চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অন্যতম কাজ হলো আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। কিন্ত গত ১৬ বছরেও সিডিএ নতুন কোন আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বিগত কয়েক বছরে দু’একটি আবাসন প্রকল্প হাতে নিলেও বিভিন্ন জটিলতায় পিছু হটে সংস্থাটি।
সরকারিভাবে নতুন আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় মানুষ সহনীয়মূল্যে আবাসন সুবিধা পাচ্ছে না। সেইসাথে বেসরকারিভাবে গড়ে উঠা আবাসন ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে একদিকে সাধারণ মানুষের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে অন্যদিকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন কেউ কেউ। চট্টগ্রামবাসীর আবাসন সুবিধা বাড়াতে নতুন আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি সিডিএ’র পুরাতন যেসব আবাসন প্রকল্পে স্থাপনা নির্মাণ হয়নি সেগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন সিডিএ চেয়ারম্যান।
গত ১৬ বছরে ফ্লাইওভার, রিং রোড, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং ফ্ল্যাট প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয় সিডিএ। এরমধ্যে কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ সিডিএ’র পাঁচ থেকে ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এই ১৬ বছরে সিডিএ হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও কোন আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি। অন্যদিকে, পরিকল্পিত নগরী গড়তে আবাসিক এলাকার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, গত ছয় দশকের বেশি সময়ে ১২টি আবাসন প্রকল্পে পাঁচ হাজারের বেশি প্লট বরাদ্দ দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। তবে এর কোনোটিতে ঠাঁই হয়নি নিম্ন স্বল্প আয়ের মানুষের। দেশের ছিন্নমূল মানুষের আবাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা অপ্রতুল। ফলে বিশ্ব বসতি দিবস পালন হলেও এসব মানুষের জন্য বসতি হয় না।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, বিগত অনেক বছর সিডিএ নতুন কোন আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেনি এটা সত্য। তবে আগে নেয়া অনন্যা আবাসিকসহ আরো কয়েকটি প্রকল্পে আবাসন গড়ে উঠেনি। এত বছরেও কেন এসব আবাসিকে মানুষ বাড়ি-ঘর নির্মাণ করেনি, এগুলোর কারণ চিহ্নিত করে তা দ্রুত সমাধান করাই আমার লক্ষ্য।
তিনি আরো বলেন, নগরীর পতেঙ্গা এবং সীতাকুণ্ডের নতুন দু’টি আবাসিক এলাকা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা চলছে। এছাড়া, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী যেসব এলাকায় আবাসন প্রকল্পের কথা উল্লেখ রয়েছে ক্রমান্বয়ে সেখানে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। অন্যদিকে, পূর্বের যেসব আবাসন প্রকল্পে এখনো স্থাপনা নির্মাণ করা হয়নি, এগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে সেখানে বাড়ি-ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি ইতোমধ্যে অনন্যা আবসিক, কর্ণফুলী আবাসিক এলাকার সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে বসেছি। এসব আবাসিকে দ্রুত কীভাবে স্থাপনা নির্মাণ হবে সে বিষয়ে তাদের সাথে আলাপ হয়েছে।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০০৮ সালে নগরীর অক্সিজেন ও কুয়াইশের মধ্যবর্তী এলাকায় প্রায় ১৭০০ প্লট নিয়ে অনন্যা আবাসিক এলাকা গড়ে তুলে সিডিএ। এরপর আর কোন আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি এই সংস্থা। সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ ‘অনন্যা আবাসিক দ্বিতীয় পর্যায়’ একটি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেন। তবে অর্থ জটিলতায় পরে প্রকল্পটি আর বাস্তবায়ন হয়নি। সিডিএ নতুন করে আবাসন প্রকল্প না নিলেও বিগত কয়েক বছরে দুটি ফ্ল্যাট প্রকল্প নির্মাণ করেছে এবং বর্তমানে আরো একটি ফ্ল্যাট প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
পূর্বকোণ/ইব