চট্টগ্রাম শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

চসিকের ডাম্পিংয়ে কাস্টমসের ‘না’

সারোয়ার আহমদ

১৬ জুলাই, ২০২৩ | ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন দক্ষিণ হালিশহরের আবর্জনার ডাম্পিং স্টেশনে পাঁচ কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনারবাহী পণ্য ধ্বংস সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গত সপ্তাহে পরিবেশ অধিদপ্তরকে দেওয়া এক চিঠিতে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ওইসব যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে, এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নির্ধারিত ধ্বংস কমিটির নির্বাচিত স্থানে পণ্য ধ্বংসের কার্যক্রম পরিচালনার সম্মতি দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।

 

এর আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মতিতে নগরীর দক্ষিণ হালিশহরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ডাম্পিং স্টেশনে ২৪ কনটেইনার পণ্য ধ্বংসের কাজ শুরু করে। তবে গত ১৬ মে পণ্য ধ্বংস শুরুর পর ১৮ মে পর্যন্ত সাতটি কনটেইনারের পণ্য ধ্বংস করার পর কাজ বন্ধ করে কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা।

 

এরমধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও দেখতে ভালো মানের হওয়ায় পণ্য চুরি করে বিক্রির শঙ্কা থাকায় সাতটি কনটেইনারের পণ্য ধ্বংস করেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শিপিং এজেন্ট থেকে লজিস্টিক সাপোর্ট না পাওয়ায় বন্দরের সিসিটি, এনসিটি এবং ওয়াইডি ইয়ার্ডে থাকা ১০ কনটেইনারের ২৮০ টন পচা রসুন ধ্বংস করা যায়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনার ও পণ্য ধ্বংস কমিটির সদস্য সচিব মো. আব্দুল হান্নান।

 

ওই অভিজ্ঞতার আলোকে সিটি কর্পোরেশনের ডাম্পিং স্টেশনের পণ্য ধ্বংস করতে যেসব সমস্যা পাওয়া যায় তা উল্লেখ করে গত সপ্তাহে পরিবেশ অধিদপ্তরকে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

 

কারণগুলো হলো-পরিবেশ অধিদপ্তরের ১০ এপ্রিল ২০২৩ ইং তারিখের বায়োডিগ্রেডিবল পণ্য ধ্বংস/বিনষ্টকরণের শর্ত অনুযায়ী বায়োডিগ্রেডিবল পণ্যসমূহ সিটি কর্পোরেশনের ডাম্পিং স্টেশনের ময়লার সাথে বন্দরের পণ্যগুলো মিশিয়ে ধ্বংস করতে হবে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন ওই ডাম্পিং স্টেশনে বায়োডিগ্রেডিবল পণ্যসমূহ ময়লার সাথে মিশ্রিত করে পরিত্যাজন করা প্রায় অসম্ভব।

 

এছাড়া ধ্বংসযোগ্য উপাদান কোন প্রাণী বা পশুপাখি যাতে গ্রহণ করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কিন্তু ওই জায়গা উম্মুক্ত থাকায় কোন প্রাণী বা পশুপাখিকে নিবারণ করা সম্ভব নয়।

 

পরিবেশের শর্ত অনুযায়ী টক্সিক বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোন বস্তু যাতে মাটি, ভূ-পৃষ্ঠস্থ ও ভূ-গর্ভস্থ পানি এবং বায়ুকে দূষিত করতে না পারে সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু ওই জায়গায় বায়োডিগ্রেডিবল পণ্যসমূহ গর্ত করে মাটিচাপা দেওয়া সম্ভব নয় বলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোন বস্তু মাটি, ভূ-পৃষ্ঠস্থ ও ভূ-গর্ভস্থ পানিকে এবং বায়ুকে দূষিত করার সম্ভাবনা থাকে।

 

অপর শর্ত অনুযায়ী ধ্বংস কার্যক্রম সমাপ্তির সাত দিন ওই স্থান ধ্বংসকরণের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের নিজস্ব নজরদারিতে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু ওই স্থানটি উম্মুক্ত থাকায় ও জনসাধারণের বিশেষ করে চসিকের পরিচ্ছন্নকর্মীদের অবাধ যাতায়াত থাকায় ধ্বংস কার্যক্রম সমাপ্তির পর সাতদিন ওই স্থানটিতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

 

এছাড়াও ধ্বংস কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট কনটেইনারগুলো নিয়ে ট্রেইলারসমূহের সিটি কর্পোরেশন ডাম্পিং স্টেশনে যাওয়ার জন্য প্রশস্থ রাস্তাও নেই।

 

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম কাস্টমসের পণ্য ধ্বংসের জন্য নিজস্ব জায়গা না থাকায় নগরীর দক্ষিণ হালিশহরের একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন খালি জায়গায় চুক্তি ভিত্তিতে পণ্য ধ্বংসের জন্য ব্যবহার করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে ওই জায়গায় পণ্য ধ্বংস করার পরে সম্প্রতি ঘটে কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা। এর মধ্যে পণ্য ধ্বংস করার পর মাটির নিচ থেকে পণ্য তুলে বাজারে বিক্রি ঘটনাও ঘটে। গত বছরের ৮ নভেম্বর এবং চলতি বছরের ১০ এপ্রিল এমন দুটি ঘটনার পর সতর্ক অবস্থানে গেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ফলে ওই ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গার বদলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ভাগাড়ে পণ্য ধ্বংসের জন্য সুপারিশ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে ওই জায়গা পণ্য ধ্বংসের জন্য উপযুক্ত কিনা তা নিয়েও দ্বিমত রয়েছে পণ্য ধ্বংস কমিটির সদস্যদের মধ্যে।

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট