চট্টগ্রাম রবিবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান চৌধুরী

হানাদার বাহিনী ১৯ মে বাণীগ্রাম ও পালেগ্রামের ৬২ জনকে হত্যা করে

অনুপম কুমার অভি 

৮ মার্চ, ২০২৪ | ১:৪৪ অপরাহ্ণ

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, তিনি ১৯৭০ সালে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের পাহাড়তলী হাজিক্যাম্পে আনসার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। ’৭১ সালে দেশে যুদ্ধের ডামাডোল চলছে। ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনে বুকের মধ্যে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠে। বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ শুরু করে দিলাম। কালুরঘাটে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। বরিশালের আবদু সাত্তারসহ ৬ জন আমার গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। তখন আমি উপায়ান্তর না দেখে কালীপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান মফজল আহমদ চৌধুরীর বাড়িতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করি। এরপর সিদ্ধান্ত নিই দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় একজন বাঙালি হিসেবে অংশ নিতে হবে।

কয়েকজন বন্ধু মিলে বাড়ি থেকে পালিয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের দেমাগ্রী মিজুরাম প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগ দিই। আমার পূর্ব থেকে (ইপিআর) প্রশিক্ষণ থাকায় ভারতীয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের প্রশিক্ষক চিত্তরঞ্জন বাবু ও আমি ট্রেইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। বাংলাদেশের শত শত মুক্তিযোদ্ধাকে কামান, এন্ট্রিট্যাংক মাইন, রাইফেল, স্টেনগান চালানোর প্রশিক্ষণ দিই।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান চৌধুরী যুদ্ধে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ১নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর রফিকুল ইসলাম (বীরউত্তম)। তৎমধ্যে ১নং সেক্টরে আমার স্থান হয়। ভারতের দেমাগ্রীতে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোক্তার আহমদ এর সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে একসাথে বিভিন্ন অপারেশন কার্যক্রম শুরু করি। এক মাস প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অবস্থান করার পর সড়ক, নদী, পাহাড়ি পথে ৬দিন পর বাঁশখালীতে এসে ক্যাম্প করে জলদি হাইস্কুলে অবস্থান নিই। এর মধ্যে খবর আসে পাকিস্তানি সৈন্যরা বিভিন্ন স্থানে অত্যাচার, নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালের শ্রমিক হিসেবে কাপ্তাই পেপার মিল, কালুরঘাট, রাঙ্গুনিয়া এলাকায় ৫০ জনের আনসার লিডার হিসেবে দায়িত্ব ছিল। এই সময় সাথে ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা পটিয়ার কমান্ডার বারেক, আলম, বোয়ালখালীর আব্দুর শুক্কুর, আবুল হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন, বাঁশখালীর আব্দুর রহমান চৌধুরী ও নেভি আজিজুল হক। ৮জনে সিদ্ধান্ত নিই এলাকায় ফিরে পাকিস্তানি সৈন্যদেরকে বিতাড়িত করতে যুদ্ধ অংশে নেওয়ার। তিনি বলেন, গুনাগরীতে অবস্থিত খানখানাবাদ ভূমি অফিস, থানা আক্রমণ, গুনাগরী ওয়াফদা অফিস আক্রমণ, সাধনপুর পরিষদ ভবন আক্রমণ, সিও অফিস আক্রমণে আমি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলাম। বাঁশখালীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার আহমদের সাথে থেকে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে খবর আসে ৭১ সালের ১৯ মে পাকিস্তানি সৈন্যরা সাতকানিয়া হয়ে ১০টি সাজোয়া গাড়ি নিয়ে ভারী অস্ত্রসস্ত্র সহকারে বাণীগ্রামে প্রবেশ করেছে। নিরীহ মানুষের উপর নির্যাতন অগ্নিসংযোগ শুরু করেছে। এই সময় ২২ জনকে খুন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পাকিস্তানি সৈন্যরা বাণীগ্রাম আক্রমণের পর কালীপুর ইউনিয়নের পালেগ্রাম থেকে বিভিন্ন এলাকার নিরীহ ৪০ জনকে ধরে নিয়ে বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজ এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান চৌধুরী কালীপুর ইউনিয়নের গুনাগরী গ্রামের মো. ইসমাইল চৌধুরীর ছেলে। তিনি ৩ ছেলে ২ মেয়ের জনক। তখন নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।

 

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট