চট্টগ্রাম সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রাম ওয়াসা

চট্টগ্রাম ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্পের ট্রায়াল রান নভেম্বরে

­­­উৎপাদন বাড়বে দৈনিক ৬ কোটি লিটার

মোহাম্মদ আলী

১৪ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের ট্রায়াল রান আগামী নভেম্বর মাসে। ট্রায়াল রান দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে ওয়াসা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

 

ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্পটি ২০২৩ সালের নভেম্বরে উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কর্ণফুলী নদীর ওপারে পশ্চিম পটিয়ার কালারপুল ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় কিছু জায়গার মালিকানা নিয়ে জেলা পরিষদ ও স্থানীয় একটি মাদ্রাসার মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় পড়ে ওয়াসা। এ কারণে ওই জায়গায় পাইপলাইন বসানোর কাজে জটিলতা সৃষ্টি হয়। তাতে প্রকল্পের উৎপাদন দীর্ঘ একবছর পিছিয়ে যায়। অবশেষে সব জটিলতা অবসান করে পাইপলাইনের কাজ বর্তমানে শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

 

ওয়াসা সূত্র জানায়, ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের অন্যসব কাজ শেষ হলেও পশ্চিম পটিয়া কালারপুল ব্রিজ সংলগ্ন শিকলবাহা খালের মাটির তলদেশে ২৪ মিটার গভীরে ২৪৭ মিটার দৈর্ঘ্য একটি পাইপলাইন বসাতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ওয়াসা। তাতে যথাসময়ে উৎপাদনে যেতে পারেনি সরকারি সেবা সংস্থাটি। এ নিয়ে ওয়াসার বিরুদ্ধে মামলাও হয়। শেষ পর্যন্ত আদালতের অনুমতি নিয়ে পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু করে ওয়াসা। ইতোমধ্যে শিকলবাহা খালের তলদেশে পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে খালের ওপরে দুটি পাইপলাইনের সংযোগের কাজ হচ্ছে। এরপর সংযোগস্থলে ঢালাইয়ের কাজ হবে। তাতে সময় চলে যেতে পারে চলতি অক্টোবর মাস।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহম্মদ মাহবুবুল আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘পশ্চিম পটিয়া কালারপুল ব্রিজ সংলগ্ন শিকলবাহা খালের মাটির তলদেশ দিয়ে প্রকল্পের পানি সরবরাহ পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে খালের ওপরে দুটি পাইপলাইনের সংযোগের কাজ হচ্ছে। এরপর সংযোগস্থলে ঢালাইয়ের কাজ হবে। তাতে সময় চলে যেতে পারে চলতি অক্টোবর মাস। ইতোমধ্যে প্রকল্পের অন্য সব কাজ শেষ হয়েছে। আগামী নভেম্বরের প্রথম ১০ দিনের মধ্যে প্রকল্পের ট্রায়াল রান শুরু হবে। এরপর গ্রাহকরা প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহ পাবে।’

 

ওয়াসা সূত্র জানায়, বোয়ালখালী, পটিয়া, কর্ণফুলী ও আনোয়ারায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, সরকারি ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, কোরিয়ান ইপিজেডসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পানি সরবরাহের জন্য ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বোয়ালখালীর শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের জ্যৈষ্ঠপুরা গ্রামে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে এই প্রকল্পের জন্য পানি শোধনাগার তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে কর্ণফুলী নদীর বাম তীরে অবস্থিত শিল্পকারখানা ও আবাসিক এলাকায় পানি সরবরাহ করা হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তাইইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এ প্রকল্পের কাজ করছে। প্রায় এক হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটি দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি উৎপাদনে গেলে ওয়াসার পানি সরবরাহ বাড়বে দৈনিক আরো ৬ কোটি লিটার। যা সরবরাহ হবে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে।

 

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘বাণিজ্যিক গ্রাহক ছাড়াও এ প্রকল্পের অধীনে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় তিন হাজার আবাসিক গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত সংযোগের জন্য আবেদন করেছে ১২০০ গ্রাহক। এর মধ্যে ৭০০ গ্রাহকের বাসাবাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট গ্রাহকদের সংযোগের কাজ চলছে। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের জুনে। কিন্তু প্রকল্পে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। শুরুতে করোনা মহামারী, এরপর পশ্চিম পটিয়া কালারপুল ব্রিজ সংলগ্ন শিকলবাহা খালের মাটির তলদেশে পানি সরবরাহ পাইপলাইনের কাজে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এসব জটিলতা নিরসন করে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হচ্ছে। আগামী নভেম্বরের শুরুতে ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি ট্রায়াল রানে যাবে।’

 

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রকল্পটি উৎপাদনে গেলে উপকৃত হবে কর্ণফুলী নদীর ওপারের বোয়ালখালী, পটিয়া, কর্ণফুলী ও আনোয়ারার শিল্প কারখানার মালিক ও আবাসিক গ্রাহকরা। নদীর ওপারে ভবিষ্যতে পানির চাহিদা মাথায় রেখে ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ওয়াসা।’

 

পূর্বকোণ/এমটি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট