মহেশখালীতে কোস্টগার্ডের অভিযানে রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে মৎস্যজীবী আবু হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। এ সময় স্থলভাগে কোস্ট গার্ডের নাটকীয় অভিযান বন্ধের দাবিতে মহেশখালীর প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে বিএনপি, অঙ্গসংগঠন, নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেল ৫টায় কালারমারছড়া বাজারের ইউ-টার্ন পয়েন্টে এ বিক্ষোভ করেন তারা। মানববন্ধনে অসংখ্য নারী ও পুরুষ অংশ নেন।
স্থানীয় জামায়াত নেতা আবু তাহেরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের হাতে হত্যাকারীদের বিচার চেয়ে লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তারা হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকেন। মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
কালারমারছড়া বিএনপি, অঙ্গসংগঠন, নিহতের পরিবারের সদস্য ও সাধারণ জনগণের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নেন। বক্তারা দাবি করেন, কোস্ট গার্ডের অভিযানে অংশ নেওয়া সোর্স নামধারী ব্যক্তিদের কারণে নিরীহ মৎস্যজীবী আবুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, কোস্ট গার্ডের অভিযানের নামে নিরীহ জনগণকে ভয় দেখিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বিশেষ করে স্থলভাগে তাদের বিতর্কিত অভিযান নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। বক্তারা বলেন, স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রছায়ায় এইসব হত্যাকাণ্ড ও হয়রানিমূলক অভিযান চলছে। তারা অবিলম্বে এসব বন্ধের আহ্বান জানান।
নিহত আবুর স্ত্রী রাজিয়া বেগম বলেন, ঘটনার রাতে হোসাইন বহাদ্দারের সন্ত্রাসী বাহিনী কোস্টগার্ডের উপস্থিতিতে আমার স্বামীকে বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমি এর বিচার চাই।
সাবেক ছাত্রনেতা ও শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর বড় ভাই মিজানুর রহমান মাতাব্বর বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর ও সন্ত্রাসীদের গডফাদার তারেক বিন ওসমান শরীফের ইন্ধনে এবং অর্থ সহায়তায় এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। আবুর মতো নিরীহ মৎস্যজীবীকে হত্যা করে লাশের রাজনীতি করতে চায় তারা। তিনি দাবি করেন, তারেকের পরিবার ও স্বার্থান্বেষী মহল কোস্ট গার্ডের অভিযানের সুযোগ নিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করছে। তারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে।
এ সময় বক্তব্য রাখেন নিহতের বড় ছেলে সুমন, স্থানীয় যুবদল নেতা সরওয়ার আজম, বদিউল আলম, কালারমারছড়া ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হোসাইন ছিদ্দিকী, নিহতের ভাগিনা মাস্টার মনজুর প্রমুখ। তারা অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান।
বক্তারা অভিযোগ করেন, কালারমারছড়ার মোহাম্মদ শাহ ঘোনা এলাকার বাসিন্দারা এখন আতঙ্কের মধ্যে আছেন। কোস্টগার্ডের অভিযানের নামে নিরপরাধ মানুষকে গুলি, হ্যান্ডকাফ ও ভয়ভীতির শিকার হতে হচ্ছে। তারা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান, যেন নিরীহ জনগণের ওপর হয়রানি বন্ধ করা হয় এবং প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
মানববন্ধন শেষে এলাকাবাসী মহেশখালী প্রধান সড়ক অবরোধ করেন। এতে যান চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আরও বড় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বক্তারা। তাদের মতে, এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে, না হলে তারা লাগাতার আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।
পূর্বকোণ/হুবাইব/জেইউ/পারভেজ