চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে ডিসি পার্কে ফুল উৎসবে শুক্রবার একদিনেই লাখো দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে। এদিন দুপুর থেকে ভিড় এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে তা সামাল দিতে জেলা প্রশাসন ও পার্কের কর্নকর্তা কর্মচারীদের গলদঘর্ম অবস্থা। প্রবেশ পথে টিকিট কিনেও দীর্ঘ সময় লাগায় অসংখ্য দর্শনার্থী দেয়াল টপকে ঢুকতে শুরু করে। এসময় বাধা দিলে কর্মীদের উপরও হামলা চালায় তারা।
এ অবস্থায় আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠে সন্ধ্যার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হলে। দর্শকরা চেয়ারের উপরে উঠে নাচতে থাকে। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ অমান্য উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করে তারা। বাধ্য হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে দর্শকদের চলে যেতে অনুরোধ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ার ভাঙচুর করে তারা। পরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে সিকিউরিটি গার্ডরা দর্শকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করলে দর্শকরা ফিরে যেতে থাকেন। এদিন সন্ধ্যায় সরেজমিনে ডিসি পার্কে গিয়ে এসব দৃশ্য দেখা যায়।
এদিন ঢাকা থেকে স্বপরিবারে ডিসি পার্কে ফুল উৎসব উপভোগ করতে আসেন সীতাকুণ্ডের সাবেক ইউএনও ও (বর্তমান এডিসি) নাজমুল ইসলাম ভূইয়া। তিনি বলেন, ডিসি পার্কের আশপাশে বেশ কয়েক কিলোমিটার এলাকা ছিলো দর্শনার্থীদের ব্যবহৃত গাড়ি ও হাজার হাজার দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ। বহু কষ্টে পার্কে প্রবেশ করে বিস্নিত, এত দর্শনার্থী! সন্ধ্যায় এখানে পৌঁছে রাতের পরিবেশ খুব ভালো লেগেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, দিনের ফুল উৎসব দেখতে কাল (শনিবার) আবার আসব এখানে।
পরিদর্শনকালে সীতাকুণ্ড থেকে আসা এক দর্শনার্থী রিগান দাশ বলেন, আজ এত ভিড় যে একা হাঁটাও কঠিন হয়ে পড়ে। লাখো মানুষ উৎসব এলাকায়! ভালো করে একটা ছবিও তোলা যাচ্ছিল না। এদিকে পরিদর্শনকালে দেখা যায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে যখন মাস ব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে রাউজান উপজেলার অনুষ্ঠান চলছিলো তখন দর্শকরা অতিথিদের বসার স্থানসহ মঞ্চের আশপাশ দখল করে উচ্ছৃঙ্খলতা শুরু করে। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মীরা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে একে একে মঞ্চে আসেন সিকিউরিটি ইনচার্জ নজরুল ইসলাম, সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও জেলা প্রশাসনের ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আলাউদ্দিন। তারা বারবার মাইকিং করে অতিথিদের নির্ধারিত স্থান ও মঞ্চের নির্দ্বিষ্ট এলাকা থেকে তাদেরকে সরে যাবার জন্য অনুরোধ করলেও দর্শকরা কর্ণপাত করছিলো না। বাধ্য হয়ে আজকের জন্য অনুষ্ঠান বন্ধ বলে ঘোষণা দেন তারা। এরপর দর্শকরা সরে গিয়ে অনুষ্ঠান স্থল কিছুটা ফাঁকা হলে রাত সাড়ে ৮টার দিকে জেলা থেকে আসা অন্য একটি সাংস্কৃতিক দল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পুনরায় শুরু করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্কের এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, এত ভিড় হবে কল্পনাও করিনি। দর্শকরা গেট বাদ দিয়ে অন্য পথে ঢুকতে শুরু করে। বাধা দেয়ায় মেরে আমার নাক মুখ ব্যথা করে দিয়েছে। বহু লোক ঠেলে ভেতরে চলে এসেছে টিকিট ছাড়া।
উৎসব তদারকির দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলাউদ্দিন বলেন, আজ একদিনেই লক্ষাধিক দর্শনার্থী এসেছে। পার্কের ধারন ক্ষমতা আছে ৩৫-৪০ হাজার। এসেছে দ্বিগুনেরও বেশি। ফলে ভিড় কোনমতেই সামলানো যাচ্ছিল না। কিছু দর্শনার্থী অনুষ্ঠানে বেসামাল আচরণ করায় বেশ কিছুক্ষন অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়। এরপর আবার শুরু করি।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ