চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে গত বৃহস্পতিবার দুটি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনার পর কলেজটিতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ঘোষণা দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম কলেজ প্রাঙ্গনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কলেজটির শিক্ষার্থীরা।
দাবির মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম কলেজ কর্তৃপক্ষকে দাপ্তরিকভাবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত শহীদ ওয়াসিমের নামে কলেজের কোনো বিশেষ স্থাপনার নামকরণ এবং তার পরিবারের পুনর্বাসনে কলেজ প্রশাসনের ভূমিকা রাখা, দ্রুত হল সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করা, যারা পতিত স্বৈরাচারের অপকর্মের সাথে জড়িত এবং জুলাই বিপ্লবে যেসব শিক্ষার্থী নির্যাতনকারী হিসেবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা এবং শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ জুলাই বিপ্লবে ক্ষতিগ্রস্ত, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার কলেজ প্রশাসন কর্তৃক বহন করা।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক ও কলেজটির শিক্ষার্থী ইবনে হোসাইন জিয়াদ বলেন, শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করেছিলো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম আমাদের অধিকার ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে, যা আমরা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করি।
৫ আগস্ট চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে চিকা মারার ঘটনা ঘটে, যা ক্যাম্পাসে রাজনীতিমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার নিয়মের সরাসরি লঙ্ঘন। যা আমরা মুছে দিয়ে বিভিন্ন গ্রাফিতি আঁকার ব্যবস্থা করেছি। এরপর থেকে এই পর্যন্ত বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন নামে, বেনামে সক্রিয় কার্যক্রম চালাতে চেষ্টা করে যা আমাদের জন্য খুবই আশঙ্কার বিষয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩টায়, একটি ছাত্রসংগঠনের কয়েকজন নেতৃবৃন্দ অধ্যক্ষের সাথে সাক্ষাৎ করার পর ক্যাম্পাসের বাইরে তাদের মধ্যে সমস্যা হওয়া কথা আমরা জানতে পেরেছি। এভাবে বারবার ছাত্ররাজনীতি চালু করার চেষ্টা সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জুলাই বিপ্লবের মূল হাতিয়ার ৯ দফার অন্যতম দাবি ছিলো ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা, এবং এই নীতি আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখতে অপরিহার্য। আমরা, চট্টগ্রাম কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা, ছাত্রদের অধিকার সংরক্ষণে ছাত্রসংসদভিত্তিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি। দলীয় রাজনীতির অপব্যবহার ও সহিংসতা আমাদের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছে, যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্রসংসদ হবে একটি নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে দলীয় রাজনীতির প্রভাব ছাড়াই শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার ও সমস্যার সমাধানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারবে। আমাদের এই দাবিগুলো কলেজ প্রশাসনের কাছে বহুবার উত্থাপনের পরেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় আমরা কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়েছি। আমরা একটি নিরাপদ, নিরপেক্ষ ও রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি, যেখানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে- এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ছাত্ররাজনীতি বন্ধের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আমাদের ভবিষ্যৎ এবং শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় আমাদের দাবিসমূহ মেনে নিন।
সকল ছাত্রসংগঠন ও ছাত্রনেতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং চাওয়াকে অগ্রাধিকার দিন। আমাদের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ক্যাম্পাসের পরিবেশ রক্ষায় আপনারা অবদান রাখবেন-এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আশা করছি আপনাদের দলীয় কোনো কার্যক্রম থেকে ক্যাম্পাসকে মুক্ত রাখবেন। আমাদের কোনো স্বার্থবাদী চিন্তা ও কর্মের কারণে যেনো ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত হামিম আব্দুল্লাহ মতিউর, সাকিবুল ইসলাম শিবলু, লুবাবা, উমামা, তানভীর প্রমুখ।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ