ভোটার তালিকায় চট্টগ্রামে নতুন করে যুক্ত হল আরও তিন লক্ষাধিক ভোটার। তালিকা থেকে প্রায় ৯৪ হাজার মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আর ভোটার স্থান পরিবর্তন করেছেন ২৫ হাজার ভোটার। এছাড়াও ১৮ বছরের কম বয়সী ৭৭ হাজার ৬৭০ জন নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৮ বছর পূর্ণ হলে তারা ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন।

ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শেষে রবিবার (২০ এপ্রিল) এই তথ্য জানান চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়। জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বশির আহমদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ের উপর নির্ভর করছে নতুন ভোটারদের ভাগ্য। ২০২৬ সালের মার্চের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে নতুন ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কিনা প্রশ্ন রয়েছে। কারণ চলতি বছরের ২ মার্চ জাতীয় ভোটার দিবসে পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ২০২৬ সালের পরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নতুন ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন। তবে নির্বাচনী আইনে সংশোধন আনা হলে নতুন ভোটাররা ২০২৬ সালে আগেও ভোট দিতে পারবেন।

নির্বাচনী আইনে সংশোধনের কথা নির্বাচন কমিশনাররা ইতিমধ্যে একাধিকবার বলেছেনও। নির্বাচন কমিশন জানায়, গত ২০ জানুয়ারি থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারযোগ্য নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ হয়। একই সঙ্গে মৃত ভোটারদের ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে নিবন্ধনকেন্দ্রে (বায়োমেট্রিক) নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে। ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার ঊর্ধ্বে যাদের জন্ম অথবা বিগত ভোটার তালিকা হালনাগাদে যারা বাদ পড়েছেন তাদের নিবন্ধন করা হয়।

হালনাগাদ শেষে গতকাল নতুন ভোটারের তালিকা ঘোষণা করা হয়। তালিকায় নতুন যুক্ত হচ্ছে তিন লাখ ৪ হাজার ২৮৩ জন ভোটার। তবে নতুন ভোটাররা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন কিনা প্রশ্ন রয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কমিশনার বশির আহমদ গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ২০২৬ সালের মার্চের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নতুন ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন না। কারণ ২ মার্চ ভোটার তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে নির্বাচনী আইনে সংশোধন আনা হলে তারা ভোট দিতে পারবেন। আগামী বছরের (২০২৬ সাল) মার্চের পরে নির্বাচন হলে তারা ভোট দিতে পারবেন।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে ভোটার ছিল ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৩৯৩ জন। সেই ভোটার তালিকা থেকে হালনাগাদে ৯৩ হাজার ৮৩৭ জন মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আর ২৪ হাজার ৭৯৯ জন ভোটার স্থান বদল করেছেন। একই সঙ্গে ১৮ বছরের কম বয়সী ৭৭ হাজার ৬৭০ জন নাগরিকের নিবন্ধন করা হয়েছে। ১৮ বছর পূর্ণ হলেই তারা ভোটার হিসেবে গণ্য হবেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমদ বলেন, ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি যাদের জন্ম তাদের নিবন্ধন করা হয়েছে। ১৮ বছর পূর্ণ হলেই তারা ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, নতুন ভোটারের মধ্যে নগরের ছয় থানায় নতুন ভোটার হয়েছেন ৫২ হাজার। এরমধ্যে বেশি ভোটার হয়েছেন ডবলমুরিং ও পাঁচলাইশ থানায়। ডবলমুরিং থানায় ১২ হাজার ৯১৪ জন ও পাঁচলাইশ থানায় ৯ হাজার ৬৫৫ জন। চান্দগাঁও থানায় ৯ হাজার ১১৫ জন। পাহাড়তলীতে ৭ হাজার ৭২২ জন, বন্দর থানায় ৭ হাজার ১৯৪ জন, কোতোয়ালীতে ৫ হাজার ৪০০ জন। জেলার ১৫ উপজেলায় নতুন ভোটার হয়েছেন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৮৩ জন। এরমধ্যে বেশি ভোটার হয়েছেন বাঁশখালী, আনোয়ারা, লোহাগাড়া ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। সবচেয়ে কম ভোটার হয়েছেন কর্ণফুলী উপজেলায়। ৭ হাজার ২৪৭ জন।

বাঁশখালীতে নতুন ভোটার হয়েছেন ২৪ হাজার ৮২২ জন। আনোয়ারায় ২৪ হাজার ৩২৭ জন। রাঙ্গুনিয়ায় ২১ হাজার ৩৭৬ জন। লোহাগাড়ায় ২১ হাজার ২১৪ জন। সাতকানিয়ায় ১৮ হাজার ৮৩ জন। ফটিকছড়িতে ১৭ হাজার ৭৪০ জন। পটিয়ায় ১৭ হাজার ১৬ জন। সীতাকুণ্ডে ১৬ হাজার ৬২ জন। হাটহাজারীতে ১৬ হাজার ৭৪৮ জন। মিরসরাইয়ে ১৫ হাজার ৫১ জন। স›দ্বীপে ১৩ হাজার ৭৯৬ জন। রাউজানে ১৩ হাজার ৯৭৯ জন। চন্দনাইশে ১২ হাজার ৮০৫ জন। বোয়ালখালীতে ১২ হাজার ১৭ জন।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, গত ১৬ বছর ধরে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে একতরফা নির্বাচন, ভোটকেন্দ্র দখল, ভোটারদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার কারণে ভোটবিমুখ হয়ে পড়েছেন ভোটাররা।

পূর্বকোণ/ইব