবিসহ আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী যদি পাচারকারীচক্রগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখে তাহলে আগামিতে কাক্সিক্ষত সুফল আসবে। তবে, ‘সর্ষের ভিতর ভূত’ লুকিয়ে থাকলে সুফল পাওয়া কঠিন হবে। উল্লেখ্য, জব্দকৃত পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি প্রত্নসম্পদ পাচার হয়ে যায়। আর পাচারকারীরা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দুর্নীতিবাজ কিছু সদস্যের সহায়তায় সহজে তাদের কুউদ্দেশ্য চরিতার্থ করে থাকে।

তাই মূল্যবান প্রত্নসম্পদের পাচার রোধ করতে আইনকে সময়োপযোগী করার পাশাপাশি অসাধুচক্রকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জোরদার করতে হবে নিয়মিত অভিযান। যেসব রুটে প্রত্নসম্পদ পাচার হয়, সেসব রুট চিহ্নিত করে, পুরোপুরি বন্ধের ব্যবস্থাও করতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে পাচারচক্রের মূল হোতাদের। তাদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে দেশের প্রত্নসম্পদের তথ্য। প্রত্নসম্পদের মূল্য সম্পর্কে দেশের মানুষকে সচেতন করে এ বিষয়ে জনপ্রতিরোধ গড়ার সুচিন্তিত কর্মসূচিও থাকতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট