শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু (২৭) চাচার খুনের প্রতিশোধ নিতেই গত ৯ জানুয়ারি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সি-গাল পয়েন্টে গুলি করে হত্যা করে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুকে।
এ হত্যাকাণ্ডে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয় ঋতু (২৪) নামের এক তরুণীকে।
এই ঘটনায় মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) মৌলভীবাজার থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর খুনের কারণ হিসেবে এসব তথ্য জানায় পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, খুলনার দেওয়ান মোল্লাপাড়ার মো. সেলিম আকন্দের কন্যা ঋতু (২৪), একই এলাকার জামাল শেখের পুত্র শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু (২৭) ও মধ্য কারিগর পাড়ার মো. হায়দার সরদার অদুদের পুত্র গোলাম রসুল (২৫)।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণ সহ পর্যটকদের মাঝে ভয়ভীতি তৈরি করেছে এবং কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পের উপর নেতিবাচক ভারী ছায়া ফেলেছে।
পুলিশ তদন্তে উঠে এসেছে, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রতিশোধ ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের জাল জড়িয়ে আছে। শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু নামের প্রধান সন্দেহভাজন ব্যক্তি তার চাচা হুজি শহীদুলের হত্যার প্রতিশোধ নিতে এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। হুজি শহীদুল পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির একজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন এবং ২০১৩ সালে তার হত্যাকাণ্ডে গোলাম রব্বানী টিপু জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই দীর্ঘদিন ধরে চলা শত্রুতা এবং প্রভাব বিস্তারের লোভ এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘটনাটি বাস্তবায়নের জন্য পাপ্পু এবং তার সহযোগীরা একটি চতুর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। ঋতু নামের এক তরুণী টিপুকে একটি সাক্ষাতের জন্য কক্সবাজারের সি-গাল পয়েন্টে ডেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। একান্তে থাকা অবস্থায় পাপ্পু এবং তার সহযোগীরা টিপুকে গুলি করে হত্যা করে এবং খুনের পর তারা ব্যবহৃত অস্ত্রটি ওই রিসোর্টের ২০৮ নং কক্ষের চিলেকোঠায় রেখে পালিয়ে যান। পরে অস্ত্রটি পুলিশ উদ্ধার করে।
পূলিশ বলছে- এই হত্যাকাণ্ড স্থানীয় রাজনীতির একটি অন্ধকার দিক উন্মোচন করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন যে, এই ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত প্রতিশোধের ঘটনা নয়, স্থানীয় রাজনৈতিক দলের মধ্যেকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং নির্দিষ্ট এলাকায় প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ের ফসল। একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকা এই ঘটনাকে একটি সুপরিকল্পিত অপারেশন হিসাবে চিহ্নিত করে, যার সাথে সম্ভবতঃ সুশৃঙ্খল অপরাধের সংযোগ রয়েছে।
এই ঘটনার পর পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এই ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে এবং পর্যটকদের ভ্রমণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করেন অনেকেই।
পূর্বকোণ/এরফান/এএইচ