চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

প্রাণের ভাষায় মনের কথা

আমার মা

সিরু বাঙালি

২৩ মে, ২০১৯ | ১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

মা একটি মহাকাব্যিক শব্দ। পৃথিবীর সবপ্রাণী মা’র গর্ভ থেকে মাটিতে পড়ে প্রথম যে শব্দটি উচ্চারণ করে, সেটি ‘মা’। দুনিয়াতে সদকিছুর বিকল্প আছে, কিন্তু মায়ের কোনো বিকল্প নেই।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রংপুর বিভাগে এক ছেলে তার মা’কে পিঠিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। মা’র অপরাধ, তিনি দুটো বাড়তি ভাত চেয়েছিলেন। খবর পেয়ে জেলাপ্রশাসক নিজে গিয়ে সেই আহত মা’কে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন, নতুন বাড়ি করে দিয়েছেন।
মায়ের শরীর থেকে তখনো ছেলের মারের আঘাতের ক্ষত শুকায়নি। তবুও নতুন বাড়িতে উঠে জেলাপ্রশাসকের কাছে মায়ের দাবি, তাঁর ছেলেকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে যেন তাঁর কাছে নিয়ে আসা হয়। এই হলো ‘মা’। এরই মা-জননী।
এটা গেল মানব মায়ের গল্প। এবার বলি একটা পশুমা’র গল্প। কিছুদিন আগে ডিসকভারি চ্যানেলে দেখলাম, বৎসোয়ানার জঙ্গলে সদ্যপ্রসূত একটি হরিণশাবককে পাহারা দিচ্ছে এক ক্ষুদার্থ সিংহী। প্রায় ১৩দিন সম্পূর্ণ অনাহারে, নির্ঘুম সিংহী হরিণশাবককে পাহারা দিতে দিতে নিজে মৃত্যুকে বেছে নিয়েছে, তবুও মাতৃত্বের মহত্বকে অবমাননা করেনি। এই ডকুমেন্টারিটা যাঁরাই দেখেছেন, কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন। এই দুই ঘটনা বলে এটাই বোঝাতে চাইলাম, ‘মা’ সে মানুষ হোক আর পশু হোক, তাঁর চরিত্র এক। তাঁর পরিচয় এক। তিনি জননী-জন্মধাত্রী।
কারো কারো কাছে তাঁর মা-ই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। আমিও মনে করি, আমার মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা ছিলেন। একেবারে অক্ষরজ্ঞানহীন একজন মহিলা তাঁর ছেলেকে জগতের সেরা মানুষ বানাবার জন্য গরিবী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ চালিয়েছিলেন, এককথায় যা ছিল অবিশ্বাস্য। ছেলের শিক্ষার্জনের জন্য তিনি যে ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, আমাদের গ্রামে তা এখনো কিংবদন্তি।
মাত্র আড়াই টাকার জন্য হাই স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে আমি ভর্তি হতে না পারায় চুলার পাজরে বসে আঁচলে মুখ লুকিয়ে আমার মা’য়ের কান্না দেখে সেই শিশূ বয়সে আমি বুঝেছিলাম, মা’য়ের কোনো তুলনা নেই। কোনো বিকল্প নেই। মা মা-ই।
১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময়, মীর আফজল খলিফা নামে আমাদের পাড়ার এক মুসলিম লীগার আমার মা’কে বলেছিলেন, বুবু, গোপন সূত্রে খবর পেয়েছি, আপনার ছেলে সিরু ফটিকছড়ি বর্ডারে যুদ্ধে শহীদ হয়েছে। উত্তরে আমার মা বলেছিলেন, কী বলেন ভাই, আমার ছেলের গায়ে সামান্য ফোঁড়া হলে আমার গায়ে জ্বর এসে যায়, আর এতবড়ো ঘটনায় আমার গায়ে সামান্য কাঁপুনিও এল না ! এটা কীভাবে হয় ? অসম্ভব । এই হলো মা। আমার মা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট