চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মহামারী নিয়ন্ত্রণে ইসলামের নির্দেশনা

ইবরাহীম আদদুয়ী

২২ মার্চ, ২০২০ | ৭:৫৫ অপরাহ্ণ

কোনো যুগই মহামারী কিংবা বিভিন্ন রোগব্যাধি হতে মুক্ত নয়। বরং এগুলো সর্বযুগে নানা আকৃতি ও বিভিন্ন পন্থায় ছড়ায়। কিন্তু ইসলামী মানহাজ যার গবেষণা পুরো জীবনকে আবৃত করে নিয়েছে বিভিন্ন সমস্যা ও নানা ইস্যুর সমাধানে তার দুটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একটি হলো দুই ওহি তথা কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক আর অন্যটি সাধারণ বিষয়াবলির সমাধান কল্পে সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছে শরণাপন্ন হওয়া। যেমন আল্লাহর বাণী, ‘সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর যদি না জান।’ (সুরা নাহল : ৪৩)

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে, যার প্রভাবে একটি গ্রহ প্রায় বিধ্বস্ত, এখন যে প্রশ্ন সামনে চলে আসছে তা হলো- ইসলাম কী ইতোপূর্বে এমন মহামারীর মুখোমুখি হয়েছে? এমন কী কোনো গাইডলাইন রয়েছে যার মাধ্যমে ইসলাম তার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে উৎসাহিত করেছে? ইসলামে সরাসরি কোনো দলিল রয়েছে যা এ ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছে?

শুরুতে আমরা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নিচ্ছি যে, এ ধরনের বিপদাপদ আসমানী নিদর্শন, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ করে দেয়া এবং উপদেশ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। যেমনটি আল্লাহ বলছেন, ‘আমি তো শুধু ভয় দেখানোর জন্যই নিদর্শন পাঠিয়ে থাকি।’ (সুরা ইসরা : ৫৯)। এর মাধ্যমে পাপী ভয় পায় এবং তওবা করে; আর মুমিন ব্যক্তি ভয় পেয়ে তার ঈমান ও বিশ্বাস দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পায়।

মুসলিম শরিফে এসেছে- আমির ইবনু সাদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাসকে (রা.) প্লেগ (রোগ) সম্পর্কে প্রশ্ন করলে উসামাহ ইবনে যায়দ (রা.) বললেন, আমি সে ব্যাপারে তোমাকে সংবাদ দিচ্ছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তা একটি গজব অথবা একটি মহামারী যা আল্লাহ তায়ালা বানী ইসরাঈলের একটি উপদল কিংবা তোমাদের পূর্বেকার কোনো একদল ব্যক্তির ওপরে প্রেরণ করেছিলেন। অতএব কোনো অঞ্চলে তার কথা তোমরা জানলে সেথায় তোমরা প্রবেশ কর না; তদ্রুপ কোথাও তোমাদের ওপর এসে পড়লে সেখান থেকে পালিয়ে যেও না।’

অন্য হাদিসে এসেছে- উসামাহ ইবনে যাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহামারী প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) আলোচনা করলেন ও বললেন, যে গজব বা শাস্তি বানী ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার বাকি অংশই হচ্ছে মহামারী। অতএব কোথাও মহামারী দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা হতে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গাতে যেও না।’ (বুখারি ও মুসলিম)। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন ‘ব্যাধিযুক্ত উটপালের মালিক (অসুস্থ উটগুলোকে) সুস্থ উটপালের মালিকের (উটের) ধারের কাছে আনবে না।’ (মুসলিম : হাদিস ৫৬৮৪)

এভাবেই রাসুল (সা.) মহামারী জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং তা থেকে রক্ষা পেতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম বলে দিয়েছেন। তাঁর কথাগুলোই এখন কোয়ারেন্টাইন ধারণার প্রতিষ্ঠাতা যার ব্যাপারে সমকালীন সব স্বাস্থ্য সংস্থা অসিয়ত করছে। আর এ পন্থাই এখন বর্তমান মহামারী ‘করোনাভাইরাস’ প্রতিরোধের ফলপ্রসূ পদ্ধতি। প্লেগ বা মহামারী আক্রান্ত অঞ্চলে ইসলামী শরিয়ত যেসব কারণ এবং হেকমতের জন্য প্রবেশ নিষেধ করেছে তার কিছু ইবনুল কায়্যিম (রহ.) উল্লেখ করেছেন। যেমন-

১. কষ্টদায়ক বস্তু হতে দূরে থাকা ও তা দূরে ঠেলে দেয়া।
২. দূষিত হাওয়ায় নিশ্বাস না নেয়া, যার কারণে রোগাক্রান্ত হয়ে যায়।
৩. যারা ওই কারণে রোগাক্রান্ত হয়েছে তাদের সঙ্গে মেশার কারণে যেন একই রোগে রোগাক্রান্ত না হয়।

প্লেগ বা মহামারী আক্রান্ত অঞ্চল হতে ইসলামী শরিয়ত যেসব কারণ এবং হেকমতের জন্য বের হতে নিষেধ করেছে তার কয়েকটি উলামারা উল্লেখ করেছেন। যেমন-

১. অন্তরে আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস ধারণ করতে হবে এবং তাঁর সিদ্ধান্তে ধৈর্যধারণ এবং সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
২. সংক্রমণ মুক্ত এলাকায় যেন তা ছড়িয়ে না পড়ে এ জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা রাখতে হবে।
৩. যদি মানুষেরা সংক্রমণযুক্ত এলাকা থেকে একের পর এক বের হতে থাকে তাহলে সেখানে যারা এ রোগে বা অন্য রোগে অসুস্থ তারা তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে এবং বাঁচা-মরার অঙ্গীকার হারিয়ে ফেলবে।

করোনাভাইরাসের এই মহামারী সময়ে মুমিনরা আল্লাহর ওপর ভরসা করবে এবং তাঁর যেকোনো ফয়সালায় ধৈর্যধারণ করবে। আর যারা অমুসলিম তাদের জন্য দুটি পথ খোলা থাকবে যা তার অন্তর ও জ্ঞানকে পরিমাপ করবে। হয় তাকে আল্লাহর নিদর্শন এবং শাস্তি ভয় দেখাবে, ফলে সে তওবা করে তার রবের দিকে ফিরে আসবে নয়তো তার রব তার অহঙ্কারের চাদর খুলে ফেলে দেবে এবং তাকে তার যুক্তির দিকে নিক্ষেপ করবে যা তার প্রতিশ্রুতিকে মিস করবে। তবে অস্বীকারকারীর মন সর্বদা দুর্ভাগ্যেই নিপতিত থাকে।

যেমনটি আল্লাহ বলছেন, ‘আর আমি ইচ্ছে করলে এর দ্বারা তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করতাম, কিন্তু সে জমিনের প্রতি ঝুঁকে পড়ে এবং তার প্রবৃদ্ধির অনুসরণ করে। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে কুকুরের মতো; তার ওপর বোঝা চাপালে সে জিহ্বা বের করে হাঁপাতে থাকে এবং বোঝা না চাপালেও জিহ্বা বের করে হাঁপায়। যে সম্প্রদায় আমাদের নিদর্শনসমূহে মিথ্যারোপ করে তাদের অবস্থানও এরূপ। সুতরাং আপনি বৃত্তান্ত বর্ণনা করুন যাতে তারা চিন্তা করে।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৭৬)

মহান আল্লাহ সবাইকে যেকোনো মহামারী হতে রক্ষা করুন এবং তাতে আক্রান্ত হলে তাঁর নির্দেশনা ও প্রতিশ্রুতির ওপর অবিচল থাকার তওফিক দান করুন, আমিন।

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট