চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস নজরুল-জব্বারে

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক)

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ১২:১৫ অপরাহ্ণ

অদ্ভুত সুন্দর পাহাড়ি নদী সাঙ্গুর তীরেই ‘সবজির ভা-ার’ দোহাজারী বাজার। পুরো এলাকায় এখন শোভা পাচ্ছে নির্বাচনী ব্যানার-পোস্টার।

 

কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই চোখ আটকালো উপরে মাইক বাঁধা একটি অটোরিকশায়। যার ভেতরে বসা ছিলেন টগবগে এক যুবক। মাইক্রোফোন হাতে ‘৭ তারিখ সারাদিন, নৌকায় ভোট দিন’সহ নানা নির্বাচনী স্লোগান দিচ্ছিলেন তিনি।

 

অল্প সময়ের মধ্যেই অটোরিকশাটি ঘিরে তৈরি হয় জটলা। শুরু হয় নির্বাচনী আলাপ। এ সময় নিজেকে আওয়ামী লীগ কর্মী পরিচয় দেওয়া সৈয়দ হোসেন জানান, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও চন্দনাইশে নির্বাচনী উৎসব বিরাজ করছে। নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলামকে জয়ী করতে আমরা দিন-রাত কাজ করছি। তবে কাজটি চ্যালেঞ্জিং করে দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল জব্বার।

 

সৈয়দ হোসেনের সঙ্গে সুর মেলালেন বাজারের ব্যবসায়ী শহীদুর রহমানও। তার ভাষ্য, এবার চট্টগ্রাম-১৪ আসন থেকে আট প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াই হবে নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং আব্দুল জব্বারের মধ্যে। এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীকে ঘিরেই সরগরম চন্দনাইশের নির্বাচনী মাঠ। তবে শেষ হাসি কে হাসবেন তা দেখতে ৭ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

 

দোহাজারী বাজার থেকে চন্দনাইশ সদরের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। উপজেলা পরিষদ, থানা থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব সরকারি অফিসের অবস্থান এখানেই। পুরো এলাকায় নজরুল ইসলাম ও আব্দুল জব্বারের প্রচার-প্রচারণাই বেশি। এছাড়া দেওয়ানহাট, বাগিছাহাট, খানহাট, গাছবাড়িয়া, বাতামতল, কাঞ্চনাবাদ, রৌশনহাট এলাকায়ও দেখা গেলো একই দৃশ্য।

 

সদর এলাকায় কথা হয় অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ জাকারিয়ার সঙ্গে। বৈলতলী ইউনিয়নের এ বাসিন্দা জানান, এলাকায় নজরুল ইসলামের ক্লিন ইমেজ রয়েছে। মানুষ তাকে পছন্দ করেন। গত দুইবারের মতো এবারও তিনিই জিতবেন।

 

তবে ব্যবসায়ী আব্দুস সোবহান মনে করেন, চন্দনাইশের উন্নয়নে জব্বারই বেশি ভূমিকা রাখতে পারবেন। সুষ্ঠু ভোট হলে তার জয় নিশ্চিত।

 

দোহাজারীতে একটি সবজি হিমাগার, সাঙ্গুর ভাঙনরোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণ খুব জরুরি বলে মনে করেন ধোপাছড়ির জসিম উদ্দিন। চট্টগ্রামের সবজি ভা-ার হিসেবে পরিচিত দোহাজারীর সবজি সহজে শহরে নিতে ট্রেনে লাগেজ ভ্যান চালু সময়ের দাবি মন্তব্য করে তিনি বলেন, আশা করি আমাদের চন্দনাইশের নতুন সংসদ সদস্য এসব বিষয়ে ভূমিকা রাখবেন।

 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি টানা দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। যা উন্নয়ন করেছি বিগত ৫০ বছরেও এরকম উন্নয়ন চন্দনাইশে হয়নি। আমি কোন অন্যায় বা দুর্নীতি করিনি। এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আশা করি মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে ৫ম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ দেবেন।

 

অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল জব্বার বলেন, ১৪ বছর ৫ মাস উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম। কোথায় গেলে উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করা যায় তা আমি জানি। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে চন্দনাইশের উন্নয়নে সবধরনের প্রচেষ্টা চালাবো। আশা করি ৭ তারিখ মানুষ ট্রাক মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকেই সংসদে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেবেন।

 

চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি চন্দনাইশ, দোহাজারী পৌরসভা; চন্দনাইশের কাঞ্চনাবাদ, জোয়ারা, বরকল, বরমা, বৈলতলী, সাতবাড়িয়া, হাশিমপুর ও ধোপাছড়ি এবং সাতকানিয়ার কেউচিয়া, কালিয়াইশ, বাজালিয়া, ধর্মপুর, পূরানগড় ও খাগরিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এবার এসব এলাকার ২ লাখ ৮৮ হাজার ২৯৩ জন ভোটার ভোট দিয়ে আগামী ৫ বছরের জন্য তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।

 

এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নজরুল ও জব্বার ছাড়াও জাতীয় পার্টির আবু জাফর মোহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহাম্মদ আবুল হোছাইন, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের মোহাম্মদ আলী ফারুকী, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মোহাম্মদ আয়ুব, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের মো. গোলাম ইসহাক খান এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট