চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

এই মুহূর্তে গার্মেন্টসে বড় সংকট হচ্ছে লিড টাইম

এস এম আবু তৈয়ব

৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে আমরা দুঃখজনক একটা পর্যায়ে রয়েছি।
এতদিন শুধু সম্ভাবনা এবং সাফল্যের কথা বলেছি। কিন্তু প্রথমবারের মত ইদানিং
আমরা বলতে শুরু করেছি, আমাদের সংকট, ভবিষৎ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। সত্যিকার অর্থে, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রবৃদ্ধির হার পর্যায়ক্রমে কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় চলে আসছে। পোশাক শিল্পের এ হাল কিন্তু একদিনে হয়নি। আমরা যারা পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত তারা অনেক আগে থেকেই এই অশনি সংকেত দিয়ে আসছিলাম। জানিয়েছিলাম আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন, শিল্পটাকে পরিচর্যা করার প্রয়োজন। কারণ, এ শিল্প ধীরে ধীরে সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশন নিয়ে পৃথিবীব্যাপী নেগেটিভ প্রচারণাই আমাদের প্রথম সংকটটা তৈরি করে। এছাড়া বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের বিভিন্ন দুর্বল দিকগুলো তুলে ধরে ফলাও করে যেসব সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে এটিও একটি কারণ। এখানে আমাদের জাতির অহংকারকে বস্ত্রহরণ করা হয়েছে বলে মনে করছি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও সংকট রয়েছে কিন্তু তারা কোথাও এমন ব্যাপক আকারে প্রচার করেনি। আমাদের সংকটে পড়ার কারণ বিশ্লেষণ করে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। যারা আমাদের বাজার ধরার চেষ্টা করছে। এই সংকটে পড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নেয়া। যা বাস্তবসম্মত নয়। এছাড়া ডলারের বিনিময়ে টাকার হারে যে পরিবর্তন রয়েছে এটিও একটি কারণ। সবশেষে বলতে চাই, তৈরি পোশাক শিল্পের এ সংকট এখন গভীর সংকট। এ সংকট মোকাবেলায় যদি আমরা অবহেলা করি তাহলে সামনে অন্ধকারে পড়বে এই শিল্প।

হঠাৎ করে এ খাত কেন এমন বেকায়দায় পড়ল এবং এ থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে এস এম আবু তৈয়ব বলেন, আমাদের সংকটটা কোথায় এবং কি কি কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর কাছে আমরা মার খাচ্ছি তা সর্বপ্রথম নির্ণয় করতে হবে। বাংলাদেশের সাথে কাছাকাছি অবস্থানে অর্থাৎ দ্বিতীয় অবস্থানে ভিয়েতনাম। তাদের কাছে আমরা কেন মার খাচ্ছি তা নিয়ে যদি আমরা চিন্তা না করি তাহলে এই সংকটের সমাধান সম্ভব হবে না। এই মূহুর্তে সব থেকে বড় সংকট হচ্ছে লিড টাইম। ফল সিজনে বায়াররা আমাদের অনেক বেশি অফার করে কিন্তু আমরা তাদের চাহিদামাফিক কাজ দিতে পারি না। কিন্তু এবারের চিত্রটা ভিন্ন। এবারের ফল সিজনে আমরা অর্ডার পাবো কিনা, তা নিয়ে শঙ্কিত। কারণটা হচ্ছে লিড টাইম। সবগুলো অর্ডার চলে যাচ্ছে ভিয়েতনামে। ভিয়েতনামে লিড টাইম ইজ ভেরি লো।
রানা প্লাজার পরে কারখানাগুলো আপডেট করার যে চ্যালেঞ্জটা এসেছিল সেটি উদ্যোক্তারা টাকা-পয়সা খরচ করে আর্ন্তজাতিক মানসম্পন্ন করেছেন। কিন্তু বন্দরে যে সময়টা লাগছে সেটা কাভার করার ক্ষমতা উদ্যোক্তাদের নেই। এ ব্যাপারে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

ব্যাংকের বিড়ম্বনার কথা তুলে ধরে এস এম আবু তৈয়ব বলেন, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে ডলার প্রতি ৮৬ থেকে ৮৭ টাকায় এলসি খুলছেন। ব্যাংক ওখানে ৮৬-৮৭ টাকায় এলসি খুললে আমাকে কেন ৮৩ টাকা দিবে। এই টাকাতো আমাদের। এখানেই বড় ধরণের একটি সংকট। ব্যাংকিং সেক্টরে বড় ধরণের সিন্ডিকেট আছে বলে আমি মনে করি। এই সমস্ত শুভংকরের ফাঁকি থেকে যদি জাতিকে রক্ষা করতে হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর যে ভিশন তা বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের বাস্তবমুখী হতে হবে। এজন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট