চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

আমিরাতে হয়রানির শঙ্কায় ১৪ লাখ বাংলাদেশি

মোহাম্মদ আলী

২৫ জুলাই, ২০২৪ | ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত ১৪ লাখ বাংলাদেশি ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছেন। এমনকি ভিসাসহ নানামুখী হয়রানিরও আশঙ্কা করছেন প্রবাসীরা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইন অমান্য করে গুটিকয়েক বাংলাদেশি সেদেশে বিক্ষোভ করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশিদের জন্য সাময়িকভাবে ভিসা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। বিভিন্ন তথ্যে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) আরব আমিরাতের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ওই বিক্ষোভের দায়ে ২২ জুলাই (সোমবার) ৫৭ বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে ইউএই সরকার। এর একদিন পরই গত ২৩ জুলাই (মঙ্গলবার) বাংলাদেশিদের জন্য সাময়িকভাবে ভিসা বন্ধের ঘোষণা দেয় দেশটি।

 

এদিকে, ভিসা বন্ধের ব্যাপারে জানতে চাইলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি কামরুল হাসান জনি দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, গুটিকয়েক বাংলাদেশির জন্য আমিরাতে পুরো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সেখানে বসবাসরত ১৪ লাখ বাংলাদেশি এ নিয়ে ভিসা নবায়নসহ নানা সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এটি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথা এটা নিয়ে নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হতে পারে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র (বিএমইটি) উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে, সে ধরনের কোন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সরকার এখনও পায়নি। লিখিত সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর সরকার এ ব্যাপারে জোরালোভাবে কাজ করবে।

 

বিদেশে যাওয়ার আগে প্রবাসীদের কোন ট্রেনিং কিংবা কর্মশালা করা হয় কিনা- এমন এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, নতুন কোন বাংলাদেশি বিদেশে গেলে প্রথমে তাকে বিএমইটি’র পক্ষ থেকে তিনদিনের অরিয়েন্টেশন ক্লাস করানো হয়। ওই ক্লাসে প্রবাসী যেদেশে যাবে তাকে সংশ্লিষ্ট দেশের আইনকানুন, বিধিনিষেধ, সংস্কৃতি, আবহাওয়া ও খাওয়াদাওয়া নিয়েও অবহিত করা হয়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহের রাজতন্ত্র নিয়েও জানানো হয়। যাতে তারা ওই দেশের নিয়মকানুন কোনভাবেই ব্যত্যয় না ঘটায়।

 

উল্লেখ্য, আরব আমিরাতে বিক্ষোভের দায়ে কারাদণ্ড পাওয়া ৫৭ বাংলাদেশির মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৫৩ বাংলাদেশির ১০ বছর করে এবং একজনের ১১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডব্লিউএএমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে গত ১৯ জুলাই ইউএই’র বিভিন্ন সড়কে নেমে আন্দোলন করেন দেশটিতে কর্মরত গুটিকয়েক বাংলাদেশি। এ সময় তারা বিক্ষোভের পাশাপাশি দাঙ্গা-হাঙ্গামায় জড়ায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেয়া এসব বাংলাদেশির সাজার মেয়াদ শেষ হলে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।

 

ইউএইতে বিদেশি শ্রমিকের উৎস দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তৃতীয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের আগে রয়েছে শুধু ভারত ও পাকিস্তান। আর মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের গন্তব্য হিসেবে ইউএই’র অবস্থান দ্বিতীয়। উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে বিক্ষোভ, শাসক দলের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ, সমালোচনা বা কোন বক্তৃতা দেয়ার ক্ষেত্রে আইনি বিধিনিষেধ রয়েছে। এছাড়া সামাজিক অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং এসব কাজে উৎসাহ দেয়া এমনকি ব্যক্তিগতভাবে অথবা প্রকাশ্যে মানহানি বা অপমানজনক বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রেও বড়ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট