চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

করোনায় ৮৩.৩% জেলে ক্ষতিগ্রস্ত

অনলাইন ডেস্ক

২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৫:৩১ অপরাহ্ণ

করোনার বিপর্যস্ত পরিস্থিতি এবং মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন জেলেরা।
আজ বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) অনলাইস সংবাদ সম্মেলনে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত এই জরিপ প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।

অনলাইন সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট ১ হাজার ১৮ জন উত্তরদাতা জরিপে অংশ নিয়েছিলেন। এরমধ্যে ৫১৯ জন পাথরঘাটার ও ৪৯৯ মহেশখালির। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩০৬ জন নারী এবং ৭১২ জন পুরুষ।

জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেছেন সংস্থাটির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শেখ গিয়াসউদ্দীন আহমেদ এবং ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস-ইউল্যাব এর শিক্ষিকা ড. রোমানা সুলতানা।

জরিপের ফলাফলে বলা হয়, শতকরা ৮৪ দশমিক ৩ জন উত্তরদাতা জেলে জানিয়েছেন, করোনার কারণে তাদের আয় কমেছে। আর মাত্র ১৫ দশমিক ১ শতাংশ জেলে জানিয়েছেন তাদের আয়ে কোনও পরিবর্তন আসেনি। পরিবারপ্রতি মাসিক আয় কমে হয়েছে ৫ হাজার ১৩৮ টাকা, সেই হিসেবে প্রতিদিনের আয় দাঁড়িয়েছে ১৭১ টাকা।

জেলেরা জানিয়েছেন করোনার আগে তাদের পরিবার প্রতি গড় আয় ছিল ১১ হাজার ১২৫ টাকা। সেই হিসেবে প্রতিটি পরিবার প্রতিদিন আয় করতো ৩৭০ টাকা। উত্তরদাতা ৫৮০ জন জেলের অর্থাৎ শতকরা ৫৬ দশমিক ৯৭ জনের মাসিক আয় ছিল ৫০০১ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা। বাকি ২৯৯ জন অর্থাৎ শতকরা ২৯ দশমিক ৩৭ জন বলেছেন, তাদের আয় ছিল ১০ হাজার ১ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

শতকরা ১৭ জন জেলের আয় ৮১ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ কমেছে। বাকি ২৪ শতাংশ জেলের আয় কমেছে ৬১ থেকে ৮০ শতাংশ ।

শতকরা ৭৪ দশমিক ৪ জন উত্তরদাতা জানিয়েছেন, করোনা চলাকালে তারা কোনও সাহায্য পাননি। শতকরা ৮৩ দশমিক ২ জন উত্তরদাতা জানিয়েছেন তারা ঋণ নিয়ে ঘাটতি মোকাবিলা করেছেন।

শতকরা ৩২ দশমিক ৮ জন জেলে বলেছেন, এসময় তাদের কোনো আয় ছিল না। বাকিদের মাসিক আয় ছিল ৩ হাজার ২০৮ টাকা, যা দিনপ্রতি পুরো পরিবারের জন্য দাঁড়ায় মাত্র ১০৬ টাকা। শতকরা ৩২ দশমিক ৮ জন দিনমজুর হিসেবে কাজ করেছেন। শতকরা ১৬ দশমিক ৫ জন নৌকা ও জাল বানিয়ে দিন কাটিয়েছেন।

৮৬ শতাংশ উত্তরদাতা খাদ্য সহায়তা ও নগদ টাকা পেয়েছেন। ৮৬ দশমিক ৭ জনের জেলে হিসেবে মৎস্য কার্ড ছিল। ৬৬ দশমিক ২ শতাংশ জানতেন না যে তাদের জন্য আসলে সরকারি সহায়তা কতটুকু। শতকরা ৩৮ জন উত্তরদাতা জেলে জানিয়েছেন, তাদের ৮১ শতাংশ থেকে শুরু করে সম্পূর্ণভাবে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আর আরও ২৬ শতাংশ উত্তরদাতা জেলে জানিয়েছেন, তাদের আয়ের পথ ৬১ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে।

শতকরা ৫৬ দশমিক ৭ জন উত্তরদাতা জানিয়েছেন, করোনার কারণে স্বাস্থ্য পরিস্থিতিতে খুব বড় ধরনের কোনও পরিবর্তন তারা লক্ষ্য করেননি। তবে শতকরা ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, তাদের পরিবেশ পরিষ্কার হয়েছে এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে তিন পরিচ্ছন্নতা মানা সহজ হয়েছে। শতকরা ৮৯ দশমিক ৯ জন উত্তরদাতা বলেছেন, তারা করোনাকালে স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা ভোগ করেননি।

অন্যদিকে, ৪৯.১ জন জানিয়েছেন শারীরিক নির্যাতনের কথা। শতকরা ৬২ জন নারী মনে করেন এইসময় পারিবারিক নির্যাতন বেড়েছে। কিন্তু পারিবারিক সহিংসতা ঠেকানোর কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি শতকরা ৯৪ জনের।

উল্লেখ্য, গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মাছধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট