চট্টগ্রাম সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

পাউবোর ৪০০ কোটি টাকার জমি প্রভাবশালীদের পেটে
ফাইল ছবি

পাউবোর ৪০০ কোটি টাকার জমি প্রভাবশালীদের পেটে

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১২ জুলাই, ২০২৫ | ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ

নগরের কাট্টলী ও হালিশহর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩২ একর জমি দীর্ঘদিন ধরে গিলে খাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। দখলদারের তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি, মেয়র ও একাধিক কাউন্সিলর। দখল করা জমিতে ঘর, কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, গ্যারেজ, হোটেলসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। দখল হওয়া জমির বাজারমূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বলে জানায় পাউবো।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পওর ১) নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ পূর্বকোণকে বলেন, শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করতে ১৯৭০ সালে ২ হাজার ৬৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। বাঁধ-কাম সড়ক নির্মাণের পর অধিকাংশ জায়গা অব্যবহৃত রয়ে যায়। পরবর্তীকালে প্রভাবশালী ক্ষমতার অপব্যবহার করে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে। অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করা হবে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড অবৈধ ৩৯ দখলদার চিহ্নিত করেছে। এরমধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য দিদারুল আলম, সাবেক মেয়র মনজুর আলম, চসিকের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা নিছার উদ্দিন আহমদ নেছার, যমুনা গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজ, সাবেক কাউন্সিলর আবুল হাসেমসহ আরও অনেকে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, দখলদারের তালিকায় বিএনপি নেতাও রয়েছেন।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, হালিশহর, পাহাড়তলী, উত্তর হালিশহর, দক্ষিণ কাট্টলী, উত্তর কাট্টলী মৌজায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে কাভার্ডভ্যান, ইয়ার্ড, রেস্টুরেন্ট, গ্যারেজ ও ডেইরি ফার্মসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। কাল রবিবার থেকে টানা তিনদিন ধরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসন তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছেন। সেনাবাহিনী, পুলিশসহ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

 

কার কাছে কী পরিমাণ দখল : পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় দেখা যায়, সাবেক এমপি দিদারুল আলমের ৭ একর জায়গা দখলে রয়েছে। এতে কাভার্ডভ্যান ও গাড়ির ব্যবসা চলছে। সাবেক মেয়র মনজুর আলমের কাছে ৪ একর জায়গা দখলে রয়েছে। এতে কাভার্ডভ্যান, মিনি স্টেডিয়ামসহ নানা ব্যবসা রয়েছে। সাবেক কাউন্সিলর নিছার আহমদের ভাড়াটিয়া আরিফুর রহমান দশমিক ৪১ একর জায়গায় দখল করে কাভার্ডভ্যান, ইয়ার্ড বানানো হয়েছে। এছাড়াও এরশাদ উদ্দিন ২ একর জায়গা দখল করে ১২টি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। গোলাপুর রহমানে দখলে রয়েছে ২ একর। তাতে কাভার্ডভ্যান ও গাড়ির ব্যবসা রয়েছে। মুনছুর মিস্ত্রি কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমদের কাছ থেকে দশমিক ৪১ একর জায়গা নিয়ে কাভার্ডভ্যান ও গাড়ির ব্যবসা করছেন। নিছারের আরেক ভাড়াটিয়া আরিফুর রহমান রুবেলের কাছে দশমিক ৩৮ একর আরেকটি জায়গা কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড রয়েছে। আরেক ভাড়াটিয়া আবদুল মমিনের কাছে দশমিক ৫৪ একর জায়গা দখলে রয়েছে। তাতেও কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড রয়েছে। আকবর সিদ্দিক চৌধুরীর ভাড়াটিয়া জসিম উদ্দিনের কাছে দশমিক ৪৯ একর জায়গায় রয়েছে স্কেভেটর ইয়ার্ড। হুমায়ুন কবিরের দখলে রয়েছে দশমিক ৫০ একর জায়গা। তাতে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড রয়েছে।

 

যমুনা গ্রুপ দশমিক ৪৯ একর জায়গা দখল করে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড নির্মাণ করেছে। নুরুল হুদা চৌধুরী ৭ একর দখল করে কাভার্ডভ্যান, সাবেক মেয়র মনজুর আলমের প্রতিষ্ঠান ৪ একর জমি দখল করে মিনি স্টেডিয়াম ও ইয়ার্ড ব্যবসা করছেন। সাবেক এমপি দিদারুল আলম ৭ একর দখলে করে কাভার্ড ভ্যান ইয়ার্ড নির্মাণ করেছে। আরাফাত হোসেনের দশমিক ২৫ একরে রয়েছে কাভার্ডভ্যান ও গাড়ির ব্যবসা। মেসার্স আইরিন নামে প্রতিষ্ঠান দশমিক ৪৫ একর দখল করে কাভার্ডভ্যান ও গাড়ির ব্যবসা করছে। জাহাঙ্গীর ও মীর আহমদ ২ একরে নির্মাণ করেছেন হোটেল সী মারমিড। মো. জুয়েল দশমিক ৪৫ একরে গাড়ির গ্যারেজ করেছেন। কোরবান আলী দেড় একরে গাড়ি গ্যারেজ ও ডেভেপমেন্ট ব্যবসা করছেন। সাবেক কাউন্সিলর মঞ্জু দশমিক ৮৫ একরে গাড়ির গ্যারেজ ও অন্য ব্যবসা করছেন। দশমিক ২৮ একরে গাড়ির গ্যারেজ করেছেন মোহাম্মদ আলী। লিটন মিয়ার দশমিক ৭৩ একরে রয়েছে গাড়ির গ্যারেজ। ইলিয়াছ মিস্ত্রি দশমিক ১০ একরে রয়েছে গাড়ির গ্যারেজ। জাকের মিস্ত্রির কাছে দশমিক ১৩ একরে রয়েছে ফোর বি কম্পিউটার ও অন্যান্য ব্যবসা।

 

 

আবদুল জলিলের কাছ থেকে দেড় একর জায়গা নিয়ে গাড়ির ব্যবসা করছেন যমুনা গ্রুপ। জামাল আহম্মদের দশমিক ১৩ একরে রয়েছে কাভার্ডভ্যান। মো. রনির দশমিক ১৫ একরে রয়েছে গাড়ির গ্যারেজ। তার ভাই মো. জনির কাছে দশমিক ১৮ একরে রয়েছে গাড়ির গ্যারেজ, ট্রলি-কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড ও স্থায়ী অবকাঠামো। মো. নাছিরের দশমিক ৭১৫০ একরে রয়েছে গাড়ির গ্যারেজ। জানে আলম বুলুর দশমিক ৫৫ একরে রয়েছে আধাপাকা টিনশেড ঘর। মো. হোসেনের দশমিক ৪৮ একরে রয়েছে গাড়ির গ্যারেজ। মো. মনিরের দশমিক ৩২ একরে রয়েছে স্কেভেটর মেশিন, ক্রেন, ও ওয়ার্কশপ। সাবেক কাউন্সিলর আবুল হাসেমের দশমিক ১৬ একরে রয়েছে ট্রলি ও গাড়ির গ্যারেজ। মো. ওয়াহিদের কাছে দশমিক ৪৫ একরে রয়েছে ট্রলি ও গাড়ির গ্যারেজ। মো. শাহজাহান দশমিক ১৩ একরে নির্মাণ করেছেন এ আর হোটেল। নিজাম উদ্দিন মামুন দশমিক ১৮ একরে গাড়ির গ্যারেজ করেছেন। ওয়াহিদ দশমিক ৬৮ একরে করেছেন ট্রলি ও গাড়ির গ্যারেজ। ওমর ফারুক ১ দশমিক ৪১ একরে করেছেন ডেইরি ফার্ম ও আধাপাকা শেডের ট্রলি-গাড়ির গ্যারেজ। মিজানুর রহমান দশমিক ২০ একরে করেছেন ডেইরি খামার ও আধাপাকা শেড ট্রলি-গাড়ির গ্যারেজ। মো. কামরুজ্জামান দশমিক ২২ একরে ডেইরি ফার্ম করেছেন।

 

পাউবো জানায়, ৩৯ প্রভাবশালীর কাছে হালিশহর ও পাহাড়তলী এলাকার প্রায় ৩২ একর জায়গা দখলে রয়েছে। যার বর্তমান বাজার দর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। গত ১৬ বছর ধরে এসব জায়গা দখল করে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, ডিপো, ডেইরি ফার্ম, গাড়ির গ্যারেজ, হোটেল, ভাড়া ঘরসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা আদায় করছেন প্রভাবশালীরা। তবে স্থানীয়রা জানান, দখলদারদের অনেকেই দখলস্বত্ব বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট