চট্টগ্রাম বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

ডেঙ্গুর মধ্যেই নতুন আপদ ‘স্ক্যাবিস’

এক মাসের তুলনায় দেড়গুণ রোগী ­­­ বেড়েছে আমেরিকান হাসপাতালে

ইমাম হোসাইন রাজু

২৬ আগস্ট, ২০২৩ | ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

ছয় বছর বয়সী জমজ দুই বোন আইরিন আহমেদ ও আইনুর আহমেদ। সারা শরীর চুলকানোর পাশাপাশি হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে লালচে ঘামাছির যন্ত্রণায় অস্থির এই দুই শিশু। অসহ্য যন্ত্রণায় শেষমেষ দুই শিশুকে নিয়ে আগ্রাবাদের বিশেষায়িত কেন্দ্রীয় চর্ম ও সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে (আমেরিকান হাসপাতাল) ছুটে আসেন তাদের মা। এসময় চিকিৎসক আইরিন ও আইনুরের ক্ষতস্থান পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান তারা দুইজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে চর্ম রোগের ছোঁয়াচে রোগ স্ক্যাবিস। যাকে সাধারণ লোক খোসপাঁচড়া বলে থাকেন।

 

আইরিন আর আইনুরের চিকিৎসা পরামর্শকালে একই সমস্যা নিয়ে একই চিকিৎসকের কাছে আসেন মধ্যবয়সী রাইসুল। তাঁরও সারা শরীর চুলকানোর পাশাপাশি হাত ও গোপনাঙ্গও ক্ষত হয়েছে এ রোগে। চিত্রটি ছিল গত বৃহস্পতিবার দুপুরের। আলোচ্য এ তিনজনই নয়, হাসপাতালটিতে ঘণ্টাখানেক অবস্থানকালে বেশ কয়েকজন রোগী একই সমস্যা নিয়ে ছুটে আসেন। যদিও হাসপাতালটির প্রধানের দায়িত্বে থাকা ডা.  মো. লুৎফুর রহমান রাহাত জানিয়েছেন- এ দিন চিকিৎসা নিতে আসা শতাধিক রোগীর মধ্যে ৬০ জনের বেশি এসেছিলেন স্ক্যাবিস সমস্যা নিয়ে।

 

গত চার বছর ধরে মহামারী করোনা এবং চলতি বছর ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবে নগরবাসী যখন এক ধরনের ধকলের মধ্যে দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে নতুন আপদ হিসেবে আবির্ভাব ঘটেছে চর্মরোগ ‘স্ক্যাবিস’। এ যেনো মরার উপর খাঁড়ার ঘা।

 

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘স্ক্যাবিস’ নামের চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। গত মাস দুয়েক ধরেই ছোঁয়াচে এ রোগীর সংখ্যা অন্যান্য মাসের তুলনায় চেম্বার ও হাসপাতালে কয়েকগুণ বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। যা নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় ফেলেছে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের। যদিও এ নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞগণ।

 

আগ্রাবাদের আমেরিকান হাসপাতালের তথ্য অনুসারে, গত জুন মাসে স্ক্যাবিস আক্রান্ত ২ হাজার ৩৬৭ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়। আর জুলাই মাসে চিকিৎসা দেয়া হয় ৩ হাজার ৭৩১ জনকে। এরমধ্যে শিশুদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে দেড়গুণ বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন হাসপাতালটিতে। যদিও চলতি মাসে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

 

চট্টগ্রাম বিভাগের একমাত্র বিশেষায়িত কেন্দ্রীয় চর্ম ও সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (আমেরিকান হাসপাতাল) ইনচার্জ সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. লুৎফুর রহমান রাহাত বলেন,  ‘বেশ কিছুদিন ধরেই স্ক্যাবিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। রোগটি পরিবারের কারও হলে পুরো পরিবারের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়ে থাকে। স্ক্যাবিস হলে সারা শরীর চুলকাতে থাকে। আঙ্গুলের ফাঁকে, যৌনাঙ্গে, হাতের তালুতে, কবজিতে, বগল, নাভি ও কনুইয়ে চুলকানি শুরু হয়। পরে সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। এ ক্ষেত্রে চুলকানি রাতে বেশি হয়। ছোট ছোট ফুসকুড়ি ওঠে, যা খুব চুলকায় এবং তা থেকে পানির মতো তরল পদার্থ বের হতে পারে। চুলকানির কারণে ক্ষত হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে অন্য সংক্রমণও হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়।

 

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রফিকুল মাওলা বলেন, ‘স্ক্যাবিস একধরনের ছোঁয়াচে চর্মরোগ। সাধারণ লোক যাকে খোস পাঁচড়া বলে থাকেন। বাসায় একজন আক্রান্ত হলে অন্যদ্যদেরও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে গরমকালে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় ঘাটতি হলে এ রোগ বেশি হয়। একজন থেকে আরেকজনে স্পর্শের মাধ্যমে বা রোগীর ব্যবহৃত কাপড়, গামছা, তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশ ব্যবহার করলে এ রোগ ছড়াতে পারে। স্বাস্থ্য সচেতন না হলে কোনভাবেই এ রোগ থেকে রক্ষা সম্ভব নয়। এছাড়াও হোস্টেল, মেস, গণপরিবহন, ব্যারাক এবং একই কক্ষে একাধিক মানুষ বসবাস করে এমন জায়গায় এ রোগটি বেশি হয়ে থাকে।  তাই এসব স্থানকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করাও জরুরি।’

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট