কোভিডের কারণে গত কয়েক বছর কারাগারে বাসায় রান্না করা খাবার দিতে পারেনি স্বজনরা। এবারের ঈদ উল আজহায় কারাগারে বাসায় রান্না করা খাবার দিতে পারবে।
কর্মস্থলে থাকা লোকজন নাড়ির টানে ছুটে যায় দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। সবাই ঘরমুখো হলেও কারাগারের চার দেয়ালের বাইরে যাবার সুযোগ নেই কারাবন্দীদের। সরকারি নিয়ম-নীতির মধ্যে থেকেই ঈদে কারাবন্দীদের মুখে হাসি ফোটাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারগার কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেলসুপার মোহাম্মদ মনজুর হোসেন জানান, ঈদ উল আজহায় কারাবন্দীদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু বন্দীদের জন্য নয়। কারারক্ষীসহ কারাগারে কর্মরত সকলের জন্য ভাল খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।
জেল সুপার মনজুর জানান, পাঁচ হাজারের বেশি বন্দী কারাগারের চার দেয়ালের ভেতরে ঈদ উদযাপন করবে। ঈদে বন্দীদের সাথে দেখা করতে আসা স্বজনদের চাপ অন্য সময়ের তুলনায় বেশি থাকে। সবকিছু বিবেচনা করে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। ঈদের দিন সকালে সেমাই, পায়েস আর মুড়ি দেয়া হবে বন্দীদের। থাকবে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পান সুপারি।
কোন অপরাধ না করেও এবারে কারাগারে মায়ের সাথে ঈদ করবে ৩৮ শিশু। বিগত সময়ে সব বন্দী একসাথে ঈদের জামাতে শামিল হলেও এবারের ঈদে নিরাপত্তার কারণে ওয়ার্ডভিত্তিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। কারাগারসূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজা, মত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও হাজতি মিলে গতকাল (মঙ্গলবার) বন্দীর সংখ্যা ছিলো পাঁচ হাজারের বেশি । বিপুল সংখ্যক বন্দীর জন্য কারাগারে উন্নত খাবার রান্নার আয়োজন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন জানান, ঈদ উপলক্ষে বিশেষ রান্নার আয়োজন করা হবে কারাগারে। কারা অভ্যন্তরে থাকা ৬০টি চৌকায় (রান্নার চুলা) ৩২ কয়েদি ঈদের বিশেষ রান্নায় ব্যস্ত থাকবে। কারাগারের ভেতরে প্রতিটি ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত হবে ঈদের জামাত। দুপুরে পোলাও, গরুর মাংস, কোমল পানীয়, পান সুপারি ও সালাত সরবরাহ করা হবে। অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য খাসির মাংস সরবরাহ করা হবে। রাতে সাদাভাত, মাংস আর আলুর দম রাখা হয়েছে খাবারের তালিকায়।
করোনার কারণে গত তিন বছর স্বজনের সাথে দেখা নেই কারাবন্দীদের। গত ঈদ উল ফিতর থেকে স্বজনদের সাথে দেখা করতে পারছে বন্দীরা। যথারীতি ঈদ উল আজহায়ও বন্দীদের সাথে দেখা হবে স্বজনদের। কারাকর্তৃপক্ষ জানিয়েছে করোনার কারণে এতদিন স্বজনের সাথে বন্দীদের সাক্ষাত বন্ধ রাখা হয়েছিল। করোনায় বন্দীদের নিরাপদ রাখতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল।
সিনিয়র জেলা সুপার মঞ্জুর হোসেন জানান, স্বজনদের সাথে বন্দীদের দেখা করার সুবিধার্থে নেয়া হয়েছে বাড়তি ব্যবস্থা। কারণ একসাথে অনেক লোক দেখা করতে আসলে ভিড় হয়ে যায়। তাই ভিড়ের চাপ এড়াতে আমরা বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছি।
ঈদ উপলক্ষে লঘু অপরাধে দণ্ডিত দুই একজন আসামিকে সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি দেয়া হলেও এবারে এ ধরনের কোন আসামি মুক্তি পাচ্ছে না। কারণ যে সব লঘু অপরাধে সাধারণ ক্ষমায় বন্দী মুক্তি দেয়া হয় ওই ধরনের আসামি চট্টগ্রাম কারাগারে নেই।
বন্দী মায়ের সাথে ঈদ করবে ৩৮ শিশু: কোন অপরাধ না করেও কারাগারে বন্দী রয়েছে ৩৮শিশু। নানা অপরাধে জড়িত কারাবন্দী মায়ের সাথে শিশুরাও বন্দীজীবন যাপন করছে।
জেল সুপার জানান, বন্দী মায়ের সাথে শিশুদের ছয় বছর বয়স পর্যন্ত কারাগারে রাখা হয়। কারাগারে থাকা শিশুদের জন্য খেলাধুলা ও পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে। ছয় বছর বয়স পার হলেও তাদেরকে সমাজ সেবার আওতাধীন বিভিন্ন শিশু সদনে পাঠানো হয়।
পূর্বকোণ/এসি