চট্টগ্রাম শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রার্থিতা লড়াইয়ে বিভক্ত আওয়ামী লীগ-বিএনপি

নিজস্ব সংবাদদাতা, সন্দ্বীপ

১৩ অক্টোবর, ২০২৩ | ১:৩৮ অপরাহ্ণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তৎপর হয়ে উঠেছে সন্দ্বীপের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তফসিল ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসতেই বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও পোস্টার ব্যানারের মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থিতার জানান দিতে ব্যস্ত তারা। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন প্রায় অর্ধডজন নেতা। এদের মধ্যে প্রকাশ্যে মাঠে আছেন দুই জন। অন্যরাও চলছেন বিভিন্ন কৌশল করে। তবে দীর্ঘ দিন প্রকাশ্যে চলছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আওয়ামী লীগের প্রধান শক্তিশালী বিরোধী দল বিএনপির ভালো অবস্থান আছে উপজেলায়। দলের প্রকাশ্য কোন কর্মসূচি উপজেলায় পালিত না হলেও কৌশলে মাঠ গোছানোতে ব্যস্ত নেতারা। তাদের মধ্যেও কোন্দল রয়েছে। নির্বাচনের মাঠে বিএনপির তিনটি গ্রুপকে শক্তিশালী অবস্থানে দেখা যাচ্ছে। দলের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের চট্টগ্রাম শহরে ডেকে নিয়ে কর্মসূচি পালন করেন তারা। এমনকি কাউন্সিলরদের চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে করা হয়েছে ইউনিয়ন কমিটি। এবারের নির্বাচনে মহাজোট থেকে জাসদের প্রার্থীর মনোনয়ন সম্ভাবনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে ছয় প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। বর্তমান সাংসদ ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা দল থেকে দুবার মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার পিতা সাবেক সাংসদ মুস্তাফিজুর রহমান সন্দ্বীপের দু’বার সাংসদ ছিলেন। পিতার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে মাঠে নেমে প্রথম ২০০৯ সালে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে নৌকার প্রার্থীকে পিছনে ফেলে তিনি দ্বিতীয় হন। পরে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি দলের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার হাত ধরে সন্দ্বীপের অনেক উন্নয়ন কর্মকা- হয়েছে। এবারও নির্বাচনে তিনি দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন। বর্তমানে তার সাথে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে কমিটি থেকে পদবঞ্চিত এবং কঠিন সময়ে দলের পদ পদবীতে ছিলেন এমন তৃণমূলের আওয়ামী পরিবারের বড় অংশ তার বিপক্ষে রয়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় সভা সমাবেশের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী দৌড়ে বর্তমান সাংসদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন উত্তর জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও মাইটভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। তিনি আটঘাট বেধে মাঠে নেমেছেন। বিভিন্ন এলাকায় তিনিও প্রচার প্রচারণা করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে নারী ও  বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করেছেন। এছাড়াও দলের উন্নয়ন প্রচারের জন্য মিডিয়া সেল চালু করেছেন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলন, ঢাকায় যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, পলোগ্রাউন্ড মাঠে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় সন্দ্বীপ থেকে বিশাল শোডাউন নিয়ে গিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের নজর কাড়েন। মিজানুর রহমান বলেন, দলের জন্য ছাত্রজীবন থেকে কাজ করে যাচ্ছি। আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে অবস্থান নিতে গিয়ে বিরোধীদলের গুলি খেয়েছি, বোমার স্প্রিন্টার এখনো শরীরে আছে। দেশের উন্নয়ন হলেও দলের তৃণমূল আজ নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত। আমি দল থেকে মনোনয়ন চাইবো। আমি আশাবাদী নেত্রী এবার তৃণমূলের মানুষ হিসেবে আমাকে মূল্যায়ন করবেন। দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন এ বি কলেজের সাবেক ভিপি জাফর উল্লা টিটু। তিনি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এবং সন্দ্বীপ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বে ছিলেন। মনোনয়ন চাইবেন জানিয়ে তিনি বলেন, দলের দুঃসময়ে আমরা মাঠে থেকে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছি। মনোনয়ন অবশ্যই চাইবো। আশাকরি দল আমাকে মূল্যায়ন করবেন। দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী। তবে চিকিৎসকদের এই প্রতিনিধির জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যস্ততার কারণে সন্দ্বীপে তেমন একটা উপস্থিত থাকেন না। প্রতিবছর বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আসেন আমেরিকা প্রবাসী আবদুল কাদের মিয়া। তিনি নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ সম্পাদক। প্রতিবছর বিভিন্ন সময় তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুদান প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকেন। গত বছর তার ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। সম্প্রতি মুছাপুর ইউনিয়নে তার একটি সভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হামলা করে। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামও দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন। তবে তফসিল ঘোষণার আগ মূহুর্তে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক আবুল কাশেম হায়দারকে বিভিন্ন রাস্তাঘাটে পোস্টার সাঁটাতে দেখা যায়।

বিএনপির মধ্যে মূলত তিনটি গ্রুপ রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতাকর্মী। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে দল থেকে সাবেক সাংসদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা মনোনয়ন চাইবেন। বয়সের কারণে শারীরিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ হলেও তৃণমূল বিএনপিতে তিনি এখনো ভালো অবস্থানে রয়েছেন। মনোনয়নের দৌড়ে সামনের সারিতে আছেন  ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন। তিনি  জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনসমূহের একটা পক্ষ তার সাথে রয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফী উদ্দিন ফয়সাল দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট আবু তাহের দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। তার কমিটির সদস্য সচিব আলোমগীর হোসেন ঠাকুর এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুব দলের এক নম্বর সহ-সভাপতি ফোরকান উদ্দিন রিজভী দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন। তারা  যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি ছিলেন।  তারা মাঠ পর্যায় থেকে রাজনীতি করে উঠে এসেছেন। রিজভী বলেন, সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। তখন আমি মনোনয়ন চাইবো। দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে তবে আমাকে মূল্যায়ন করবেন। একই শর্তে নির্বাচনে আসার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়ে ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, দল ২০১৮ সালে দলের প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকায় আমাকেসহ তিনজনকে রেখেছিল। দল নির্বাচন করলে আশাকরি আমাকে মূল্যায়ন করবেন। তবে দলের কোন্দলের বিষয়ে তিনি বলেন, কমিটি গঠন নিয়ে তৃণমূলে কিছুটা মনে ব্যথা থাকলেও আন্দোলনের মাঠে বিএনপি এক ও অভিন্ন। এছাড়াও উপজেলা বিএনপি সদস্য প্রবাসী মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল মনোনয়ন চাইবেন। প্রবাসে থাকলেও বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি অংশ তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

সন্দ্বীপের মনোনয়ন নিয়ে আশাবাদী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও শিল্পপতি নুরুল আকতার। আওয়ামী লীগের সাথে শরিক দলের আসন ভাগাভাগিতে তার কপাল খুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও জাসাসের একক প্রার্থী হিসেবেও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়াও জাতীয় পার্টি থেকে মোহাম্মদ সালাম  ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মুকতাদের আজাদ খান তাদের দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট