চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রামেও ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি মোকাবেলায় দরকার কার্যকর তৎপরতা

২৭ জুলাই, ২০১৯ | ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুরোগ এখন আতঙ্কের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তবে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের বাসিন্দারাও স্বস্থিতে নেই। এখনো আতঙ্কের পর্যায়ে না গেলেও বন্দরনগরীতেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। দৈনিক পূর্বকোণে গতকাল প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন বলছে, ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। চলতি মাসের শুরুতে ডেঙ্গু রোগী সংখ্যায় কম হলেও বর্তমানে তা চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচজন করে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে নগরীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সর্বশেষ দুইদিনে চট্টগ্রামে দশজন নতুন রোগী শনাক্ত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৪২জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শনাক্তের তালিকা এসেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। তবে প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী শণাক্ত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আশঙ্কা করা হচ্ছে ঠেকাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যেতে পারে। বিষয়টি উদ্বেগকর।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে নগরীতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র আটজন। অথচ ২০ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত সময়ে আক্রান্ত হয়েছে ৩১জন। আবার সিভিল সার্জন কার্যালয় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শনাক্তের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে চট্টগ্রাম জেলা এবং নগরীর প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডাক্তারের চেম্বারে শরণাপন্ন রোগীর হিসেব নেই। ফলে ধারণা করা হচ্ছে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক হবে। অথচ গত ছয়মাসে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩ জনে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সাথে জনগুরুত্বপূর্ণ এই নগরীর সম্পর্ক ও যোগাযোগের কারণে ধারণা করা হচ্ছে, আগামিতে এ অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরো মারাত্মক রূপ ধারণ করবে, যদি যুতসই প্রতিরোধ উদ্যোগ না নেয়া হয়। জানা গেছে, ঢাকার ন্যায় চট্টগ্রামেও যাতে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ না করতে পারে সে জন্যে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। এ প্রোগ্রামের আওতায় নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের ড্রেনগুলোতে ২৫ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড, দশ হাজার লিটার লার্ভিসাইড ছিটানো হচ্ছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে লিফলেটও বিতরণ করা হচ্ছে জনগণকে সচেতন করতে। এটি ভালো উদ্যোগ সন্দেহ নেই। তবে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা যেহেতু নালা-নর্দমার চেয়ে অপক্ষোকৃত পরিষ্কার স্থানে থাকতে পছন্দ করে, সেহেতু এ মুহূর্তে ড্রেনে ঔষধ না ছিটিয়ে বাসা-বাড়ি এবং প্রতিটি মার্কেট ও অফিস-আদালতের আঙ্গিনায় ছিটানো দরকার। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতেও বলিষ্ঠ কর্মসূচি নিতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকেও পালন করতে হবে দায়িত্বশীল ভূমিকা। সবাই যার যার অবস্থান থেকে সোচ্চার হলে অবশ্যই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সাফল্য আসবে।
উল্লেখ্য, ডেঙ্গু এক ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ। এডিস ইজিপ্টি নামে এক ধরনের মশা এ ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে। ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশা শরীরে কামড় দেয়ার পর রক্তের মনোসাইটে অনিয়ন্ত্রিতভাবে জীবাণু বংশবিস্তার করে। প্রবহমান রক্তের মাধ্যমে জীবাণু হার্ট, লাং, লিভার ও কিডনিতে প্রবেশ করে অধিক হারে বংশবিস্তার করে এসব গুরুত্বপূর্ণ কোষের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কোষঝিল্লিতে আক্রমণ করে প্রদাহের সৃষ্টি করে। কিডনির মূত্র উৎপাদনের কার্যকারিতা হ্্রাস পায় এবং লিভার অকার্যকর হয়। তবে যথাসময়ে শণাক্ত ও যথাযথ চিকিৎসা হলে ডেঙ্গুতে ক্ষতি কম হয়। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এবার ডেঙ্গু ধরন পাল্টেছে। ফলে শণাক্তকরণও কঠিন হয়ে পড়েছে। আগে ডেঙ্গু জ্বরের অন্যতম লক্ষণ ছিল শরীরে র‌্যাশ থাকা। কিন্তু চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে র‌্যাশ দেখা যাচ্ছে না। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর পরীক্ষায় শনাক্ত হলে রোগী কিংবা তার স্বজনকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বলে জানানো হয়, কিন্তু কোন টাইপের, সেটি শনাক্ত করা কঠিন হচ্ছে। এতে রোগীর চিকিৎসাবঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ডেঙ্গু রোগীদের শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অঙ্গ যেমন কিডনি, লিভার, ফুসফুস ও হার্ট আক্রান্ত হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অকার্যকরও হয়ে পড়ছে। এটি উদ্বেগকর। এ অবস্থায় ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করতে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নিতে হবে। পাশাপাশি ডেঙ্গুর নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণাও দরকার, যাতে শণাক্তকরণ ও সুচিকিৎসা সহজ হয়। চার ধরনের সেরোটাইপ ডেঙ্গুর (ডিইএনভি-১, ডিইএনভি-২, ডিইএনভি-৩ এবং ডিইএনভি-৪) মধ্যে কোনটির প্রকোপ দেশে বেশি কিংবা কোনটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, তাও খতিয়ে দেখা জরুরি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট