বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১০০তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিএন্ডসি) বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান প্রধান অতিথি হিসেবে নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ১০টায় বিজিবি মহাপরিচালককে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ বাহিনী সাফল্যের পথ পরিক্রমায় আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার দেশপ্রেমিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি সীমান্তে চোরাচালান ও মাদক পাচাররোধ, নারী ও শিশু পাচারসহ যেকোনো আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। স্বাধীনতার পর দেশ গঠন এবং দেশ মাতৃকার সেবায় এ বাহিনীর সদস্যরা গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে যেকোনো দুর্যোগময় মুহুর্তে জনগণের সেবায় তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং বেসসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ভূমিকা সর্বজনবিদিত। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে বিশ্বস্ততা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বিজিবি আজ সবার আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতা ও দূরদর্শী দিকনির্দেশনায় বিজিবি আজ একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও অত্যাধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিজিবিতে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার, এপিসি, এটিভি, আরসিভি, এয়ার বোট, অত্যাধুনিক এন্টি ট্যাংক অস্ত্র, জলযানসহ আধুনিক সরঞ্জামাদি। ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিজিবি’র রিক্রুটিং ব্যবস্থাকে ই-রিক্রুটিং এ রূপান্তর করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিওপিগুলোকে যোগাযোগের আওতায় আনা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ৭৩টি আধুনিক কম্পোজিট বিওপি।
নারায়ণগঞ্জ ব্যাটালিয়নের মত আরো নতুন নতুন ব্যাটালিয়ন নির্মাণের প্রকল্প চলমান রয়েছে। ক্যাপাসিটি ম্যাক্স এবং রিপিটারের মাধ্যমে সারাদেশে বিজিবি’র যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। অভিযানিক দায়িত্ব পালনে বিজিবি সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ নতুন নতুন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরইমধ্যে কুমিল্লায় বর্ডার গার্ড স্কুল অব ইন্টেলিজেন্স এবং খুলনায় বর্ডার গার্ড টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ক্রমবর্ধমান বিজিবি বাহিনীর প্রশিক্ষণ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্বলিত ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বিজিবি মহাপরিচালক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ১০০তম রিক্রুট ব্যাচের সর্ববিষয়ে সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে ১ম স্থান অধিকারী ইমরান হোসেন সুয়েব, সর্ববিষয়ে ২য় ও শারিরীক উৎকর্ষতা (মহিলা) বিষয়ে ১ম স্থান অধিকারী সিপাহী খাদিজা খাতুন, ফায়ারিং-এ শ্রেষ্ঠ রিক্রুট সিপাহী মো. উজ্জল হোসেন এবং শারিরীক উৎকর্ষতা (পুরুষ) বিষয়ে ১ম স্থান অধিকারী সিপাহী জনি হোসেনের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। বিজিবির প্রশিক্ষিত সদস্যদের অংশগ্রহণে আকর্ষণীয় ট্রিক ড্রিল এবং বিজিবির সুসজ্জিত বাদকদল কর্তৃক মনোজ্ঞ ব্যান্ড ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়।
উল্লেখ্য, বিজিবির ১০০তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ১৮ জুন বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে (বিজিটিসিএন্ডসি) শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে মোট ৫৮২ জন রিক্রুটের মধ্যে ৫৪৪ জন পুরুষ এবং ৩৮ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে।
পূর্বকোণ/খোকন/জেইউ/পারভেজ