চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টলদরদী আলহাজ মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীর ১২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমার ক’টি কথা

মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম

৫ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:১০ পূর্বাহ্ণ

‘তোমরা যেদিন ভূমিষ্ঠ হয়েছো সেদিন থেকে তোমাদের অমূল্য জীবন ক্ষয় হতে শুরু হয়ে গেছে।’ ইতিহাস কথা বলে- জন্মিলে মরিতে হয়। এটা ইতিহাসের চিরন্তন নীতি। ‘কুল্লু নাফছিন জায়েকাতুল মাউত’ – প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর শরবত পান করবে। (সূরা আম্বিয়া আয়াৎ ৩৫)

শ্রদ্ধেয় দাদা দৈনিক পূর্বকোণ লিঃ-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বঞ্চিত অবহেলিত চট্টগ্রামের উন্নয়ন আন্দোলনের পুরোধা, আধুনিক মুদ্রণ ও সংবাদপত্র শিল্পের পথিকৃৎ চট্টগ্রামের প্রাণপুরুষ আলহাজ মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীর জন্ম ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯২১। মৃত্যু ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭। উনার মৃত্যু হয়েছে ২০০৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, রবিবার। পবিত্র মক্কায় ওমরা হজ¦ পালন করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে স্থানীয় জেয়াদ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহে…. রাজেউন। পবিত্র খানায়ে ক্বাবায় জান্নাতুল মুয়াল্লায় দাফন করা হয় তাঁকে। উনার সহধর্মিনী জোহরা বেগম আরেক ভাগ্যবতী মহিলা। উনি ছিলেন একজন প্রচারবিমুখ জনদরদী। সুবহানাল্লাহ।

দাদা ইউসুফ চৌধুরী আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু রেখে গেছেন বিশাল স্মৃতি, যা চিরজীবন মনে রাখা যাবে। কোন দিন ভুলা যাবে না। এরপর চলে গেলেন শ্রদ্ধেয় চাচা স্থপতি তসলিমউদ্দিন চৌধুরী। আল্লাহপাক তাদেরকে জান্নাত নছিব করুন। আবেগের ঢেউ হারিয়ে যাচ্ছে স্মৃতির মনিকোঠায়। উনার সুযোগ্য আরো দু’ সন্তান বর্তমানে রয়েছেন। শ্রদ্ধেয় চাচা জসিম উদ্দিন চৌধুরী ও ডা. ম রমিজউদ্দিন চৌধুরী। আল্লাহপাক তাঁদের দুজওনের হায়াৎ বৃদ্ধি করুন।
চট্টগ্রামের উন্নয়নে মহান দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নবপ্রজন্মের তরুণদের উৎসাহ দেয়ার পণ নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন শ্রদ্ধেয় দাদা আলহাজ মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী। বয়সকালেও তাঁর মনের জোর ছিলো অসাধারণ। সুবহানাল্লাহ। কাজ-কর্ম বয়স কোন তোয়াক্কাই করতেন না। বয়সের কোন বাধা ছিলো না।

আবালবৃদ্ধবণিতা সব বয়সের মানুষকে অতি সহজেই আপন করে নেয়ার অসাধারণ ক্ষমতা ছিলো তাঁর। তাঁর কর্মকা-ের তালিকায় সর্বাগ্রে স্থান পেয়েছে গ্রাম-বাংলার কৃষক ও গবাদি পশুর, ডেইরি ও পোল্ট্রি ফার্মের বিষয়। রয়েছে চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও তাজা দুগ্ধশিল্পের সম্প্রসারণ। দেশে খাদ্যে ও পুষ্টি সরবরাহের লক্ষ্যে পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারী বিশ^বিদ্যালয়, চট্টগ্রামের ডেইরি এন্ড পোল্ট্রি এসোসিয়েশন এর বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির অবদান চিরস্মরণীয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন শ্রদ্ধেয় দাদা আলহাজ মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী।

সড়কদুর্ঘটনায় শাহেদুল আলম কাদেরী, হারুন, সালাম ও প্রকৌশলী মনোয়ারের বিয়োগব্যথা তিনি সহ্য করতে পারেন নি। সড়কদুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে তিনি একদম মুচড়ে পড়েছিলেন। উনি বলেছিলেন ‘একি হলো’ যারা আমাকে দাফন-কাফন কবর দেয়ার কথা ছিলো, তারা সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। আমি কি আমার ছেলেদের কবরে নামবো। সেই শাহেদ কাদেরী আমার কথা শুনলো না।

তিনি গ্রামীণ জনপদের কথা বলতেন। তিনি কৃষকদের কথা বলতেন। তিনি মনে করতেন ৮০-৯০% মানুষ গ্রামে বসবাস করে। তারা কৃষিনির্ভর। তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পজাত পণ্যে সার, বীজ, কীটনাশক, খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নারীনির্যাতন, দুগ্ধশিল্প হাঁস-মুরগীর খামার, ডিম, দুধ, জৈবসার বাজারজাতকরণের সব অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সরকারের উচ্চপর্যায়ের দৃষ্টিগোচর করার চেষ্টা চালাতেন।
নিজ উদ্যোগে লক্ষ টাকা খরচ করে কবি নজরুল কমপ্লেক্স (ঈড়সঢ়ষবী), এবাদতখানা তৈরী করেন মৃত্যুর পূর্বেই, যা চিরদিন ইতিহাসের পাতায় সাক্ষ্য হয়ে থাকবে। সুবহানাল্লাহ।
উনাকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। কারণ আমার বাড়ী রাউজান মুহাম্মদপুর গ্রামে। উনি দান-দক্ষিণা করতেন অত্যন্ত গোপনে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান উনি সুষ্ঠুভাবে পালন করতেন। আসলে উনি যথাযথ ধর্মপরায়ন ছিলেন। পবিত্র ভূমিতে উনার মৃত্যুই এটা প্রমাণ করেছে। সুবহানাল্লাহ।

তিনি আমাকে একদিন বললেন, ‘শফিক’ তুমি আসলেই ভাগ্যবান। আমি হেসে বললাম, আপনাদের দোয়ার বরকতে আমি বর্তমানে এই অবস্থায়। তিনি আজ আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেছেন। তাঁর এই শূন্যতা বড়ই বেদনার।
তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই মানে আর কোনদিন আমাদের মাঝে আসবেন না। কেউ আর উপদেশও দিবেন না। বড়ই শূন্যতা হৃদয়ের মণিকোঠায়। মনে হয় এই কারণে যে, যে বটবৃক্ষটি চেয়ারে বসে আমাদেরকে সবসময় ছায়া দিতেন। উৎসাহ-আদর-সোহাগ করতেন। সেই তিনিই আজ নেই। একজন মানুষের প্রতি বড় ভালোবাসা কিভাবে জন্ম নিয়েছে তা একমাত্র আল্লাহপাকই ভালো জানেন।

চট্টগ্রামের উন্নয়নের নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক ইউসুফ চৌধুরী বৃদ্ধ বয়সে লাঠি হাতে চট্টগ্রামের অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সারাটি জীবন মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী ছিলেন। উনাকে আমরা কিছুতেই ভুলতে পারি না। জীবনসাধনায় উনি যেখানেই মনোনিবেশ করেছেন সেখানে সোনা ফলেছে। নেতৃত্বের গুণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সর্বজনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। এই অঞ্চলের জনগণকে হতাশার অন্ধকার থেকে তুলে এনে শিখিয়ে গেছেন জীবনকে বর্ণাঢ্য করার মন্ত্র। মানুষের ঘরের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছেন মননশীলতায় সমৃদ্ধ হওয়ার বার্তা। আর সেই দায়িত্ব এখন প্রতিদিন পালন করে চলেছে আজকের দৈনিক পূর্বকোণ। স্মরণ করি আজকের দিনে মহামহিম এই পৃথিকৃৎকে। স্মৃতিসুধায় অমিয় পরশে চাই পরিশুদ্ধ হয়ে দেশটিতে নিবেদিত হতে।

পরিশেষে মহান আল্লাহপাকের দরবারে বেদনাবিধুর হৃদয়ে ফরিয়াদ জানাই, মাগফেরাত কামনা করি, খাতেমা বিল খায়েব নছিবের প্রার্থনা জানাই। আল্লাহপাক আলহাজ মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী, উনার সহধর্মিনী ও শ্রদ্ধেয় চাচা স্থপতি তসলিম উদ্দিন চৌধুরীকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।
আমিন। সুম্মা আমিন ওয়াচ্ছালাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট