চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

‘স্যোশাল মিডিয়ায় ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তি প্রতিরোধে অংশীজনদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ’

অনলাইন ডেস্ক

১০ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ১:৫৪ অপরাহ্ণ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তি প্রতিরোধে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ, পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে চট্টগ্রামের এক মতবিনিময় সভায় উঠে এসেছে।

শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) নগরীর হোটেল সৈকতে দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট আয়োজিত মতবিনিময় সভায় শিক্ষক, ইমাম, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মী, শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. সাদি উর রহিম জাদিদ বলেন, গুজব সারাবিশ্বেই একটা প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়। অনেক আগে থেকেই এটা আছে। নগরবাসীর সাক্ষরতা বেশি হলেও অন্য এলাকায় কম। তাই গুজব নিয়ন্ত্রণ কঠিন। ধর্মীয় বিষয় নিয়ে উস্কানির শুরু সুনামগঞ্জের শাল্লা থেকে। এসব বিষয় নিয়ে সরকার অনেক তৎপর। একদম তৃণমূল থেকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে পুরোপুরি এ ধরণের ঘটনা থামানো যায়নি। আসলে প্রতিরোধমূলক নয় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি যারা ইনফ্লুয়েন্সার আছেন তাদের ভূমিকাও দরকার। অভিভাবকদের মিস ইনফরমেশন ব্যবহারে সন্তানদের ব্যবহার প্রবণতাও আছে। এটা বন্ধ করতে হবে। ফ্রি ল্যান্সারদেরও আমরা সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেছি। শিশু কিশোরদের প্রযুক্তি থেকে দূরে রাখা আমাদের লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে কতক্ষণ, কোন কনটেন্ট দেখবে সেটা নির্ধারণ করা যেতে পারে।

সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত (অব.) এম. হুমায়ুন কবির বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিবর্তনশীল সমাজে নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি করছে। একটা প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে যাদের জীবনের সাথে ওতপ্রতোভাবে জড়িত-প্রযুক্তি। অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। যা প্রচলিত মূল্যবোধ, প্রতিষ্ঠান ও জীবন পদ্ধতিকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করে দিচ্ছে। সমাজের মাল্টিপ্লায়ারদের এ বিষয়ে সচেতন করতে চাই। যাতে সুযোগগুলোকে আমরা গ্রহণ করতে পারি। চট্টগ্রাম, খুলনা ও রংপুরে পাইলট প্রকল্প করছি। বাংলাদেশ এন্ট্রপ্রাইজ ইনস্টিটিউট- গণতন্ত্র, ডিজিটালাইজেশন ও টেকসই অগ্রগতি নিয়ে কাজ করছি। ডিজিটালািজেশনে সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে, অনেক আইন করেছে। যাদের জন্য করছে তারা কতটা উপকৃত হচ্ছে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। প্রযুক্তি সাক্ষরতা, ডিজিটাল সিকিউরিটি- নিরাপদভাবে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছি কিনা আর ডিজিটাল বিভাজিত দুই প্রজন্ম। যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন তারা সকলে প্রবীন আর যারা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তারা সকলে নবীন। তাই এ দূরত্ব মেটাতে হবে। দুই দিকের প্রেক্ষাপট যেনে একটা কমন গ্রাউন্ড তৈরি করতে হবে। খুব দ্রুতই পৃথিবী বদলে যাবে। নতুন প্রজন্ম অলরেডি ডিজিটালাইজড হয়ে গেছে। সরকারের পাশাপাশি সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিনবোধী ভিক্ষু বলেন, মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। একে অন্যের প্রতি সম্মান, আন্তরিকতা ও বিশ্বাস থাকতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে কি করব সেটা ঠিক করতে হবে। একে অন্যের ক্ষতি নয়।

কবি সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, বিষয়টা একজন প্রশিক্ষিত মানুষের হাতে অস্ত্র থাকার মত এবং ডাকাতের হাতে অস্ত্র থাকার মত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য প্রচার দেখার কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অপরাধের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। মানব সভ্যতায় আমরা এরকম অনেক সংকট কাটিয়ে উঠেছি। এখন সমাজে রাষ্ট্রে যে এই নেতিবাচক প্রভাব বন্ধে আলোচনা হচ্ছে সেটাই শুভ। আশাকরি ফল আসবে।

কাউন্সিলর শহীদুল আলম বলেন, পরিবারে মায়ের কাছ থেকেই পাপ-পূণ্য বোধের শিক্ষা আমরা পেয়েছিলাম। ১৯৭১-এর আগে যে দেশ চেতনা আমাদের ছিল, তা কি আজ আছে? অনেক কিছুতেই এগিয়েছি। কিন্তু কোথায় যেন বড় গ্যাপ হচ্ছে। আস্থা-বিশ্বাসে ঘাটতি হচ্ছে পরস্পরে। তারপর অশুভ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে গুজবে ভর করছি। এতে সামগ্রিক অর্জন নিয়ে আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। ইমাম, ধর্মীয় শিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে যেন কেউ কারো বিরুদ্ধে কোনো ভুল তথ্য প্রচার না করে।

জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, প্রতিবাদ করতে আমাদের শিখতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়টি খুব জরুরি। সামাজিক নিরাপত্তা নেই বলেই অনেকে সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমরা যে যার নিজের কথাই আসলে ভাবি। মুখ থেকে বলার জন্য অনেক কিছু বলি। মন থেকে বলি না। পুরনোরা নয় নতুনরাই বাংলাদেশ। নতুন প্রজন্ম জেগে উঠলেই বাংলাদেশ সমৃদ্ধ। নয়ত সব সমৃদ্ধি তলানিতে গিয়ে পৌঁছবে। স্কুল থেকে সচেতনতা শুরু করতে হবে। নীতিবোধ যত বেশি জাগ্রত হবে তত সংকট কমবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের গবেষণা সহকারী ইফতেখার হাসান মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আলোচনায় অংশ নেন আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান, অধ্যক্ষ সৈয়দ মো. আবু ছালেহ, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের প্রধান নির্বাহী উৎপল বড়ুয়া, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ইকবাল বাহার সাবেরী, যুগান্তর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক সাঈদুল আরেফীন, অধ্যাপিকা সালমা আহসান, প্রধান শিক্ষক টিংকু ভৌমিক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের শরৎ জ্যোতি চাকমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহবুব এ রহমান, ফারজানাসহ অনেকে।

পূর্বকোণ/পিআর/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট