চলতি অর্থ বছরে চন্দনাইশে কৃষকের নিকট থেকে দেড় মাসে এক কেজি ধানও কিনতে পারেনি খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ। সরকারিভাবে নির্ধারিত মূল্যে ৩৩ টাকা কেজি দরে এ উপজেলায় সাধারণ কৃষকের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের কথা থাকলেও অদ্যাবধি এক কেজি ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
কর্তৃপক্ষ বলেছেন, ভৌগোলিক অবস্থানে এলাকাভিত্তিক এ অঞ্চলে কৃষকের ফসল ঘরে তুলতে দেরি হওয়া ও বাজারমূল্যের সঙ্গে সরকারি মূল্য সামঞ্জস্য না থাকায় কৃষকদের খাদ্যগুদামে ধান দিতে অনীহা দেখা দিয়েছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্র ও সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলায় চলতি বছরে সরকার নির্ধারিত ৩৩ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৫০ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সংগ্রহের নির্ধারিত তারিখ ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমন ধান সংগ্রহ চলমান থাকবে।
প্রতি কৃষক সর্বনিম্ন ১২০ কেজি থেকে সর্ব্বোচ ৩ টন পর্যন্ত ধান দিতে পারবেন। যদিও চলতি বছর সরকার নির্ধারিত খাদ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতি কেজি ধান ক্রয়ে বাজারদর গত বছরের চেয়ে এক টাকা বৃদ্ধি করলেও আগ্রহ বাড়েনি কৃষকের। ৩৩ টাকা কেজিতে ১ আড়ি ধানের দাম ৩৩০ টাকা। কিন্তু বাজারে প্রতি আড়ি ধান ৪শ টাকায় বিক্রি হওয়ার কারণে কৃষকেরা সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী নয়। ধান ক্রয়ের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এক কেজি ধান সংগ্রহ করতে পারেনি।
২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ কৃষকরা সরকার নির্ধারিত এ মূল্যে ধান দিতে আগ্রহ হারাচ্ছে দিন দিন। সরকারি মূল্য ১ হাজার ৩২০ টাকা দরে প্রতি মণ ধান ক্রয় করছে খাদ্যগুদাম। সেখানে রয়েছে পরিপূর্ণ শুকনো ধানের আর্দ্রতা মহেশ্চার হতে হবে ১৩, এ ক্ষেত্রে পরিমাপে মিল না থাকলে পুনরায় ক্যারিং ব্যয় করে ধান নিয়ে বাড়িতে ফিরে যেতে হয় সাধারণ কৃষকদের। বিভিন্ন প্রকারের হয়রানির শিকারও হতে হয় তাদের। অথচ কৃষকদের মাঠ থেকে বেপারিরা সদ্য কাটা ধান কিনছে প্রতি মণ ১৬শ টাকায়।
হাশিমপুর গ্রামের তালিকাভূক্ত কৃষক আহমদ হোসেন বলেছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে বাজার দরের চেয়ে কমপক্ষে ৩/৪শ টাকার ব্যবধান থাকাতে অনেক কৃষকরা খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহ হারাচ্ছে। এদিকে ধান চাল সংগ্রহ উপজেলা নামে মাত্র কমিটি থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ে সংগ্রহে নেই কোনো প্রচার। অনেকেই জানে না ধান দেয়ার নির্ধারিত সময়।
উপজেলা খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেছেন, বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সরকারি মূল্যের পার্থক্য থাকায় ধান ক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কৃষকের নিকট থেকে আমন সংগ্রহের সর্ব্বোচ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত কোন ধান সংগ্রহ হয়নি বলে তিনি জানান।
খাদ্যগুদামে ক্রয়ের ক্ষেত্রে আর্দ্রতা, চিটামুক্ত, পরিষ্কার এ ধরনের অনেক নিয়ম নীতি থাকায় অনেক কৃষকই ধান দিতে আগ্রহ প্রকাশ করছে না। উল্লেখ্য যে, ১ একর ৪৮ শতক জমির উপর বিটিশ শাসনামলে চন্দনাইশ দোহাজারীতে ৫শ মেট্টিক টন ধারণ ক্ষমতা বিশিষ্ট ৩টি গুদাম নির্মাণ করা হয়। সে সময় দক্ষিণ চট্টগ্রামের বান্দবান পর্যন্ত ১০টি থানার জন্য এ গুদামটি ব্যবহার করা হতো। এ সকল গুদামে সর্বোচ্চ ১৮শ মেট্রিক টন পর্যন্ত খাদ্য রাখার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানা যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজাদ হোসেন বলেছেন, ইউনিয়ন ওয়ারি দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করে সরকারিভাবে ধান বিক্রি করতে উৎসাহিত করে যাচ্ছে। যাতে করে কৃষকেরা সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করে।
ইউএনও ও ধান সংগ্রহ মনিটরিং কমিটির সভাপতি মো. রাজিব হোসেন বলেছেন, সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করার জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
পূর্বকোণ/ইব