চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আজ ও আগামীর চট্টগ্রাম মহানগরী

ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী

২৮ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

প্রায় ৭০লাখ অধিবাসী অধ্যুষিত ঘনবসতির একটি নগরী এই চট্টগ্রাম মহানগরী। প্রাকৃতিক নান্দনিকতায় সৌন্দর্যমন্ডিত পাহাড়, সাগর ¯্রােতস্বিনী কর্ণফুলী এবং সমতলের বৈচিত্র সৌরভ, বৈভব মিশ্রিত সৌন্দর্য্য নিয়ে এই নগরী। এই উপমহাদেশের রানী বঙ্গোপসাগরের সোহাগে, সবুজ পাহাড়-পর্বতের আদরে লালিত-পালিত হাজার বছর অতিক্রান্ত জনপদ চট্টগ্রাম মহানগরী। জনপদ থেকে নগরী। নগরী থেকে থেকে মহানগরী।

ষাটের দশকে এই নগরীতে জনসংখ্যা ছিল সাড়ে তিন লাখ। ২০২০ সালে এসে তা প্রায় সত্তর লাখে ঠেকেছে। নগরীর আকার বেড়েছে, আয়তন বেড়েছে। নগরবাসীর কর্মপরিবেশ কর্মপরিধি বেড়েছে। কর্ম তৎপরতা বেড়েছে এবং ব্যস্ততাও বেড়েছে। সে অনুপাতে বাড়েনি সুযোগ-সুবিধা জনসাস্থ্য কিংবা জনগণের চাহিদার অংশটুকু।
গরমকালে নগরীর বাতাসের অবস্থা করুণ থাকে। দূষক দূষিত বিভিন্ন পদার্থে বাতাস ভারি হয়ে থাকে। শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাতাসে বিভিন্ন প্রকার ধূলিকণা গ্যাসকণা সাসপেন্ড পার্টিকেল এসপিএম ২.৫, এসপিএম ১০ বাতাসকে ভারী করে রাখে। মানুষকে অস্থির করে তোলে। এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত। নগরীর জনস্বাস্থ্য সবসময়ই হুমকিতে থাকে। চোখের রোগ, শ্বাস-প্রশ্বাসের রোগ, ফুসফুসের প্রদাহ, মাথাধরা, মাথাব্যথা, হজমের সংকট, হাঁপানি রোগীর কষ্ট, শিশুস্বাস্থ্যের বিপর্যয়, গর্ভবতী মায়েদের অসহায়ত্ব নগরবাসীকে পর্যবেক্ষণ করতে হয়, ধারণ করতে হয় নির্লিপ্তভাবে অসহায় হয়ে।
নগরীর পানি ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অনুষঙ্গগুলো নাজুক অবস্থায় চলে যায় সময়ে সময়ে। জনসংখ্যার অনুপাতে রাস্তাঘাটের পরিমাণ সীমিত হলেও সীমিত রাস্তাও আবার বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের দখলে থাকে। নগরীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যে বিষয়গুলো বৃদ্ধি পাওয়া উচিত ছিল, তা বিভিন্ন কারণে বৃদ্ধি পায়নি, বরঞ্চ কমেছে।

অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মার্চ বাতাসে যেমন নাজুক, তেমনি বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা, জলমগ্নতা , পাহাড় ধ্বস, পাহাড় কাটা সব মিলিয়ে নগরজীবন থাকে ব্যস্ত সংক্ষুব্ধ, শঙ্কাযুক্ত, ভয়-ভীতি ও উৎকণ্ঠা, বিপন্নতায় ভরা। নগরবাসীর তৃপ্তি অতৃপ্তি, সুখ শঙ্কা, আসাদন আপদ, সবকিছুই শঙ্করায়িত হয়ে যায় সময়ে সময়ে। মহানগরীতে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা, উন্নয়নের বহুমাত্রিক কার্যক্রম চলছে বছরের ৩৬৫ দিন। উন্নয়ন প্রক্রিয়া গুলো অনেকটাই অপরিকল্পিত ও অব্যবস্থায় ভর্তি। জনজীবন এবং জনস্বাস্থ্যকে হিসাবে না এনে এসব কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
নগর জীবন গড়ে উঠেছিল গ্রামীণ জীবনের কিছু অসুবিধাকে উত্তরাতে। কর্মব্যস্ত জীবনকে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে যাপিত করতে এবং হাতের কাছেই কিছু সুযোগ-সুবিধাকে ভোগ-উপভোগ করতে। চট্টগ্রাম মহানগরী ২২০ বর্গকিলোমিটারের একটি পরিকল্পনা পর্যায়ের বর্ধনশীল মহানগরী। এ মহানগরীর দ্রুত বৃদ্ধির সাথে বিভিন্ন সময়ে পরিকল্পনা প্রণীত হলেও, পরিকল্পনামাফি কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়ার অভিযোগ আছে।
আমরা যদি জীবনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ উপাদান পানির কথাই ভাবি, তাহলে এই শহরের পানি ব্যবস্থাপনা নাজুক পর্যায়ে আছে। এটা শুধু সমসাময়িক সময়ের জন্য নয়। এই সংকটটি দীর্ঘমেয়াদি। এর অতীত সংকটাপন্ন ছিল। বর্তমান সংকট। ভবিষ্যৎ স্বপ্নদর্শী, স্বপ্নবান।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রতিষ্ঠার ষাটের দশকে। গত শতাব্দীতে। ষাটের দশকে এই নগরীর জনসংখ্যা ছিল সাড়ে তিন লাখ। তখন প্রাকৃতিক পানি, বৃষ্টির পানি এবং নদীর অবস্থা ভাল ছিল। ওয়াসার কার্যক্রম কিংবা আবেদন তখন সাধারণ মানুষকে তাড়িত করে নি। প্রয়োজন হয়নি। চট্টগ্রাম ওয়াসার বয়স এখন প্রায় ৬০ বছর। বয়সের সাথে সাথে চট্টগ্রাম ওয়াসার বিস্তৃতি কিংবা কার্যক্রম, কিংবা জনপ্রিয়তা যথাযথ মাত্রায় বাড়েনি ।
চট্টগ্রাম ওয়াসার স্থবিরতা আছে। পরিকল্পনাগত সংকট আছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা কোনদিনই এর জনসংখ্যার চাহিদার এক-চতুর্থাংশ অথবা এক-তৃতীয়াংশ এর বেশি পানি সরবরাহ করতে পারেনি।

তবে সর্বশেষ শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রতিষ্ঠা করে সংস্থাটি প্রায় ১৪ কোটি লিটার পানি এর মূল প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এতে করে ওয়াসার উৎপাদন প্রায় ৩২ কোটি লিটার উঠে এসেছে। এটি স্বপ্নজয়ী বাংলাদেশের একটি অর্জন। যদিও চাহিদার নিরিখে এখনো অর্ধেক জনসংখ্যার পানির চাহিদা পূরণ করতে পারছে মাত্র। আমরা ২০১৫ সাল থেকে এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বাহনের যাত্রী। চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা প্রায় ৭০ লাখের কাছে। ওয়াসার সরবরাহ পাইপ লাইনগুলো গত শতাব্দীর ষাটের দশকের। সময়ের সাথে সাথে চাহিদার নিরিখে পাইপ লাইন গুলো কোথাও কোথাও, কখনো কখনো কিছু প্রতিস্থাপন হলেও এগুলো পুরনোই।
রাঙ্গুনিয়া পোমরা এলাকার স্থাপনা কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে সাত কিলোমিটার ভাটিতে। কর্ণফুলী পেপার মিল পঞ্চাশের দশকের প্রতিষ্ঠা। কর্ণফুলীর পানিতে দূষণের জন্য এই কাগজের কলটি অনেকাংশেই দায়ী। এটির ভাটিতে এই প্রকল্প স্থাপনা ঝুঁকিমুক্ত নয়। কর্ণফুলী পেপার মিল পরিত্যক্ত হওয়ার পথে। কর্ণফুলীর পানিকে শোধন করে চট্টগ্রাম মহানগরীতে সরবরাহ করা হয়। সুপেয় পানি জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ। পৃথিবী নামক গ্রহে পানি আছে বলেই প্রাণ আছে। প্রাণ এবং পানির সম্পর্ক নিবিড় এবং পরিপূরক। মহাবিশ্বে পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ, এখন পর্যন্ত যেখানে পানি আছে, সবুজ আছে, প্রাণ আছে।

চট্টগ্রাম মহানগরী দ্রুতবর্ধনশীল একটি নগরী। ২০২৪ সালে এ মহানগরীর জনসংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে। তখনকার নগরবাসীর পানির চাহিদা পূরণের ছক আরো আগেই তৈরি করার কথা। আমরা জানিনা তা কতটুকু হয়েছ। ৭০ লাখ নগরবাসীর জন্য সরবরাহকৃত পানির পরিমাণ বর্তমানে ৩৫ কোটি লিটারের বেশি নয়। চট্টগ্রাম ওয়াসা বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে নগরবাসীর জন্য প্রয়োজনীয় অর্ধেক পরিমাণ পানি সরবরাহ করার পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ওয়াসার পরিকল্পনা এবং দক্ষতা ও পরিধি আরও বাড়াতে হবে। ওয়াশাকে গতিশীল হতে হবে। হতে হবে সমসাময়িক। বর্তমানে ওয়াসার পাইপলাইন প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে। এটি চলবে ২০২২ সাল পর্যন্ত। তখনো নগরবাসীর চাহিদার অনেক পিছনে পড়ে থাকবে ওয়াসা। তাহলে কি ওয়াসা কখনোই চাহিদার সাথে দৌড়াতে পারবে না?

চট্টগ্রাম ওয়াসা ভূগর্ভস্থ পানি উঠানোর কাজ এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৯০ টির অধিক গভীর নলকূপের সাহায্যে নগরীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভূগর্ভস্থ পানি উঠানো হয়। বেসরকারিভাবে ঠিক কতগুলো গভীর নলকূপ দিয়ে বাসাবাড়ি কিংবা বিভিন্ন জায়গায় পানি উঠানো হয়, তার কোনো হিসাব কিন্তু ওয়াসার কাছে নেই। এটি ভবিষ্যতের গভীর সংকটের একটি কথা। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী এবং হালদা নির্ভর ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি নগরবাসী পায়। এই নদীগুলোর নাব্যতা, দূষণ এবং লবণাক্ততার মাত্রাকে সঠিক পর্যায়ে রাখতে না পারলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঢেকে যাবে। এটি বলার জন্য গবেষক হতে হয় না, দার্শনিক হতে হয় না।
গত শতাব্দীর মাঝামাঝিতে বৃষ্টি বাদলের পানি যেভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভর্তি করতো, রিসার্চ হতো, বর্তমানে তা হয় না। বিভিন্ন কংক্রিট ঢালাই, আরসিসি স্থাপনা প্রভৃতির কারণে বৃষ্টির পানির শতকরা আশি ভাগ নালা নর্দমা হয়ে কর্ণফুলী এবং বঙ্গোপসাগরে চলে যায়। মাত্র শতকরা দশ ভাগ পানি ভূগর্ভে পুনর্ভরণের সুযোগ পায়। বাকি শতকরা দশ ভাগ পানি বাষ্প হওয়ার সুযোগ পায়। প্রকৃতির এই ছন্দপতনের জন্য চট্টগ্রাম মহানগরীকে চরম মূল্য দিতে হয়। চরম মূল্য দিতে হয় চট্টগ্রামের নগরবাসীকে। জলমগ্নতা, জলাবদ্ধতা অসময়ের বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়া প্রভৃতি এই অঞ্চলের মানুষের নিত্য সঙ্গী হয় বছরের বিভিন্ন সময়।
নগরবাসী জলঝটে, যানজটে, অনেক কষ্ট পায়। জলমগ্নতায় কষ্ট পায়, স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি হানিতে কষ্ট পায়। রোগ-ব্যাধিতে কষ্ট পায় । নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কারণে উদ্বাস্তু স্থানান্তরিত হয়, বিরম্বনা বিপর্যয় বেড়ে যায়। এসব পরিবেশকে বিপন্ন করে। বিপদাপন্ন মানুষকে, জীবন যাত্রাকে বিভ্রান্ত করে। মানবিকতা, মানসিকতা তলানীতে চলে যায়। এই বিপর্যয়গুলো ঘটে ওয়াসার সামনে। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তৃপক্ষকে সাক্ষী রেখে। নগরবাসীর অসহায়ত্ব তাদের পীড়িত করলেও বিভ্রান্ত বা বিচলিত করে না। করেনা উদ্যোগী উদ্যোমী। উদ্যমী, উদ্যোগী অদম্য বাংলাদেশ অদৃশ্য হয়ে যায় জলমগ্নতা জলাবদ্ধতা এবং নিম্নাঞ্চলের প্লাবন বিপর্যয়ে।
এর সাথে যুক্ত হয় পাহাড় ধ্বস। প্রাণের বিপর্যয়। প্রাণহানি, সম্পদহানি এবং মানবিক আহাজারি। নগরবাসী উদভ্রান্ত হয়ে যায়। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষগুলো। নগরীতে প্রায় ছয় ভাগের এক ভাগ জনসংখ্যা বস্তিবাসী। এই বস্তিবাসীকে বিপর্যস্ত করে তোলে এক একটি বর্ষা। একটি একটি দুর্যোগের সময় তাদের জন্য জাহান্নামের বিভীষিকা নিয়ে আসে। এই ঘটনাগুলোকে উৎরানোর জন্য ওয়াসা পরিকল্পনা নেয়। কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় থেকে আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করে আসি, পরিকল্পনার সাথে উন্নয়নের, জনদুর্ভোগের দূরত্ব বাড়তেই থাকে। এই বিপর্যয়ের যেন কোন শেষ নেই।

স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে এসে মানবিক বিপর্যয়গুলো যখন আমাদের উন্নয়ন স্বপ্ন, অগ্রগতি অদম্য যাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তখন স্বাধীনতার চেতনা বিপর্যস্ত হয়, স্বপ্নগুলো আবছা হয়ে যায়। অধিকন্তু, ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি ব্যবহারে কোন স্পষ্ট নীতিমালা কিংবা ব্যবহারবিধি সম্বন্ধে জনগনের অসচেতনতা, পানি অপচয়ে ব্যাপকভাবে কাজ করে। পানির অপচয় হয় ভোক্তার কাছে। পানির অপচয় হয় সরবরাহ লাইনে। পানির অপচয় হয় ওয়াসার অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তাদের যোগসাজশে। শোনা যায়, ওয়াসার সিস্টেম লস প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোন দেশে সিস্টেম লস এই পর্যায়ে নেই। সিস্টেম লস সিস্টেমের অংশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোত এই মাত্রাকে একক সংখ্যা নামিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ কিংবা চট্টগ্রামের কথাই যদি ধরা যায়, সেটা প্রায় শতকরা ৩০ভাগ। এর উপরেও ওয়াসা আবার পানির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। যাকে বলা যায় মরার উপর খাড়ার ঘা। দায়িত্বশীলদের এই জায়গাগুলোতে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়া দরকার। পানি পৃথিবী অথবা দেশের অবারিত সম্পদ নয়। পানি জীবনের জন্য সীমিত সম্পদ। বিশেষ করে পানির জন্য জীবনের বিকাশ বিস্তৃৃতি এবং ধারাবাহিকতা এবং প্রাণবন্ত। বাংলাদেশ হাজার নদীর দেশ। খাল নদী বিল-ঝিল হাওর বাওর সাগরের দেশ বাংলাদেশ। একসময় এই বাংলাদেশের নদী পথের দূরত্ব ছিল প্রায় ২৫ হাজার কিলোমিটার। তাও আবার শুকনো মৌসুমে। আজ বিভিন্ন উন্নয়ন ও পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণে সেটি সাড়ে তিন থেকে চার হাজার কিলোমিটারের এসে দাঁড়িয়েছে। এবং তা বর্ষাকালে।
আমরা নদীর প্রতি সংবেদনশীল না। উদারও না। আমরা খাল দখল করি। দূষণ ঘটাই। মেরে ফেলি। আমরা পুকুর ভরাট করি। আমরা হাওর বিল ঝিল নালা হ্রদ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় মেরে ফেলছি। আমাদের নদীগুলোকে আদালতে যেতে হয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। আমাদের অকৃতজ্ঞতা আমাদের পানিসম্পদ, প্রাকৃতিক মূলধন পানিকে সীমিত করে ফেলার জন্য দায়ী। মিঠাপানির এই বাংলাদেশ এখন ভূগর্ভস্থ এবং নদী নালার পানি সংকটে জর্জরিত। গ্রামে গঞ্জে শুকনা মৌসুমে পুকুর নালা খালে বিলে পানি থাকে না। শহর অঞ্চলে পানির বণ্টনের সাম্য নেই। বিভিন্ন শহরের ওয়াসা উদাসীন। সমস্যার সাথে চাহিদার ফারাক সব সময় থাকছে এবং বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, সাম্য বন্টন, সুচিন্তিত প্রয়োগ কিংবা ব্যবহার জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে অত্যাবশ্যকীয়। এ বোধ আমাদের জাগিয়ে রাখতে হবে ব্যবহার ও মননে। ওয়াসাকে পানি শোধন এবং সরবরাহের ক্ষেত্রেই নয় শুধু পানি ব্যবহারের নীতি বিধি বোধ ও সামাজিকতা ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে হবে আজ ও আগামীতে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা আরো সংবেদনশীল, আরো প্রয়োগিক আরো সুপরিকল্পিতভাবে পানি সরবরাহ, উৎপাদন এবং অপচয় রোধে ভূমিকা রাখবে এটা আমরা প্রত্যাশা করি। বর্ধনশীল জনসংখ্যার চাহিদাকে সামনে রেখে ওয়াসা চট্টগ্রাম মহানগরীর সরবরাহ সিস্টেম উন্নয়নসহ সকল আধুনিক কার্যক্রমকে মহানগরীর জন্য উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে কাজ করবে এটা নগরবাসীর প্রত্যাশা। সেইসাথে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের বিষয়টিকে সীমিত করে সারফেস ওয়াটার ব্যবহারের প্রক্রিয়া, পদ্ধতি প্রয়োগের ভূমিকা রাখবে এটাও জনগণ প্রত্যাশা করে। ২০৩০ সালের ভিতর এসডিজি অর্জনে ওয়াসার যে দায়িত্ব তা স্বপ্নজয়ী অদম্য বাংলাদেশ কে অতি উচ্চে নিয়ে যাবে। এ বিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিশ্বাস। এ বিশ্বাস অদম্য বাংলাদেশের অনিরুদ্ধ অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ছোঁয়া বিশ্বাস।

ড. মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, কর্ণফুলী গবেষক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট