দীর্ঘদিন ধরে ঘরের রাজনীতিতে অনেকটা ‘নিরবেই’ ছিলেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকারের অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে ঘরোয়া রাজনীতিতে হঠাৎ করেই উচ্চকিত হয়ে ওঠেন ওয়াসিকা। এলাকায় একাধিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কিছু বক্তব্য দেন, যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়।
এরমধ্যেই শুক্রবার আনোয়ারা উপজেলা মিলনায়তনে এক সভায় চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ তার নির্বাচনী এলাকায় সমাবেশের ক্ষেত্রে নিয়ম অনুসরণ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘আমাদের দল বা অন্য দলের কেউ যদি এখানে সমাবেশ করতে চায়, তাদের অন্তত এক সপ্তাহ আগে অনুমতি নিতে হবে। আপনি আগামীকাল সমাবেশ করবেন আর আজকে অনুমতি নেবেন, এটা হবে না। আজ থেকে আমার এই নির্দেশ কার্যকর হবে।’
কার উদ্দেশে, কেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী এমন বক্তব্য দিয়েছেন সেটি স্পষ্ট করে বলেননি। কিন্তু তাদের দু’জনের বক্তব্য উত্তাপ ছড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ স্থানীয়দের মাঝে। টক অফ দ্য টাউনে রূপ নিয়েছে তাদের দু’জনের ক্ষোভ ঝরানো বক্তব্য।
যদিও জেলা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের উদ্দেশে এমন বক্তব্য দিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী জাবেদ।
এই বিষয়ে কথা বলার জন্য পূর্বকোণের পক্ষ থেকে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানকে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
আনোয়ারার রাজনীতিতে সাবেক ও বর্তমান দুই মন্ত্রীর ‘বাহাস’র মধ্যে আজ রবিবার ঢাকায় বসতে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিভাগের আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। সকাল ১১টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সকল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং জেলার আওতাধীন সংসদ সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদ শুক্রবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেন, ‘ইউএনও সাহেব, আপনি আমার ক্লিয়ার মেসেজ পেয়েছেন। এটা আমার নির্বাচনী এলাকা এবং আমি এই আসনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এখানে কোনো দ্বৈত শাসন থাকবে না।’
কারো নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। আমি খুব ভালো করেই জানি কীভাবে পরিস্থিতি ট্যাকল (সামাল) দিতে হয়।’
ওয়াসিকা আয়শা খান তিনবারের মহিলা সংসদ সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অর্থ প্রতিমন্ত্রী মনোনীত হন তিনি। অর্থ প্রতিমন্ত্রীর হওয়ার পর দুই বার আনোয়ারা-কর্ণফুলীতে ‘শোডাউন’ করেছেন ওয়াসিকা। আওয়ামী লীগের একটি অংশ তার সঙ্গে যোগ দেন। গত ২৩ মার্চ তিনি আনোয়ারা উপজেলায় উপকূলীয় বেড়িবাঁধ প্রকল্প পরিদর্শন করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের বড় ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিয়ে সরকারি দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপ-ঠিকাদারির কাজ ভাগিয়ে নেন। পরে বারোসাত ইউনিয়নে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ইফতার মাহফিলে অংশ নেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী।
ওই সভায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান কারো নাম উল্লেখ না করে বলেছিলেন, ‘কুকুরের কাজ কুকুরে করবে। আমাদের কাজ আমরা করবো।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়, ঐক্যের রাজনীতি করতে চাই।’
এছাড়াও ৯ মার্চ আনোয়ারা উপজেলায় ওয়াসিকাকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কারো নাম উল্লেখ না করলেও দুই সংসদ সদস্যের এই ধরনের ‘বাহাস’ দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে। তা অনেকটা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী। এটা যেন নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সেই আলোচিত বিভেদের প্রতিধ্বনি। এটা রাজনীতির জন্য মোটেই শুভকর নয়।’
পূর্বকোণ/এএইচ