চট্টগ্রাম শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

আগস্ট থেকে এলসিএল পণ্য ডেলিভারি বন্দরের বাইরে

নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ জুলাই, ২০২৩ | ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারির প্রচলিত প্রথা থেকে সরে আসছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ পৃথিবীর কোন দেশের বন্দরে কনটেইনার খুলে বন্দরের অভ্যন্তর হতে পণ্য ডেলিভারির নিয়ম চালু নেই। তবে চট্টগ্রাম বন্দরে শুরু থেকেই এই প্রক্রিয়ায় পণ্য ডেলিভারির প্রথা চালু রেখেছে। যা আগামী আগস্ট মাস হতে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

 

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার পণ্যবাহী কনটেইনার ডেলিভারি হয়। যার প্রায় ১০ শতাংশ পণ্য থাকে এলসিএল কনটেইনারের। প্রতিটি এলসিএল কনটেইনারে থাকে একাধিক আমদানিকারকের পণ্য। যা বন্দরের অভ্যন্তরে খুলে বিভিন্ন শেডে রাখা হয়। সেখান থেকে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে করে ডেলিভারি করা হয়। তবে আগস্ট মাস থেকে এমন এলসিএল কনটেইনার আর বন্দরের অভ্যন্তরে না খুলে বন্দরের চার নম্বর গেট থেকে ২ দশমিক ২ কিলোমিটার দূরত্বে বন্দর স্টেডিয়াম সংলগ্ন পুরাতন ‘এক্স’ এবং ‘ওয়াই’ নামের দুটি শেডে পাঠানো হবে। ওই জায়গা থেকে এলসিএল কার্গোর পণ্য খালাস হবে।

 

এরফলে চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর প্রতিদিন প্রবেশ করা ৪/৫ হাজার ট্রাক-কাভার্ডভ্যানকে আর বন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এতে মূল সড়কের ওপরে গাড়ির চাপও কমে যাবে। আর বন্দরের অভ্যন্তরের অপারেশনাল কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যাবে।

 

পাঁচ একর জমির ওপরে এক্স ও ওয়াই শেড দুটির আয়তন ১৮ হাজার ৯০৬ বর্গমিটার। বন্দরের বর্তমান ট্যারিফ অনুযায়ী এ থেকে ভাড়া আদায় করা হবে।

 

বন্দরের পরিত্যক্ত শেড দুটি সংস্কার, সড়ক ও ইয়ার্ড নির্মাণসহ পুরো কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বে-কার্গো সেন্টার। ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরুর সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কনটেইনার থেকে পণ্য খুলে ডেলিভারি দেওয়া যাবে।

 

বর্তমানে এলসিএল কার্গো খালাসে সময় লাগে ৭ দিন। এক দিনের মধ্যে কার্গো ডেলিভারি নিতে পারলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে লিড টাইম কমে যাবে। আনস্টাফিং, পণ্য ডেলিভারিসহ অন্যান্য খরচ যাতে বন্দরের বিদ্যমান ট্যারিফ অনুযায়ী হয় তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।

 

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এলসিএল কার্গো ডেলিভারি নিতে দেরি হলে ধারণক্ষমতার বেশি পণ্য জমে যেতো। শেডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বন্দর ইয়ার্ডে বিঘ্নিত হতো আনস্টাফিং, বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত পণ্য ডেলিভারি নিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায়শই চিঠি দিতো আমদানিকারক, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনকে।

 

এছাড়া, চট্টগ্রাম বন্দর ২০০৪ সাল থেকে আইএসপিএস (ইন্টারন্যাশনাল শিপ এন্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি) কোড বাস্তবায়ন করে আসছে। এই কোড বাস্তবায়নে ইউএস কোস্ট গার্ডের প্রতিনিধিদলের একাধিক পরিদর্শনে বন্দরের ডেলিভারি কার্যক্রম বন্দরের বাইরে সরানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। আইএসপিএস কোড বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আনস্টাফিং কার্যক্রম সরানোর উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

 

এ কাজের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর বে-কার্গো সেন্টারের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করে। চুক্তির পরপরই শেড দুটি সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়। একটি শেড আনস্টাফিংয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এছাড়া, সড়ক, ইয়ার্ড নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। শুরুতে প্রতিদিন ৭৫ থেকে ১০০ কনটেইনার আনস্টাফিং করে ডেলিভারি দেওয়া যাবে।

 

এদিকে শেডে আনস্টাফিং কার্যক্রম শুরু করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে বন্ড লাইসেন্সের আবেদন করে চট্টগ্রাম বন্দর। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে গত ১৪ জুন বৈঠক করে কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে মতামত পাঠাবে চট্টগ্রাম কাস্টমস।

 

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার থেকে পণ্য বের করে শেডে রাখার পর ৪ দিন ফ্রি টাইম ধরা হয়। ফ্রি টাইম পার হওয়ার পরবর্তী ৭ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন টন প্রতি ১৬ দশমিক ৭২ টাকা স্টোর রেন্ট বা ভাড়া দিতে হয় আমদানিকারকদের। ৮ম দিন থেকে ১৪ তম দিন পর্যন্ত টনপ্রতি ৪১ দশমিক ৮০ টাকা এবং পরবর্তী দিনগুলোতে প্রতিদিন ৬৬ দশমিক ৮৮ টাকা স্টোর রেন্ট দিতে হয়।

 

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে এলসিএল পণ্য সংরক্ষণের জন্য মোট ১১টি শেড রয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) ১ টি, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) ১ টি, ওভারফ্লো ইয়ার্ডে ১ টি, জেনারেল কার্গো বার্থে (জিসিবি) ৮ টি। এই এলসিএল শেডগুলোতে ১ হাজার টিইইউএস কনটেইনারের পণ্য রাখা যায়।

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট