চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

টেকনাফে ১৮০ রোহিঙ্গা নেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল

টেকনাফ সংবাদদাতা

৩১ অক্টোবর, ২০২৩ | ৯:০৪ অপরাহ্ণ

মিয়ানমার প্রতিনিধি দল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ১৮০ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় ফিরে গেছে। একটি দল নদী নিবাস রেস্টহাউসে, অপর দলটি রোহিঙ্গাদের সাথে গণপূর্ত বিভাগের রেস্টহাউসে আলোচনা করেন। মূলত. প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের সম্মতি আছে কি না এবং রোহিঙ্গাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

 

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকালে নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফে পৌঁছান নারীসহ ৩২ সদস্যের মিয়ানমার প্রতিনিধিদল। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নাফ নদী অতিক্রম করে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি কাঠের ট্রলারে করে টেকনাফ পৌরসভার বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটিতে এসে পৌঁছায়।

 

সেখানে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মুহাম্মদ সামছুদ্দৌজা। এরপর জেটিঘাট থেকে আরআরআরসি কার্যালয়ের গাড়িতে করে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলকে নেওয়া হয় টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া নাফ নদীর তীরের সড়ক ও জনপদ বিভাগের নদী নিবাস বাংলোতে। সকাল ১০টার দিকে সেখানে উপস্থিত রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

 

মুহাম্মদ সামছু দ্দৌজা বলেন, প্রতিনিধি দলটি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে ১৮০ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে আলোচনা করেছে। একটি দল নদী নিবাস রেস্টহাউসে, অপর দলটি গণপূর্ত বিভাগের রেস্টহাউসে আলোচনা করেন। মূলত প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের সম্মতি আছে কি না এবং রোহিঙ্গাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিকেলে নাফ নদী অতিক্রম করে প্রতিনিধি দলটির মিয়ানমারে ফিরে গেছেন।

 

এর আগে রোহিঙ্গাদের মতামত যাচাই করতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল টেকনাফে এসেছিলে দুবার। প্রথমবার গত ১৫ মার্চ টেকনাফ এসে শতাধিক রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন মিয়ানমারের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল। দ্বিতীয় দফায় গত ২৫ মে টেকনাফে এসে রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ১৪ সদস্যের আরেকটি প্রতিনিধিদল। ওই বৈঠকগুলোতেও রোহিঙ্গারা একই মতামত তুলে ধরেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি দেখাতে গত ৫ মে ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলকে রাখাইন রাজ্যে নেওয়া হয়। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। কিন্তু গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

 

দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান আশা করছেন জানিয়ে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, পাইলট প্রকল্পের আওতায় আগামী ডিসেম্বরের আগে যেকোনো মুহূর্তে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে। এ জন্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও টেকনাফে পৃথক পাঁচটি ট্রানজিট কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। জল ও স্থলপথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে। চীনের মধ্যস্থতায় পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রথম দফায় ১ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরত পাঠানোর প্রস্ততি চলছে। উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয়শিবির থেকে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের প্রথমে ট্রানজিট কেন্দ্রে আনা হবে। তারপর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হবে।

 

সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের কয়েকজন বলেন, প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা পরিষ্কার বলেছি রাখাইন রাজ্যে স্বাধীনভাবে বসবাসের নিরাপত্তা ও সুযোগ দেওয়া হলে ফিরে যেতে রাজি হব। কিন্তু রাখাইন রাজ্যের কোনো আশ্রয়শিবিরে থাকার ব্যবস্থা করলে রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি হবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

 

পূর্বকোণ/কাশেম/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট