কক্সবাজার শহরে সমুদ্রের গর্জনের সঙ্গে জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটায় ‘ইস্টিশন’ বইয়ের ঘর। এই বইয়ের ঘরেই আজ সাদামাটাভাবে এক অসাধারণ বিয়ের আয়োজন হয়ে গেল। অনুরণন সিফাত ও মোজাহিদুল ইসলাম রাকিব নামক দুই যুবক-যুবতী রীতিনীতি মেনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।
কিন্তু তাদের বিয়ের দেনমোহর ছিল অন্যরকম। ১ লাখ টাকা দিয়ে তারা কিনবেন বই। সেগুলো বিভিন্ন স্কুলে লাইব্রেরি গড়ে তুলবেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী অনুরণন সিফাত এবং প্রকৌশলী মোজাহিদুল ইসলাম রাকিব এই অনন্য উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
২৯ জুন দুপুরে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট-সংলগ্ন ইস্টিশনে কাবিননামা সম্পাদন শেষে রিকশায় করে মোটেলে গিয়ে স্বল্প পরিসরে হয় প্রীতিভোজ। সন্ধ্যায় ফিরে ইস্টিশন বই-ঘরে মুক্ত আড্ডার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতার পরিসমাপ্তি ঘটে।
কেন এই অনন্য সিদ্ধান্ত?
অনুরণন বলেন, প্রথাগতভাবে আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা ভেবে দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়। আমার আপত্তি ছিল বিশেষত সোনাদানা বা অর্থের বিনিময়। বন্ধনটা তো আসলে হৃদয়ের, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার। সেখানে ধরাবাঁধা নিয়ম থাকা উচিত নয়।
তিনি আরও বলেন, আর্থিক চাওয়া তো আমার ছিল না। ঠিক করলাম সেই টাকা দিয়ে স্কুলে বই কিনে দেব, যেন লাইব্রেরি গঠন করা যায়।
স্বামী মোজাহিদুল বলেন, দেনমোহর তো একজন নারীর সামাজিক মর্যাদা বা সুরক্ষার জন্য বিবেচ্য। এক্ষেত্রে আমার সঙ্গী আত্মনির্ভরশীল, কর্মঠ, সর্বোপরি ভালো মনের মানুষ। কারও কাছ থেকে তার আর্থিক নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
নবদম্পতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক:
মোজাহিদুল বলেন, ভবিষ্যতের যাত্রা মানেই অনিশ্চিত। জীবনের যাত্রা শেষ হয় শূন্যে গিয়ে। এই শূন্যে মিলিয়ে যাওয়ার আগে মানুষ এই যাত্রাটাকে অর্থবহ করতে চায়। টুকটাক লিখছি, একটি ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। ভালো কিছু করে যেতে চাই। সেটা লেখালেখিও হতে পারে।
অনুরণন বলেন, সবসময় সুন্দরের সাথে থাকতে চেয়েছি, শুদ্ধতার চর্চা করতে চেয়েছি। পরিবর্তনের পথে লড়াইয়ের সঙ্গী পাওয়াটা মুশকিল। আমি পেয়েছি। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি না। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে চাই। সুন্দর আর ভালোবাসায় যৌথ খামার হোক, চাষাবাদ হোক স্বপ্নদের। আমার ইস্টিশনও এ বছর প্রকাশনা জগতে পা দিয়েছে। এটাকে আরও ঋদ্ধ করতে চাই। কেউ স্কুলে লাইব্রেরি করে দিতে আগ্রহী হলে ইস্টিশন সানন্দে সহযোগিতা করবে।
এই উদ্যোগের সুফল কারা পাবে?
অনুরণন ও মোজাহিদুল জানান, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের দশটি সুবিধাবঞ্চিত স্কুলে তারা একশটি করে বই দিয়ে লাইব্রেরি গড়ে দেবেন। সব বই ইতিমধ্যেই ইস্টিশনে পৌঁছে গেছে।
নির্বাচিত স্কুলগুলোর মধ্যে রয়েছে বান্দরবানের লামা ও আলিকদমের তিনটি পাহাড়ি স্কুল, রংপুরের একটি ও রাজশাহীর একটি স্কুল। এছাড়াও ঢাকার পথশিশুদের একটি স্কুলসহ আরও কিছু স্কুল বাছাইয়ের কাজ চলছে।
এই অভিনব উদ্যোগ সারা দেশের মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলেছে বলে জানা যায়। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের প্রশংসা করছেন। এমনকি, কিছু প্রতিষ্ঠান ইস্টিশনের এই কার্যক্রমে সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
অনুরণন ও মোজাহিদুলের এই বিশেষ বিয়ের খবর স্থানীয় গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। তারা আশা করছেন, তাদের এই উদ্যোগ আরও বেশি মানুষকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে সাহায্য করবে।
পূর্বকোণ/এরফান/জেইউ/পারভেজ