চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি জনজীবনে বাড়বে খরচের চাপ

২ জুলাই, ২০১৯ | ১:৪২ পূর্বাহ্ণ

শেষ পর্যন্ত গ্যাসের দাম আরেক দফা বাড়ানো হলো। এবার গৃহস্থালি, বিদ্যুৎ, শিল্পসহ সব শ্রেণির গ্যাসের দাম বেড়েছে। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় দাম ৭ টাকা দশমিক ৩৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ গ্যাসের দাম এক লাফে গড়ে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। দেশের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় হারের মূল্যবৃদ্ধি। এ দাম বৃদ্ধির ফলে বছরে সব গ্রাহকের অতিরিক্ত খরচ হবে আট হাজার ৬২০ কোটি টাকা। জুলাইর প্রথম দিন থেকেই দাম বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এভাবে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে জীবনযাত্রার প্রায় প্রতিটি খাতেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, সন্দেহ নেই।
বর্ধিত মূল্যহার অনুযায়ী, বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের এক চুলার মাসিক বিল ৭৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৯২৫ টাকা হয়েছে। দুই চুলার মাসিক বিল ৮০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭৫ টাকায়। অর্থাৎ উভয় ধরনের চুলাতেই ১৭৫ টাকা করে দাম বাড়ানো হয়েছে। গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত মিটারভিত্তিক প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৬০ পয়সা হয়েছে। দাম বৃদ্ধির সাম্প্রতিক হার-প্রবণতা বিবেচনায় নিয়ে দেখা যায় এবারই সবচেয়ে বেশি হারে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এবার প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ভারিত গড়ে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে দুই ধাপ মিলে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ভারিত গড়ে ২২ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিইআরসি। পরে প্রথম ধাপ কার্যকর হলেও আদালতের রায়ে দ্বিতীয় ধাপ বাতিল হয়ে যায়। তার আগে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের আগস্টে গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়িয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। দাম বৃদ্ধির এসব হার বিবেচনায় নিয়ে দেখা যায় এবারই সবচেয়ে বড় দামবৃদ্ধির ঘোষণা এলো গ্যাস খাতে।
যদিও নতুন মূল্যহার প্রকাশে আয়োজিত সংবাদসম্মেলনে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেছেন, গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি এবং বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে নতুন মূল্যহার নির্ধারণ করা হয়েছে। যে দাম বেড়েছে তা গ্রাহকপর্যায়ে সহনীয় এবং বাস্তবসম্মত। তবে সবকিছু বিবেচনায় নিলে বলতে হয় এভাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি সার্বিক কুপ্রভাব পড়বে শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপরও। সাধারণ মানুষের জীবন যাপন হবে আরো কষ্টকর। বিদ্যুৎ, গণপরিবহণ এবং শিল্পোৎপাদনসহ নানাক্ষেত্রে বাড়বে খরচ। এরও খেসারত দিতে হবে সাধারণ মানুষকে। কারণ গণপরিবহনের ভাড়া বেড়ে যাবে, বেড়ে যাবে দ্রব্যমূল্যও। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদনখরচ বাড়া মানে তো বিদ্যুতের দাম আরো এক দফা বাড়া। উপাদন ব্যয় বাড়ার ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাও কঠিন হয়ে পড়বে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক ও অন্যায্য বলছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। তাদের মতে, দুর্নীতি, চুরি বন্ধ এবং সিস্টেম লস কমালে গ্যাসের দাম বরং কমানো সম্ভব। ক্যাব’র মতে, হিসাবের মারপ্যাঁচে একটি গোষ্ঠীর পকেট ভরবে এবং সাধারণ জনগণের পকেট খালি হবে। এ দামবৃদ্ধি সেই অন্যায্য পরিস্থিতিই তৈরি করবে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতি, লুঠপাট ও অব্যবস্থাপনা বন্ধ করা গেলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে না। আর সাগর ও স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় গ্যাস পেলে কম টাকায় সরবরাহ করা যাবে। এলএনজি আমদানি করে গ্যাস-সংকট দূর করার দরকার নেই।
আমরা মনে করি, ফের গ্যাসের দাম বাড়ানোর তৎপরতা দেশের শিল্পকারখানা এবং সাধারণ মানুষের জন্য বড়ই দুঃসংবাদ। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পরিণামে দেশের জনগণের সার্বিক জীবনযাত্রায় ব্যয় বেড়ে যায়। উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোগপণ্যসহ সবকিছুতেই বাড়তি খরচের খড়গ নেমে আসবে। এমনিতেই অতি মুনাফাশিকারিদের অপতৎপরতায় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ হাঁসফাঁস করছে। এ সময় ফের গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবনে সঙ্কট আরো বাড়বে। এ অবস্থায় সরকারের উচিত হবে, গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে দুর্নীতি, লুটপাট ও অপচয় বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট