কক্সবাজারের চকরিয়াস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠার পর ২৫ বছরেও উদ্ধার হয়নি পার্কের ১২ একর জমি। বেদখল জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক অবৈধ বসতি। পার্ক কর্তৃপক্ষ একাধিকবার চেষ্টা করেও ওই জমি দখলে নিতে পারেনি, পারেনি অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করতে। পার্কের জমিতে অবৈধ বসতি থাকার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম। তিনি জানান, বন মন্ত্রণালয় অধীন বনভূমি থেকে ছোটবড় বৃক্ষরাজিতে ভরপুর ৯০০ হেক্টর জমি পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্তপূর্বক ১৯৯৮ সালে সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই জমির ৬০০ হেক্টরের মধ্যে মূল সাফারি পার্ক হলেও সেই জমি থেকে শুরু থেকেই স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে ছিল ১২ একর জমি। অপর ৩০০ হেক্টর জমি বাউন্ডারির বাইরে রয়েছে। ওই জমিতে বন্যপ্রাণী বিচরণ করে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মূল সাফারি পার্কের ডান পাশে ১২ একর জমিতে তৈরি করা হয়েছে কাঁচাপাকা শতাধিক বসতঘর। ঘর করে বাস করা আলী আহমদ বলেন, ‘সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠার আগেথেকেই আমরা এই জমিতে বসবাস করে আসছি। বাসের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা থাকলে আমরা এখানে থাকতাম না।’ একই বক্তব্য অন্য দখলদারদেরও।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আগে পার্কের ঠিক সামনেই অবৈধ দখলদারদের বসতি ছিল। আমি পার্কে যোগদানের অনেক আগেই তাদের সামনে থেকে সরিয়ে দিলে তারা পার্কের অন্য পাশে গিয়ে পার্কেরই ১২ একর জমি দখল করে বসতি তৈরি করে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে চট্টগ্রামের সাবেক বিভাগীয় কর্মকর্তা বসতি উচ্ছেদ করতে লিখিতভাবে সহায়তা চান কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের। সেই আবেদন এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ওই আবেদনে ৬৯ জন দখলদারের নাম উল্লেখপূর্বক উচ্ছেদের সহায়তা চাওয়া হয়েছিল।’
অপরদিকে সাফারি পার্কের জন্য নেয়া ৯০০ হেক্টরের মধ্যে বাউন্ডারির বাইরে থাকা ৩০০ হেক্টর পাহাড়ি ভূমি বণ্যপ্রাণী বিচরণের জন্য বলা হলেও সেই জমি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পার্ক কর্তৃপক্ষকে। ভূমি দস্যুদের নজর পড়েছে বিশাল ওই ভূমির দিকে। ফলে গাছ ও পাহাড় রক্ষা করতে গিয়ে একাধিকবার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে পার্ক কর্তৃপক্ষ ও দখলদারদের মধ্যে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ৩০০ হেক্টর ভূমি পার্কের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। স্বল্প সংখ্যক গাছ চুরি হয়েছে মাত্র।’
দখলদারদের উচ্ছেদের বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, ‘দখল নিয়ে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ আমাকে অবহিত করেনি। উচ্ছেদ নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন আদেশও পাইনি। আদেশ পাওয়া মাত্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
উল্লেখ্য, বনবিভাগ থেকে ১৯৯৮ সালে ৯০০ হেক্টর ভূমি নিয়ে ১৯৯৯ সালে চকরিয়ার ডুলাহাজারায় প্রতিষ্ঠা করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক।
পূর্বকোণ/পিআর