চট্টগ্রাম শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

ক্রেতার ভিড় থাকলেও নেই পর্যাপ্ত ইলিশ হতাশ উপকূলের জেলেরা

নিষেধাজ্ঞা শুরুর সময় পিছিয়ে দেয়ার দাবি জেলেদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১২:১১ অপরাহ্ণ

ভরা মৌসুমেও উপকূলীয় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না ইলিশ। প্রতিবছর এ সময়টাতে পূর্ণিমা ও আমবস্যার জো’কে ঘিরে উৎসবে মেতে ওঠে জেলে পল্লীগুলো। গত ২৩ জুলাই নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর দেড়মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখন কাক্সিক্ষত ইলিশের দেখা মিলছে না। ইলিশের আশায় প্রতিদিন ক্রেতারা ভিড় করছেন উপকূলীয় মৎস্য ঘাটগুলোতে। কিন্তু ইলিশের অপ্রতুলতা ও অত্যাধিক দামের কারণে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে কাঙ্খিত মাছ না পাওয়ায় হতাশ জেলেরা। 

 

মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী জো’গুলোতে ভাল ইলিশ আটকা পড়বে। জেলেরা এখনও আশাবাদী। কিন্তু তাদের সামনে এখন নিষেধাজ্ঞার  ভয়। আগামী মাসে আসবে মা ইলিশ রক্ষায় আবারও ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। তার আগে কাক্সিক্ষত ইলিশ ধরা নিয়ে তারা সন্দিহান। আর এজন্য নিষেধাজ্ঞা শুরুর সময় কিছুটা পিছিয়ে দেয়ার দাবি তাদের।

 

গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে রানি রাসমনি ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, নৌকা থেকে ইলিশের ঝুড়ি নিয়ে একের পর এক পাড়ে উঠে আসছেন জেলেরা। আর ক্রেতার দল ঘিরে ধরছেন তাদের। ঝুড়িতে পর্যাপ্ত ইলিশ নেই। যা আছে, তার দাম হাঁকানো হচ্ছে অনেক বেশি। জেলে রাখাল দাস বলেন, পুরো নৌকায় ২০ কেজি মাছও আনতে পারিনি। এ মাছ বিক্রি করে নৌকা আসা-যাওয়া খরচ, চারজন কর্মচারীর বেতন কোনটাই মিটবে না। এখনও পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়ার অপেক্ষায় নিয়মিত সাগরে যাচ্ছি।

 

স্থানীয় জেলে সর্দার খেলন দাস বলেন, চলতি বছর কাক্সিক্ষত ইলিশের এক তৃতীয়াংশও এখন ধরা পড়েনি জেলেদের জালে। চলমান অমাবস্যার জো’তে এবার তেমন একটা ইলিশ ধরা পড়ছে না। তবে আগামী পূর্ণিমার জো’তে সাগরে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়তে পারে।

 

তিনি আরও বলেন, এখনাকার প্রায় জেলে পরিবার সাগরে মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল। বছরের অন্যান্য সময়ে মাছ তেমন একটা পাওয়া যায় না। সারাবছর ধারদেনা করে পরিবার চালায় আর অপেক্ষায় থাকে ইলিশ মৌসুমের। কিন্তু এভাবে ইলিশ ধরা না পড়লেউপকূলের হাজার হাজার জেলে পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে। 

 

স্থানীয় জেলেদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সামনে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়তে পারে। দু’একটি জো’তে ঠিকমত ইলিশ ধরতে পারলে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠতে পারবেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে শংকিত তারা। প্রতিবছর অক্টোবরের শুরুর দিকে দেয়া হয় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। জেলেদের দাবি এবার অক্টোবরের শেষ দিকে যেন শুরু হয় এই নিষেধাজ্ঞা। তাহলে কিছুটা সময় ইলিশ আহরণের সুযোগ পাবেন তারা।

 

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বৃষ্টির তারতম্য দেখা দিয়েছে। দেরিতে বর্ষা শুরু হওয়ায় ইলিশের মৌসুমও পিছিয়ে গেছে। এরমধ্যে সে সব ইলিশ ধরা  পড়ছে, সেগুলোর ডিম এখনও পরিপক্ক হয়নি। সাধারণত ডিম ছাড়ার সময় হলে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উপকূলের দিকে চলে আসে এবং জেলেদের জালে আটকা পড়ে। আশা করছি আগামী জো’গুলোতে জেলেদের জালে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়বে।

 

মা ইলিশ রক্ষায় আসন্ন নিষেধাজ্ঞা সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য বিশেষজ্ঞ, মৎস্যজীবিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনা করে নিষেধাজ্ঞার এ মেয়াদ ঠিক করা হয়। এখনও পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি।

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট