ওমানের রাজধানী মাস্কাটের একটি দোকানে কাজ করেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা মো. সোলেমান। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর গত শুক্রবার সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে ফিরেন তিনি।
বিমান থেকে নেমে আনুষ্ঠানিকতা সেরে লাগেজ বেল্টে গিয়ে দেখেন তার লাগেজ আগেই চলে এসেছে। ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই লাগেজ হাতে পেয়ে খুশি এ প্রবাসী। সোলেমান লাগেজ হাতে পাওয়ার ঠিক ৪৫ মিনিট পর আবুধাবি থেকে বিমানের অন্য আরেকটি ফ্লাইটে একই বিমানবন্দর দিয়ে দেশে ফেরেন ফেনী জেলার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন। তিনিও ইমিগ্রেশনসহ বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে লাগেজ বেল্টে আসা মাত্রই পেয়ে যান তার লাগেজটি। তাদের দু’জনের অভিজ্ঞতা ছিল একই।
আমজাদ হোসেন বলেন, সবসময় চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত হয়। এখানে বড় সমস্যা ছিল লাগেজ বিড়ম্বনা। আগে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু এবার সত্যিই ভালো লেগেছে। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই লাগেজ হাতে পেয়েছি। আগের চেয়ে সেবার মানও অনেক উন্নত হয়েছে। বিমানবন্দরের পরিবেশেও বেশ পরিবর্তন এসেছে। শুধু আমজাদ কিংবা সোলেমানের ক্ষেত্রেই নয়। বর্তমানে দ্রুত সময়ের মধ্যেই লাগেজ পাচ্ছেন চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অন্যান্য যাত্রীরাও। শুধু লাগেজ পাওয়ার পরিবর্তন হয়নি, দৃশ্যমান পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক এ বিমানবন্দরে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর চিত্র বদলেছে। অবসান হয়েছে সব ভোগান্তির। পরিবর্তনের ছোঁয়ায় কমেছে যাত্রী ভোগান্তি। বেড়েছে যাত্রীসেবার মানও। ইমিগ্রেশনসহ নানা সেবাখাতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। যাতে খুশি যাত্রীরা। অথচ নতুন কোন যন্ত্র কিংবা নতুন করে কোন লোকবলের নিয়োগ দেয়া হয়নি। বদলেছে শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনা। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিমানবন্দরে যথাযথ যাত্রীসেবা দেয়া হচ্ছে। যাত্রীসেবায় কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, এ বিষয়ে নেয়া হচ্ছে পরামর্শ। নিয়মিত নজরদারির পাশাপাশি নিরাপত্তায় জোর দেয়ায় যাত্রীদের সেবার মানে এমন পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। যাত্রীসেবার এমন পরিবর্তন সামনেও অব্যাহত থাকবে এমন আশা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর বলেন, বিমানবন্দরে যাত্রীসেবায় যে পরিবর্তন লেগেছে, তা যেন অব্যাহত থাকে। সেজন্য প্রায় প্রতিদিনই বিমানবন্দর পরিদর্শন করছি। কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলছি। এছাড়াও কোন কোন জায়গায় সমস্যা আছে, তা চিহ্নিত করে প্রত্যেকটি জায়গায় সমাধানের চেষ্টা করছি। যাত্রীরা যেন ভালো ও সুন্দর সেবা পান সে বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। একসময় লাগেজ পেতে কিছুটা বিড়ম্বনার শিকার হলেও এখন আর সেই চিত্র নেই। বর্তমান সেবায় যে পরিবর্তন এসেছে তা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদী।
খবর নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর বিশেষ টাস্কফোর্স ও বিমাবন্দরের নিরাপত্তা শাখার সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ একটি টিমের নেতৃত্বে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর পুরো বিমানবন্দরে তল্লাশির পাশাপাশি নিরাপত্তা টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও যাত্রীদের সেবা নিশ্চিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিমানবন্দরের এপ্রোন এরিয়ায় প্রবেশের ৪ নম্বর গেট, রাডার স্টেশন, ভিওআর, ট্রান্সমিটিং স্টেশন, পাওয়ার হাউস, জিপি-লোকারাইজার স্টেশন এই পয়েন্টগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দুই ধরনের ব্যবস্থার মাধ্যমে নজরদারির পাশাপাশি নিরাপত্তায় জোর দেয়া হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় প্রধান এই বিমানবন্দরকে।
যাত্রীসেবা নিশ্চিতে বিমান বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ সদস্য কাজ করছেন বলে জানান শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল। তিনি জানান, বিশেষ নিরাপত্তায় ট্রাস্কফোর্সে বর্তমানে ১৮১ জন বিমান বাহিনীর সদস্য কাজ করছেন। পাশাপাশি বিমানবন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা শাখার ১৩৬ জন কাজ করছে। এছাড়া নতুন করে দুইশ’ আনসার সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োগ করা হয়েছে। তাদেরকেও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নিয়োজিত করা হবে।
পূর্বকোণ/ইব