হাজারো ফুল সৌরভ ছড়াচ্ছে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট ডিসি পার্কে। দ্বিতীবারের মতো আয়োজিত মাসব্যাপী মনজুড়ানো বর্ণিল ফুল উৎসব সৌন্দর্য ও প্রকৃতিপ্রেমীর আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। একসময় মাদকের আখড়ায় পরিণত হওয়া এই পার্ক চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টায় চট্টগ্রামবাসীর নির্মল পরিবেশ ও স্বস্থির বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বিস্তীর্ণ জলরাশি আর তার পাড় ঘেষেই ফুলের সাম্রাজ্য। পার্কে টিউলিপ থেকে শুরু করে দেশীয় গাঁদা, লাল, নীল, হলুদ বর্ণের ডালিয়া ছাড়াও আছে নানা বর্ণের মেরিগোল্ড, চন্দ্রমল্লিকার মতো রঙ-বেরঙের প্রায় ১২০ প্রজাতির অসংখ্য ফুল স্থান পেয়েছে।
জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের উদ্যোগে সরকারিভাবে জেলা পর্যায়ে দেশে প্রথমবারের মতো এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটি, ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার, অলিয়ন্স ফ্রঁসেস দ্যি চিটাগাং-এর সহযোগিতায় উদযাপিত হতে যাচ্ছে মাল্টিকালচারাল উৎসব। বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশ তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরবে এই ফেস্টিভ্যালে।
দুই দিনব্যাপী বর্ণিল এই ফুল উৎসবের প্রথম দিনে ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। মন্ত্রী পুরো পার্ক ও বোট এক্সিবিশন ঘুরে ঘুরে দেখেন। এরপর বিকাল ৫টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বিদেশি স্টলসমূহ পরিদর্শন করেন তিনি।
বক্তব্যকালে তিনি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এই জেলা প্রশাসকের সাহসী পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে প্রায় ২০০ একর মাদকের অভয়ারণ্য খ্যাত জায়গায় এই ধরনের ফুলের পার্ক এবং ফুল উৎসব চট্টগ্রামবাসীর জন্য এক বিরাট উপহার এবং এই ডিসি পার্ক ও ফুল উৎসবে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের জনসমাগম এর গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু তা প্রকাশ করে এবং চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে তিনি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানান। এছাড়াও এর ধারাবাহিকতা রক্ষায় চট্টগ্রামবাসীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণকে এগিয়ে আসার ও এই ধরনের আরো উৎসব আয়োজনে সকলকে আহবান জানান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসির প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম ও ভারতীয় হাই কমিশনার ড. রাজীব রঞ্জন।
মাল্টিকালচারাল উৎসবের দ্বিতীয় দিনে গতকাল ১১ ফেব্রুয়ারি উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব খায়রুল আলম শেখ। তিনি পুরো আয়োজনের অত্যন্ত প্রশংসা করেন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন কুমিল্লা জেলার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো বাঙালির সাংস্কৃতিক চর্চাকে বিকশিত করার পাশাপাশি প্রকৃতির বিষয়েও সচেতন করে। চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যকে উপজীব্য করেই সাজানো হয়েছে অনুষঙ্গগুলো। জনসাধারণের অংশগ্রহণ এই ফুল উৎসবকে আরো প্রাণবন্ত ও মুখরিত করে তুলবে।
মাসব্যাপী এই ফুল উৎসবে ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল থেকেই সরব ছিল উৎসব প্রাঙ্গণ। সকাল থেকেই নিয়মিত অনুষ্ঠান সূচির পাশাপাশি চোখ জুড়ানো চিত্রকলা প্রদশর্নী, শত বছরের নৌকা প্রদশর্নী, সাম্পান প্রতিযোগিতা, মন জুড়ানো ভায়োলিন শো, ঘুড়ি উৎসব, পাপেট শো, বাঙালি পিঠা উৎসব, বইমেলা ইত্যাদি এই ফুল উৎসবের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ফুলের সুবাসে সড়কের চিত্রই যেন ভিন্ন রুপে পাল্টে গেছে। সড়কে এখন হরেক রকমের ফুলের সমাহার।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি শুরু হওয়া ফুল উৎসব চলবে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
পূর্বকোণ/পিআর/এসি