চট্টগ্রাম বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

সীতাকুণ্ড উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা, তবু সতর্কতা নেই!
সীতাকুণ্ড উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা, তবু সতর্কতা নেই!

বিআইটিআইডির জট কমাবে তিন ল্যাব

করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ : সিভাসুর কার্যক্রম কাল থেকেই, পেল পাঁচশ কিটও

ইমাম হোসাইন রাজু

২৪ এপ্রিল, ২০২০ | ৭:৩১ অপরাহ্ণ

  •  নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব চালু করতে স্বাস্থ্য দপ্তরের চিঠি।
  •  পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতেই ল্যাবগুলো চালু করা হচ্ছে : স্বাস্থ্য পরিচালক

বৃহত্তর চট্টগ্রামের একমাত্র করোনা শনাক্তের পরীক্ষাগার ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালের ল্যাব। যেখানে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বিভাগের অন্য জেলাগুলো থেকে আসা নমুনাও পরীক্ষা করতে হয়। কিন্তু সক্ষমতার চেয়ে প্রতিদিনই দ্বিগুণ নমুনা পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করতে হচ্ছে ল্যাব সংশ্লিষ্টদের। তবুও বিভাগের প্রতিটি জেলা থেকে সংগ্রহ করা সব নমুনার পরীক্ষা করতে পারছেন না তারা। এতে করে নমুনার জট লেগে আছে ল্যাবটিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভাগের আটটি জেলা থেকে প্রতিদিন বিশেষায়িত এ হাসপাতালে গড়ে আড়ইশ’ থেকে তিনশ’ সংগ্রহকৃত নমুনা পরীক্ষার জন্য আনা হয়। অথচ এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটিতে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন বা পিসিআর মেশিন আছে মাত্র দুটি। যাতে মাত্র মাত্র ৮০ টি নমুনার পরীক্ষা করার সক্ষমতা থাকলেও কর্তৃপক্ষ গড়ে শতাধিকেরও বেশি নমুনা পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করে যাচ্ছেন। তবুও প্রতিদিন দুই’শ নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই থেকে যাচ্ছে। এতে করে জট সৃষ্টি হচ্ছে ল্যাবটিতে।

তবে সুখের খবর হল, নমুনা পরীক্ষার পরিমাণ বাড়াতে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) পরীক্ষার ল্যাব উদ্বোধন করা হয়েছে। অকাল (শনিবার) থেকেই সিভাসুর ল্যাবেও নমুনা পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করা হবে। একই সাথে চালুর অপেক্ষায় আছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নতুন স্থাপন হওয়া ল্যাবটিও। যেখানে আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি কিংবা শেষ নাগাদ পরীক্ষার কাজ শুরু করা যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুধু চট্টগ্রামে এই তিনটি পরীক্ষাগার নয়, আরও সুখবর হচ্ছে, চট্টগ্রাম ছাড়াও বৃহত্তর নোয়াখালীর করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে চালুর অপেক্ষায় আছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ল্যাবও। ইতোমধ্যে ল্যাবটি চালু করতে স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে চিঠিও ইস্যু করা হয়েছে। এছাড়া ছাড়া চলতি মাসের শুরুতে করোনার পরীক্ষা শুরু হয় কক্সবাজার জেলায়ও।

বিআইটিআইডি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালের ল্যাবে প্রায় পাঁচ শতাধিকেরও বেশি নমুনা পরীক্ষার অপেক্ষায় পড়ে আছে। যা চট্টগ্রাম ছাড়াও বিভাগের অন্য জেলাগুলো থেকে সংগ্রহ করা হয়। এতে করে ল্যাবটিতে পরীক্ষার ফলাফল পেতে তিনদিন থেকে সপ্তাহখানেক সময় লাগে রোগীদের। যার কারণে করোনার ঝুঁকি ও আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয় রোগী-স্বজনদের।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একসাথে পাঁচটি ল্যাবে করোনা শনাক্তের কাজ চালিয়ে যাওয়া হলে একদিকে যেমন বিআইটিআইডির ল্যাবে চাপ ও জট কমে আসবে, তেমনি দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যাবে। তাছাড়া নমুনা পরীক্ষার পরিমাণও প্রতিদিন বৃদ্ধি পাবে। এতে করে একদিকে যেমন করোনা আক্রান্ত রোগীরা শনাক্তের আওতায় চলে আসবে, অন্যদিকে ঝুঁকিও কমে আসবে বলে অভিমত তাদের।

স্বাস্থ্য দপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার পূর্বকোণকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষার পরিধি বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ সে কাজটি করছে। চট্টগ্রাম বিভাগেও নমুনার পরীক্ষা বাড়াতে কাজ চলছে। নমুনা পরীক্ষায় বিআইটিআইডি ছাড়াও ল্যাব আগ থেকে চালু আছে কক্সবাজারেও। শনিবার থেকে সিভাসুতে চালু করা হবে। অপেক্ষায় আছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের। যা আগামী সপ্তাহে চালুর সম্ভাবনা আছে। এসবের বাইরে নোয়াখালীতেও একটি ল্যাব চালুর নির্দেশনা আছে। ল্যাবটি চালু হয়ে গেলে নোয়াখালী অঞ্চলের নমুনা আর বিআইটিআইডিতে আসতে হবে না। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা দ্রুতসময়ে মধ্যে সম্পন্ন করার কাজ চলছে’।

শনিবার থেকে চালু সিভাসুর ল্যাব : কাল (শনিবার) থেকে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভাসু’র এ ল্যাবে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কার্যক্রম শুরু হবে। ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহের পর তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে সিভাসু’র এ ল্যাবে। ইতোমধ্যে ল্যাবটিতে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে বিআইটিআইডি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁচশটি কিট সরবরাহ করেছে সিভাসুকে।

স্বাস্থ্য দপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার এ প্রসঙ্গে পূর্বকোণকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ল্যাবটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। ল্যাবের জন্য বিআইটিআইডির কর্তৃপক্ষ থেকে পাঁচশ’ কিট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সুরক্ষার সরঞ্জামও প্রদান করা হয়েছে’।
সিভাসুর উপ-পরিচালক (জনসংযোগ ও প্রটোকল) খলিলুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘ সিভাসু’র এ ল্যাবে একটি পিসিআর মেশিনে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। প্রতিদিন দুই’শ থেকে আড়াইশ’ নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। এতে সিভাসু ছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়, ইউএসটিসি ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ-এর মাস্টার্স, ইন্টার্ন ও পিএইচডি লেভেলের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত ৪০-সদস্যের একটি দল এ ল্যাবে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ছয়জন করে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে উক্ত দলের সদস্যরা পালাক্রমে কাজ করবে বলেও জানান তিনি’।
চালুর অপেক্ষায় চমেকের ল্যাবও : দীর্ঘদিন থেকেই চালুর অপেক্ষায় থাকা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের করোনা পরীক্ষার ল্যাবটির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। স্থাপনের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে পিসিআর মেশিনের। তবে অটোক্ল্যাব বা জীবাণুমুক্তকরণ যন্ত্র এবং পর্যাপ্ত কিট পাওয়ার সাথে সাথেই এ ল্যাবটিও চালু করতে পারবে বলে জানিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ ডা. শামীম হাসান। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘ল্যাব চালু করার সকল প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। শুধুমাত্র কিট এবং জীবাণুমুক্তকরণ যন্ত্র পাওয়া গেলে যে কোন মুহূর্তে পরীক্ষার কাজ শুরু হবে। আশা করছি আগামী সপ্তাহের যে কোন দিন কিট আসলে তা চালু করা সম্ভব হবে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট