মো. শাহজাহান আনসারী। ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকেই ‘মৎস্য’ চাষাবাদ করে আসছেন কক্সবাজারের এ হোটেল ব্যবসায়ী। গত আট বছরে এ খাত থেকে আয় করেছেন কোটি টাকারও বেশি। এসব আয় থেকে নিয়মিত করও দিয়ে আসছেন সরকারকে। একইসঙ্গে আয়ের টাকায় গড়েছেন সম্পদও। অথচ দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে- মৎস্য চাষাবাদের কোন অস্তিত্বই ‘নেই’ শাহজাহান আনসারীর।
শুধু তাই নয়- এ সংক্রান্ত কোন ব্যবসা-বাণিজ্যের দালিলিক কোন রেকর্ডপত্রও পায়নি দুদক। অথচ শাহজাহান আনসারীর রয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। যার ৭৫ শতাংশের বেশিই অবৈধ!
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘ইয়াবা কারবারের’ সাথে যুক্ত থেকে এসব অবৈধ সম্পদ গড়েছেন এক সময়ের ইয়াবা কারবারি শাহাজাহান আনসারী। যার বৈধ আয়ের চেয়ে চার গুণ বেশি রয়েছে অবৈধ সম্পদ। তবে শেষ পর্যন্ত রক্ষা হচ্ছে না শাহজাহানের। অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুদকের মামলার জালে আটকাতে হচ্ছে এ ব্যবসায়ীকে। সঙ্গে এসব অবৈধ সম্পদ ভোগ করায় স্বামীর সঙ্গে ফাঁসতে হচ্ছে স্ত্রী জিগারুন নেছা জিনিয়াকেও। দুদক সূত্রে এমন খবর পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত কক্সবাজারের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি শাহজাহান আনসারীর অবৈধ সম্পদ অর্জনের খোঁজে অনুসন্ধানে নামে দুদক। প্রাথমিকভাবে তাঁর অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়ায় ২০১৯ সালে দুদকের সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ২০২০ সালে কমিশন শাহজাহান আনসারী ও তার স্ত্রী জিগারুন নেছা জিনিয়ার নামে পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেন। এরমধ্যে ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত কক্সবাজারের ১০২ মাদক কারবারি আত্মসমর্পণ করেন। যারমধ্যে শাহজাহান আনসারীও ছিলেন। মাদক মামলায় সাজা খেটে রেহাই পেলেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যায় দুদক।
জানা গেছে, দীর্ঘ অনুসন্ধানে শাহজাহান আনসারীর নামে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। যারমধ্যে তাঁর বৈধ পাওয়া যায় মাত্র প্রায় ৮২ লাখ টাকা। এছাড়া তার স্ত্রীর গৃহিণী হয়েও তার নামে প্রায় ১ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগের তথ্য পাওয়া যায়। যারমধ্যে প্রায় ৮৫ লাখ টাকাই ছিল অবৈধ। এসব সম্পদ অবৈধ আয়ে অর্জিত বলে দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে আসে। অর্থাৎ শাহজাহানের অর্জিত আয়ের প্রায় চারগুণ সম্পদ ছিল অবৈধ।
অন্যদিকে, কক্সবাজারে মেসার্স নুসরাত এন্টারপ্রাইজ নামীয় একটি খুচরা রড ও সিমেন্ট বিক্রির ব্যবসা রয়েছে শাহজাহান আনসারীর। বৈধ আয়গুলো ছিল এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা থেকে। এছাড়াও তার নামে সাড়ে ৪৩ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি থাকার তথ্য পাওয়া যায়। যার বৈধ আয়ের হিসেব দুদকের কাছে জমা দিতে পারেননি শাহজাহান।
অভিযোগের বিষয়ে শাহজাহান আনসারী পূর্বকোণকে বলেন, সব ধরণের কাগজপত্র দুদকে দেওয়া আছে। কোন সম্পদের অসঙ্গতি নেই। সবকিছুই সঠিক।
মামলার দায়েরের সিদ্ধান্ত দুদকের : অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে শাহজাহান আনসারী ও তার স্ত্রী জিগারুন নেছা জিনিয়ার নামে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-৫) খান মো. মীজানুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে। গত ২০ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত চিঠিতে মামলা দায়ের করার জন্য দুদকের কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালককে নির্দেশ দেন। দুদক সূত্র জানায়, দু-একদিনের মধ্যেই মামলাটি দায়ের করা হবে।
পূর্বকোণ/জেইউ